শুক্রবার, জানুয়ারি ৩১, ২০২৫
শুক্রবার, জানুয়ারি ৩১, ২০২৫

কমলদহ ট্রেইলে একের ভেতর অনেক

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

এবারের ভ্রমণের স্থান মিরসরাই উপজেলার বড় দরগার হাট অঞ্চলের গভীর পাহাড়ি বনজঙ্গলে। স্থানটি তথ্য পাওয়ার পরই ভ্রমণ পিপাসুমনে শুরু হয় উথালপাথাল। দেরি না করে দিনক্ষণ ঠিক করে ‘দেছুট’ ভ্রমণ সংঘের বন্ধুরা একরাতে মাইক্রোবাসে ঠিক করে ছুটলাম গন্তব্যের পথে।

ভাগ্যসুপ্রসন্ন হওয়ায় ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কে এদিন যানজট ছিলো না; সেজন্য ভোর সাড়ে চারটার মধ্যেই মিরসরাই পৌঁছে যাই।আগেই থেকে আমাদের অপেক্ষায় ছিল গাইড। নির্ধারিত স্থান থেকে গাইডকে তুলে নিয়ে কমলদহ ব্রিক ফিল্ডের পাশের সড়ক ধরে রেল লাইনের দিকে ছুটছি। পথে বিরত দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন’শ বছরের পুরনো চাঁন মিয়া জামে মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করি।

পাহাড়ের ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে সূর্যিমামা। ছবি: ‘দে-ছুট’

এরপর গাড়ি থামল রেল লাইনের ধারে। গাড়ি থেকে সবার মনস্থির; কেননা সারাদিনের জন্য দুপা’ই সম্বল। মেঠোপথ মাড়িয়ে ক্ষেতের আইল ধরে সবুজ পাহাড়ের দিকে হাঁটছি। একটা সময়ে সবুজ মায়াবি পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে হারিয়ে যাই। এটি কমলদহ ট্রেইল নামে পরিচিত। মাত্র ২০২৫ মিনিট হাঁটতেই ঝরঝরি ঝর্ণা পাই। ঝর্ণাধারাটা খুবই সুন্দর হওয়ায় বর্তমানে অতি উৎসাহী পর্যটকরা রূপসি ঝর্ণা নামে ডাকে। আমরা কিছুক্ষণ সেখানে থেকে ব্যতিক্রম কিছু করার ইচ্ছায় ঝিরি পথে না গিয়ে ঝরঝরির পাশ দিয়ে পাহাড়ের ওপর দিকে এগিয়ে যাই। ট্রেকিং করে যেতে যেতে অনেক ক্যাসকেড (জলপ্রতাত) চোখে পড়ে। যেগুলো একেকটা ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্যের। কেউবা ভুল করে ঝর্ণাও ভেবে থাকে।

একটা সময় চোখে ধরা দেয় খুব সুন্দর একটি ঝর্ণা। নাম তার ছাগলকান্দা। গাইডের মুখে নামটা শুনে মুচকি না হেসে আর পারলাম না। ছাগলকান্দা ঝর্ণাটা বেশ চওড়া। প্রায় ৪০৫০ ফিট উচ্চতা হতে অবিরামভাবে ঝরছে পানি। ইচ্ছে মতো তীব্র গরমে শীতল পানিতে শরীর ভিজেয়ে নিই। ভেজা শরীরেই সামনের দিকে এগোতে থাকি। সকালে নাশতা পেটে না পড়ায়; হঠাৎই টান পড়ল কমবেশির সবারই। আর দেরি নয়। জঙ্গল হতে শুকনো লাকড়ি যুগিয়ে, নুডলসের জন্য গরম পানি বসিয়ে দেয়া হল।

দেছুট’ এর সদস্যদের আগুন জ্বালানোর কেরামতি দেখে শৈশবের টিভি সিরিজ ম্যাকগাইভারের কথা মনে পড়ে যায়। ১০ মিনিটের মজাদার নুডলস ৪০ মিনিট পর তৈরি হয়েছে!

