জলবায়ু পরিবর্তনে দেশের শিশুরাই সর্বোচ্চ মূল্য দিচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ে ঘর হারানো যে শিশুটি পরিবারের সঙ্গে উপকূলীয় গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছে সে কখনো জলবায়ু পরিবর্তনের কথা শোনেনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে যেন কারও নিস্তার নেই। সন্দেহ নেই, জলবায়ু পরিবর্তন শিশুর বাল্যকাল কেড়ে নিচ্ছে। এমনকি কারো কারো ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যারও কারণ ঘটাচ্ছে।
দরিদ্র পরিবারের শিশুরা বেঁচে থাকার তাগিদে ও পরিবারের জন্য কাজে নেমে পড়তে বাধ্য হচ্ছে। উপকূলের হাজার হাজার শিশু মাছ ধরার কাজ অন্যদিকে অনেক শিশু অন্যের নৌকায় কাজ করে দরিদ্র পরিবারের হাতে টাকা তুলে দিচ্ছে।
অনেক পরিবারের অভিভাবক শিশুকে তার নিজের কাজের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। শিশুদের নিয়ে উপকূলীয় পরিবারগুলোতে সচেতনতা কিছুটা কম। আর কম হবেইবা না কেন? জলবায়ু পরিবর্তন যেখানে পুরো জীবনব্যবস্থাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে, সেখানে সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর সময় কোথায়?
ইউনিসেফের শিশুদের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি সূচক বা চিলড্রেনস ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৩ দেশের মধ্যে ১৫তম। বিভিন্ন গবেষক ও প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাবের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম অরক্ষিত দেশের একটি। জলবায়ু পরিবর্তন যেভাবে সামাজিক সমস্যাগুলোকে প্রকট করছে তাতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়ছে শিশুরা।
জলবায়ু পরিবর্তন সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। অতিবৃষ্টি, খরা, দাবানল তীব্র আকার ধারণ করেছে। বহু দেশ এখন রীতিমতো উদ্বেগ-উত্কণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। আর এর যে নেতিবাচক ফল তৈরি হচ্ছে তার মধ্যে শিশুস্বাস্থ্য বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (উব্লিউএইচও) মতে, মারাত্মক তীব্র অপুষ্টি পাঁচ বছর বয়সি শিশুদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। সংস্হার মতে, প্রতিবছর সারা বিশ্বে ২ কোটি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভোগে। আর ১০ লাখের মতো শিশুর মৃত্যু হয়। এসব শিশুর অধিকাংশই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বাসিন্দা।
সাধারণভাবে শিশুর অপুষ্টি খালি চোখে দেখা যায় না। দীর্ঘমেয়াদি অপুষ্টি কিংবা তীব্রতর অপুষ্টির শিকার হলে শিশুর মৃতু্য পর্যন্ত হতে পারে। অপুষ্টি শিশুর বুদ্ধি ও বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। দীর্ঘমেয়াদি অপুষ্টি শিশুর প্রতিবন্ধিতার দিকেও ঠেলে দিতে পারে। অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর উচ্চতা কম হয়, শুকনা হয়, পাতলা হয় ও রক্তশূন্যতায় ভোগে। অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ও নানা জটিলতা দেখা দেয়। দেশের শিশুদের বিশাল একটি অংশ বিশেষ করে উপকূলের শিশুদের অপুষ্টিতে রেখে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে শিশুদের ‘ নতুন চিন্তাধারা’ যোগ করা জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের সময় এখনই।
বৈশ্বিক এই সংকট মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহে এক যোগে কাজের কোনো বিকল্প নেই। সরকারের পাশাপাশি আমরা যদি সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি, তবেই এই ব্যাপক দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব হবে আমাদের পক্ষে। বাঁচবে দেশ, সুরক্ষিত হবে নারী ও শিশুরা।
এম,এফ তাহমীদ
সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী