ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসমাজ–এর উদ্যোগে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা ও আবদুল কাদের।
শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে খসড়া প্রস্তাব উপস্থাপন করেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন, জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ খোরশেদ আলম এবং থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহমান মৈশান।
মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কতগুলো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্যমান লেজুড়বৃত্তিক শিক্ষক ও পেশিশক্তিনির্ভর ছাত্ররাজনীতি এবং সাম্প্রদায়িক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা; বিতর্ক, সমালোচনা, প্রশ্ন যদি যৌক্তিক কারণে সরকার, রাষ্ট্র বা কোনো প্রতিষ্ঠিত ভাবাদর্শকে সমালোচনা করে, তবে সেই গঠনমূলক জ্ঞানচর্চাকে রাষ্ট্রের সুরক্ষা দেওয়া; শিক্ষক–শিক্ষার্থী নিপীড়ন ও হয়রানি বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নিপীড়ন–বৈষম্যবিরোধী সেল’ গঠন; আচরণবিধিমালা প্রণয়ন; বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক–শিক্ষার্থীর বিশ্ব স্বীকৃতি মানসম্মত অনুপাত ১: ২০ হলেও বিদ্যমান বাস্তবতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তা ১: ৪০–এর বেশি না হওয়ার ব্যবস্থা করা; ‘টিচিং ইউনিভার্সিটির (শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়) পরিবর্তে টিচিং অ্যান্ড রিসার্চ (শিক্ষা ও গবেষণা)’, এই মিশ্র বৈশিষ্ট্যের বিশ্ববিদ্যালয় করা; মেধা ও আর্থসামাজিক প্রয়োজন বিবেচনা করে প্রথম বর্ষ থেকেই আবাসিক হলে আসন বরাদ্দ; পিএইচডি প্রোগ্রামে পরিবর্তন আনা; শিক্ষকদের পদোন্নতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ব্যবস্থা যুক্ত করা এবং ঢাকার বড় সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে ছেড়ে দেওয়া।
শিক্ষকদের প্রস্তাবের মধ্যে আরও রয়েছে একজন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটির বেশি পদে (সিন্ডিকেট, সিনেট, ডিন, প্রভোস্ট ইত্যাদি) থাকতে পারবেন না, শিক্ষক সমিতির পদে থাকা কোনো শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় বা রাষ্ট্রের কোনো প্রশাসনিক পদ গ্রহণ করতে পারবেন না, নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা ও শিক্ষকদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী শিক্ষকদের একজন আবদুল্লাহ–আল মামুন বলেন, শিক্ষা খাতে বাজেট না বাড়ালে বৈষম্য দূর হবে না।
মূল প্রবন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করতে উপাচার্যের কর্মপরিধি কমিয়ে তা অন্যদের মধ্যে বণ্টন করা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতার চর্চা ও দীর্ঘসূত্রতা থেকে মুক্ত করা; ছুটি, সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট ইত্যাদি কাজ সহজ ও স্বচ্ছ করার প্রস্তাব করা হয়।
মূল প্রবন্ধে তুলে ধরা প্রস্তাবগুলোর কিছু মতামত অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সর্বজনতার বিশ্ববিদ্যালয় করতে চাই।
উপাচার্য চলতি মাসের শেষের দিকে বা তার একটু আগে সিন্ডিকেটের অনুমোদনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে চান বলেও জানান।
সভার সঞ্চালক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, চিন্তাকে চিন্তা দিয়ে, বইকে বই দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে। বইকে বুলেট নয়, চিন্তাকে চাপাতি দিয়ে মোকাবিলা করা যাবে না।
বিশাল জায়গাজুড়ে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাংলো ভেঙে দেওয়া বা জাদুঘর করার দাবি জানান অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।
মতবিনিময় সভায় অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী উমামা ফাতেমা। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবান্ধব একটি একাডেমিক বিশ্ববিদ্যালয় রূপে পরিণত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসমাজ কাজ করছে। এ উদ্যোগে আরও বেশি ছাত্র–শিক্ষককে যুক্ত করা জরুরি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আবদুল কাদের বলেন, রাজনীতি করা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু হলগুলোতে সেই দখলদারত্বের রাজনীতি থাকবে না। লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি ক্যাম্পাসে থাকবে না।
এসএ/দীপ্ত সংবাদ