রাজধানীর বাড্ডায় সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করার তথ্যাদি সংগ্রহে গিয়ে ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত তাসলিমা বেগম রেনু হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ সোমবার।
তাসলিমা বেগম রেণু তার সন্তান তুবাকে ২০১৯ সালের ২০ জুলাই সকালে বাড্ডা উত্তর–পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে ছেলেধরা সন্দেহে স্কুলের সামনে গণপিটুনির শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
ভাইরাল হওয়া মোবাইল ফোনের ভিডিও এবং সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শত শত মানুষের সামনে কয়েকজন যুবক ৪০ বছর বয়সী রেণুকে নির্মমভাবে লাথি মেরে পদদলিত করছে।
ওই রাতেই রেনুর বোনের ছেলে নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনকে আসামি করা হয়। পরে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে গণপিটুনিতে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্তের পর গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করলেও রেণু হত্যা মামলার নিষ্পত্তি এখনো হয়নি।
দেশের প্রচলিত আইন এবং সাংবিধানিক সুরক্ষা থাকা সত্ত্বেও ত্রুটিপূর্ণ তদন্ত ও বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে গণপিটুনির ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের শাস্তির নজির বাংলাদেশে খুবই বিরল। এ কারণেই গণপিটুনিতে অংশ নেওয়া জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে দ্বিধান্বিত হয় না। অথচ, এটি আইন ও বিচারবহির্ভূত।
গত ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘মব জাস্টিস‘ বা তাৎক্ষণিক বিক্ষুব্ধ জনতার বিচারের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় রেণু হত্যা মামলার নিষ্পত্তির বিষয়ে নতুন করে দেশজুড়ে আলোচনায় আসে।
২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল হক ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুইজনের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দাখিল করেন। ২০২১ সালের ১ এপ্রিল ১৩ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
বিচার চলাকালীন আদালত ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। এছাড়া দুই শিশুর মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু টাইব্যুনাল–৭ এ বিচারাধীন।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ মোরশেদ আলমের আদালত এ রায় ঘোষণা করবেন। রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দাবি জানিয়েছেন নিহত রেনুর স্বজনরা।
দেশে চলমান মব জাস্টিস বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত ক্ষেত্রে আদালতের আজকের রায় এবং পর্যবেক্ষণ সমাজে একটি গভীর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন নাগরিক সমাজ।