কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়ে নিহতদের স্মরণে এবং আহত, পঙ্গু ও গ্রেপ্তার হওয়া সকলের জন্য দেশব্যাপী ‘দোয়া, কবর জিয়ারত ও ছাত্র–জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
শুক্রবার (২ আগস্ট) সারা দেশে জুমার নামাজ শেষে দোয়া, কবর জিয়ারত এবং মন্দির–গির্জাসহ সব প্রার্থনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন শেষে ছাত্র–জনতার গণমিছিল করা হবে।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল কাদেরের স্বাক্ষর করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমাদের প্রাণের জন্মভূমি আজ এক মহাসংকটকাল অতিক্রম করছে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে শান্তিপ্রিয় ছাত্র–জনতার রক্তে রাজপথকে রঞ্জিত করেছে। কারও পরিচয় শিক্ষার্থী হলে তার ফোন চেক করে অত্যাচার–নির্যাতন চালানোর মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে।
‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড অথচ আজ ছাত্র হওয়া যেন অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক সমাজও রক্ষা পাচ্ছে না তাদের নির্যাতনের হাত থেকে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল–কলেজের শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করতেও ছাড়ছে না। শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সমর্থনকারী ছাত্র–জনতা কাউকে পেলেই গ্রেফতার ও এর মাধ্যমে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। পরবর্তীতে বাছাই করে পাড়া–মহল্লায় রেইড দিয়ে গণগ্রেপ্তারের নামে গ্রেপ্তার বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে তারা। গুম করার হুমকি দিয়ে আদায় করছে মোটা অংকের অর্থ।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় জন সমন্বয়কসহ অসংখ্য ছাত্র–জনতাকে গত বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) কেন্দ্রীয় ৬ সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে ছেড়ে দিলেও এখনও ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আক্তার হোসেন, সমন্বয়ক আরিফ সোহেলসহ অসংখ্য ছাত্র–জনতাকে কারাগারে পাঠিয়ে ও রিমান্ডে নির্যাতন করছে। জুলুম–নির্যাতনে নিষ্পেষিত ছাত্র–জনতা মুক্তির প্রহর গুনছে। অসংখ্য ছাত্র–জনতা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নিয়ে। অনেক ছাত্র ও সাধারণ মানুষ চোখ, কান, হাত, পা কিংবা শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আজ ছাত্রসমাজ ঘরে শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। প্রতি মুহূর্তে কাটাতে হচ্ছে গ্রেপ্তার ও গুম হওয়ার আতঙ্কে। শহীদ ও গুম হয়ে যাওয়া মানুষের স্বজনের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে বাংলার আকাশ বাতাস। এছাড়াও আগামীর বাংলাদেশ গড়ার কারিগর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলীর ওপর ক্যাম্পাসের ভেতরে হামলা করেছে পুলিশের সন্ত্রাসীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকা শেহরীন আমিন মোনামী ও নুসরাত জাহান চৌধুরীর গায়েও হাত তুলেছে পুলিশের কিছু কর্মকর্তা। এই ঘৃণ্য হামলার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘আপনারা জানেন, আমরা আমাদের কোন ব্যক্তিস্বার্থের জন্য আন্দোলন করছি না। আমাদের আন্দোলন আপনার ও আপনার সন্তানের মুক্তির জন্য। কী অপরাধ ছিল আমাদের? সাংবিধানিক অধিকার চাওয়াটা কি আমাদের অপরাধ? কী অপরাধে শত শত ভাইদেরকে হত্যা করা হলো? আমরা এর জবাব জানি না। কিন্তু এর জবাব ও বিচার না নিয়ে আমরা আমাদের আন্দোলনকে থামাব না।’
এসএ/দীপ্ত সংবাদ