কোরবানি করা ওয়াজিব
কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি মৌলিক ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। সামর্থ্যবান নর–নারীর ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। এটি ইব্রাহিমের সুন্নত। এছাড়া গরীব–দুঃখী ও পাড়া–প্রতিবেশির আপ্যায়নের ব্যবস্থা হয়।
আল্লাহ তায়াআলা কুরবানি করার নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করেছেন,
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
অর্থ: অতএব আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন।
হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরবানি করার নির্দেশ দিয়ে বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ عَلَى كُلِّ أَهْلِ بَيْتٍ أَوْ عَلَى كُلِّ أَهْلِ بَيْتٍ فِي كُلِّ عَامٍ أَضْحَاةً وَعَتِيرَةً
অর্থ্যাৎ: হে লোক সকল, প্রত্যেক বছরেই প্রতি পরিবারের জন্য রয়েছে কোরবানি এবং আতীরাহ।
প্রত্যেক জাতিই কোরবানি করত
কুরবানি এতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যে, আদম (আ.) থেকে সকল যুগে কোরবানি ছিল। তবে তা আদায়ের পন্থা এক ছিল না। শরীয়তে ইব্রাহিমের সুন্নত। সেখান থেকেই এসেছে এই কোরবানি। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ
অর্থ্যাৎ প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কোরবানির বিধান রেখেছিলাম। যাতে উক্ত পশু জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে এ জন্য যে, তিনি চতুষ্পদ জন্তু থেকে তাদের জন্য রিজিক নির্ধারণ করেছেন।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা নাসাফী ও যামাখশারী রহ.বলেন, আদম (আ.) থেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত প্রত্যেক জাতিকে আল্লাহ তাআলা তার নৈকট্য লাভের জন্য কোরবানির বিধান দিয়েছেন। তবে কালের পরিক্রমায় কোরবানির ধরণ ভিন্ন ভিন্ন ছিল।
কোরবানি ইব্রাহিম (আ.) সুন্নাত
কোরবানির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, ইবরাহিম (আ.) আদর্শে উজ্জীবিত করা। সে হিসাবেও কোরবানি আমাদের নিকট গুরুত্বপূর্ণ। হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বলেন, আমাদের সমাজে প্রচলিত কোরবানি সম্পর্কে নবীজীকে জিজ্ঞেস করা হলো, مَا هَذِهِ الْأَضَاحِيُّ হে আল্লাহর রাসূল! এই কুরবানি কী? রাসূল বললেন, سُنَّةُ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ এটা হলো, তোমাদের পিতা ইব্রাহিমের আদর্শ।
কুরবানি না করার কঠোরতা:
হাদিসে কুরবানি না করার কঠোরতা বর্ণনা করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرُبَنَّ مُصَلَّانَا
অর্থ্যাৎ: আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল বলেছেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়।
কুরবানি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার আরো একটি দিক হলো, নবীজী প্রতি বছর কোরবানি করতেন। হাদিসে এসেছে, عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ أَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِالْمَدِينَةِ عَشْرَ سِنِينَ يُضَحِّي
অর্থ্যাৎ: ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম মদিনায় দশ বছর অবস্থান করেছেন এবং তিনি (প্রতি বছর) কোরবানি করেছেন।
কোরবানির ফযিলত
কুরবানি একটি ফযিলতপূর্ণ ইবাদত। কুরবানির ফযিলতের ব্যাপারে হাদিসে অনেক বর্ণনা এসেছে। তন্মধ্যে আমরা আজ কয়েকটি আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
ঈদের দিনে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত কুরবানি করা
ঈদের দিনের যত আমল ও ইবাদত আছে, তার মধ্যে কোরবানি সর্বশ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান।
হাদিসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَا عَمِلَ آدَمِيٌّ مِنْ عَمَلٍ يَوْمَ النَّحْرِ أَحَبَّ إِلَى اللَّهِ مِنْ إِهْرَاقِ الدَّمِ
অর্থ্যাৎ: আয়িশা (রা.) বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কুরবানির দিন রক্ত প্রবাহিত করা (যবাই করা) অপেক্ষা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় কোনো আমল হয় না।
কিয়ামতের দিন কোরবানির সওয়াব
কিয়ামতের দিন বান্দার প্রতিটি ভালো আমলের সওয়াব ও মন্দ আমলের সাজা দেয়া হবে। কোরবানির সওয়াব কী হবে হাদিসে তা উল্লেখ আছে। হাদিসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” ……. إِنَّهَا لَتَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُونِها وَأَشْعَارِهَا وَأَظْلاَفِهَا
অর্থ্যাৎ: আয়েশা (রা.) বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন এর শিং লোম ও পায়ের খুর সব সহ উপস্থিত হবে।
কুরবানির রক্ত মাটিতে পরার আগে আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়
কিছু ইবাদত এমন যেগুলো সম্পূর্ণরূপে সম্পাদন করার পর আল্লাহর দরবারে পৌঁছে। কিন্তু কুরবানি এমন ইবাদত যা সম্পূর্ণরূপে সম্পাদন করার আগেই আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়।
হাদিসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” ……. وَإِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللَّهِ بِمَكَانٍ قَبْلَ أَنْ يَقَعَ مِنَ الأَرْضِ فَطِيبُوا بِهَا نَفْسًا
অর্থ্যাৎ: আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যায় সুতরাং স্বাচ্ছন্দ হৃদয়ে তোমরা তা করবে।
লেখক, শাইখ মুফতি মুহাম্মাদ আল আমিন নূরী।
এজে / আল / দীপ্ত সংবাদ