কারখানা ব্যবস্থাপনা, কর্মপরিবেশ উন্নয়ন ও কর্মীদের নিরাপত্তায় সংলাপ ও অংশগ্রহণের সংস্কৃতি তৈরিতে অবদান রাখায় সামাজিক সংলাপ পুরস্কার–২০২৩ পেয়েছে টেক্সটাইল ও চামড়া খাতের ছয়টি কারখানা।
সোমবার (৪ মার্চ) রাজধানীর গুলশান হোটেল আমারিতে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
এদিকে ৩১টি কারখানায় ১৩৬টি ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে প্রতিযোগিতায় তুলে ধরা হয়। এসব ব্যবস্থা কর্মক্ষেত্র উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বেশি বেশি সংলাপকে সামনে নিয়ে আসে।
নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে গত দেড় বছরে এসব কারখানা কমপ্লায়েন্সের বাইরেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। যার মধ্যে আছে বেশি বেশি অংশগ্রহণ, নিরাপত্তা এবং হয়রানি বিরোধী কমিটিকে যুক্ত করে সংলাপের আয়োজন করা।
বিজয়ী হওয়া কারখানাগুলো:
পার্টিসিপেশন কমিটির মাধ্যমে অনলাইনে ডাক্তারের পরামর্শ (স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ) সেবা চালুর জন্য পিকার্ড বাংলাদেশ লিমিটেড। গর্ভবতীদের জন্য বিশেষ চেয়ার সুবিধা চালুর জন্য রানার আপ হয়েছে ব্লু ওশান ফুটওয়ার লিমিটেড।
নিরাপত্তা কমিটির জন্য সোশ্যাল ডায়ালগ সেফটি কমিটি পুরস্কার পেয়েছে আমানা নিটেক্স। সুইং অপারেটরদের জন্য ব্যাক সাপোর্ট চেয়ারের ব্যবস্থা করেছে তারা। সব কর্মীদের জন্য ফ্রি চক্ষু পরীক্ষা সেবা চালুর জন্য দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে ক্লিফটন টেক্সটাইল ও অ্যাপারেলস লিমিটেড।
সোশ্যাল ডায়ালগের এন্টি হ্যারেসমেন্ট কমিটি পুরস্কার পেয়েছে নিট কনসার্ন লিমিটেড।
তারা এন্টি হ্যারেসমেন্ট কমিটিকে ইউনিফর্ম দিয়েছে। এর মাধ্যমে কমিটির সদস্যরা সবার কাছে দৃশ্যমান এবং তাদের খুঁজে বের করা খুবই সহজ ছিল। কারখানার শ্রমিকদের স্যানিটারি ন্যাপকিন পরিবর্তনের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দেয়া এবং পানি সরবরাহের জন্য কারখানার একপাশে চেঞ্জ কর্ণার চালুর জন্য পুরস্কার পেয়েছে ক্লিফটন টেক্সটাইল ও অ্যাপারেলস।
টেক্সটাইল ও চামড়া খাতের টেকসই উন্নয়নের জন্য স্টাইল কর্মসূচিটি জার্মান অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বাস্তবায়ন করছে জার্মান সংস্থা জিআইজেড।
এছাড়া সহযোগিতায় করেছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যারস ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি)।
এ সব প্রতিষ্ঠানই এই পুরস্কারের উদ্যোক্তা। অনারেবল মেনশন পান লায়লা স্টাইল।
তৈরি পোশাক খাত, নাগরিক সমাজ, পোশাকশ্রমিক এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শ্রম বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি জুরি বোর্ড এই মূল্যায়ন করেছে। তাদের মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে তিনটি চ্যাম্পিয়ন ও তিনটি রানারআপ চূড়ান্ত করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে বিজয়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুরস্কৃত করা হয়।
অনুষ্ঠানে আলোচনার মধ্যে শুধুই কর্মীদের অংশগ্রহণ কিংবা কমপ্লায়েন্সের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এই উদ্যোগের সঙ্গে কারখানার কমিটিগুলোর অংশগ্রহণের ওপর। অধিকাংশ কারখানাতেই কমিটি থাকলেও কারখানায় অংশগ্রহণের সংস্কৃতি তৈরি ও কার্যকারিতা তৈরির ক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকে। এই তারতম্যের কারণে কারখানাগুলোতে কমিটিগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ, তাদের দক্ষতা এবং চেষ্টার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারী কর্মীদের জন্য কোনো পরিবর্তন আনা অনেক কঠিন ও প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়।
জেন্ডার সমতার ক্ষেত্রে কারখানাগুলোর কমিটির ২৫ শতাংশকে লিঙ্গভিত্তিক বিষয়ে কাজ করার ক্ষমতা দিয়েছে স্টাইল। তারা হয়রানি ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখতে পারে। এটা শুধুমাত্র কর্মীদের সমস্যা সমাধানে সাময়িক কাজ করে না, টেকসই সমস্যা সমাধান করে কর্মীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
সামাজিক সংলাপ পুরস্কার আরএমজি খাতের জন্য একটি আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছে। শ্রমিকদের অবস্থার উন্নয়ন, জেন্ডার সমতা উন্নয়নকে উত্সাহিত করা এবং টেক্সটাইল ও চামড়া খাতে খোলামেলা সংলাপ ও আত্মবিশ্বাসমূক পদক্ষেপ তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখবে।
এজে / আল / দীপ্ত সংবাদ