মানিকগঞ্জের বাসস্ট্যান্ডে ২০০৮ সালে নির্বাচনী পথসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মানিকগঞ্জবাসী যদি আমার নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করে তাহলে এই জেলায় ব্যাপক উন্নয়নসহ মন্ত্রী দেব।
বিএনপির ঘাঁটি বিবেচিত এ জেলার মানুষ সেই থেকে আওয়ামী লীগকে ভোট দিচ্ছে। তখন থেকেই নৌকার জয় হয়ে আসছে। জেলায় একজন মন্ত্রী থাকলে উন্নয়নের র্শীর্ষে পোঁছে দিতে পারবেন বলে মনে করেন সাধারন মানুষ। এ জন্য জেলাবাসী জাহিদ মালেককে মন্ত্রী পরিষদে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি রাখেন।
রবিবার (১৪ জানুয়ারি) বেশ কয়েকটি বাজারে ঘুরে সাধারন মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, নতুন মন্ত্রী পরিষদের তালিকায় সাবেক স্বাাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নাম না থাকায় অনেকেই দুঃখ প্রকাশ করছেন। এছাড়াও জেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও হতাশ হয়েছেন বলে জানান।
এ সময় স্থানীয়রা জানান, দশ বছর আগে মানিকগঞ্জে স্বাস্থ্য খাতে তেমন উন্নয়ন ছিল না। মানুষে অসুস্থ হলেই চিকিৎসা জন্য ঢাকা যেতে হতো। হাসপাতালে যাওয়ার আগেই পথিমধ্যে চিকিৎসাবিহীন অনেকেই মারা যেতেন। ২০১৪ সালে যখন জাহিদ মালেকে প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বানান, তখন থেকেই এই জেলার স্বাস্থ্যখাতসহ সব ক্ষেত্রেই উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করে। এরপরে ২০১৮ সালে যখন তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন। এই জেলায় মেডিকেল কলেজ, ৫০০ শয্যা নতুন ভবনসহ হাসপাতাল, ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালে নতুন ৯তলা ভবনসহ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল। প্রতিটি উপজেলায় নতুনসহ ৫০ শয্যা হাসপাতাল। বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ। কম খরচে বিভিন্ন টেস্টের জন্য নতুন নতুন মেশিন স্থাপন হয়।
স্থানীয়রা বলেন, আজ আমাদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা যেতে হয় না, বরং আশপাশের জেলার মানুষ উন্নত চিকিৎসা নিতে এই জেলায় আসেন।
তারা আরও জানান, শুধু এসবই শেষ নয়। এই জেলায় স্বাস্থামন্ত্রী থাকাকালীন, নাসিং কলেজ, ইনস্টিটিউট অব হেলথ, টেকনোলজি, মেডিকেল অ্যসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুল, রিজিওনাল পপুলেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হয়।
এছাড়া সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে যোগ হয়েছে ঢাকা–সিংগাইর–মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কসহ যোগাযোগের জন্য প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়নের সঙ্গে নির্মাণ হয়েছে কয়েকশত কিলোমিটার কার্পেটিং সড়ক। সড়কের সঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছে কালিগঙ্গা নদীর উপরে বেওথা সেতু, ধলেশ্বরী নদীর উপরে তিল্লি সেতু। এছাড়াও শতাধিক ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ হয়েছে। জাহিদ মালেক মন্ত্রী থাকাকালীন এই জেলায় এত উন্নয়ন হয়েছে তার আমরা সবাই খুশি।
এলাকাবাসী আরও বলেন, এই মানিকগঞ্জ এক সময় বিএনপির ঘাঁটি ছিল। পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর থেকে ২০০১ সালে পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন হয়েছে একটি আসনেও আওয়ামী লীগের প্রাথীরা বিজয়ী হতে পারেননি। তবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পর থেকে বিএনপি আর একটিও আসন পায়নি।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আফসার উদ্দিন সরকার বলেন, জাহিদ মালেক মন্ত্রী থাকাকালীন মানিকগঞ্জে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে। এছাড়াও প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার উন্নয়ন রয়েছে। মন্ত্রী পরিষদে জাহিদ মালেকের নাম না থাকায় এই জেলার নেতারা হতাশ হয়েছেন বলে জানান তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুদেব সাহা বলেন, করোনাকালীন সময়ে জাহিদ মালেক যে অবদান রেখেছেন সে হিসেবে তাকে পুরষ্কৃত করার কথা। কি কারনে তাকে মন্ত্রীত্ব থেকে সরানো হলো তা আমাদের জানা নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী যা ভালো মনে হয়েছে করেছেন। তার নেতৃত্বের প্রতি আমাদের বিশ্বাস, আস্থা আছে।
জেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দীন বলেন, প্রধানমন্ত্রী যাদের পছন্দ করেছেন তাদেরকেই মন্ত্রীত্ব দিচ্ছেন। তবে জাহিদ মালেকের নাম না থাকায় দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
জাহিদ মালেক মানিকগঞ্জ–৩ আসন (সদর ও সাটুরিয়া উপজেলা) থেকে টানা ৪ বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এরমধ্যে একবার স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও একবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জাহিদুল/ আল / দীপ্ত সংবাদ