আহ্ দেরি হলেও বেশ মজাদার ছিল। খেয়ে দেয়ে এখন পুরো শরীর চাঙ্গা। স্বল্প সময় হাঁটার পরই বেশ খাড়া ও পিচ্ছিল পথ সামনে আসে। তাই রিস্ক না নিয়ে রেপ্লিং করে উঠি। যখন অমি উঠি তখন অনেক পর্যটক ক্যামেরা তাক করে ছিল। হয়তো তারা ভাবছিলো লোকটা যখন পড়তে পড়তে মরতে বসবে, তখন সেই সময়ের ভিডিওটা ফেসবুকে আপ্লোড দিয়ে রাতারাতি সুপার হিট হবে। হাহাহা।

কমলদহ ট্রেইলের ঝর্ণায় ভ্রমণপ্রেমী মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম। ছবি: ‘দে-ছুট’

ঝিরিপথ ধরে হাঁটতে হাটঁতে দুধ রাজ ঝর্ণার দেখা মিলে। প্রত্যেকটা ঝর্ণার নামই ভিন্নরকম আকর্ষণের। এর ভৌগলিক আকৃতিটাও বেশ চমৎকার। যাই এবার মধু খাইয়া ঝর্ণা দেখতে। বুনো পরিবেশে, ঝিরির পানিতে হাইকিং চলছে। চারপাশ নিঝুম নিস্তব্দ একটা ভাব। বিষাক্ত চেলার ছুটে চলা। পায়ের নিচে পাথরের ভাণ্ডার। কোথাও কোথাও দুপাশের গাছগুলোর ডাল, একটা সঙ্গে অন্যটা এমনভাবে জড়িয়েছে যে সূর্যের আলোও হার মেনেছে। এ পাশে সাধারণ পর্যটকদের খুব একটা বিচরণ দেখা যায় না। আর থাকবেই বা কেমনে?

দেছুট’ এর দামালরা ঝিরির পানিতে কমবেশি চিৎপটাং খেয়ে নাস্তানাবুদ হয়েছে। তবুও ছিল না ক্লান্তি। হাঁটতে হাঁটতে পেয়ে যাই মধু খাইয়া ঝর্ণা। গা ছমছম করা পরিবেশ। ঝোপঝাড় জঙ্গল দিয়ে ঘেরা মধু খাইয়া। পাথরের ভাঁজে ভাঁজে কলকল শব্দে পানি গড়িয়ে পড়ে। এর দ্বিতীয় ধাপে উঠতে হলে মধু খেয়েই উঠতে হবে! তা না হলে, পাফস্কালেই একারেই পগারপাড়। কিন্তু একি হায়, কারও সঙ্গেই মধু নেই। হাহাহা। তাই রেপ্লিং করেই উঠে পড়লাম। ওয়াও! অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভাণ্ডার মধু খাইয়া। ঝর্ণার ওপর হতে জঙ্গলের রূপ দেখে বিমোহিত আপনাকে হতেই হবে।

দ্বিতীয় ধাপে উঠার পর বুঝতে বাকি রইলা না যে, মধু খাইয়া ঝর্ণার রূপ যতনা না সুন্দরতার চাইতে অনেক অনেক বেশি দৃষ্টি নন্দন এর অবস্থান। নামের সার্থকতা যাই হোক না কেনো তবে মধু খাইয়া দেখতে যাবার ট্রেইলটা অসাধারণ। এরকম রোমাঞ্চকর ট্রেইলে অংশ নিতে পারা ভ্রমণ জীবনে সবার জন্যই হবে দারুণ একটা অভিজ্ঞতা। মধু খাইয়ার নির্যাস নিয়ে ফিরে আসি, আবারও ইংরেজি ওয়াই অক্ষরের মত থাকা জায়গাতে।

কমলদহ ট্রেইলের পথে দেখে মিলবে একাধিক জলপ্রপাত ছবি: ‘দে-ছুট’

কমলদহ ট্রেইলে এরকম অনেক ওয়াই সাদৃশ্য স্থান রয়েছে। যার প্রতিটা ধরে আগালেই প্রকৃতির নানান রূপ চোখে ধরা দেবে। আমরাও যাচ্ছি। বেশ কিছুটা সময় হাইকিংট্রেকিং করার পর পেলাম অনিন্দ্য সুন্দর পাথর ভাঙা ঝর্ণা। তীব্র গতিতে প্রায় ৭০৮০ ফিট উচ্চতা হতে অবিরাম ধারায় পানির ছন্দপতন। স্বচ্ছ পানির রঙ অনেকটা নীলাভ। ঝর্ণার আকৃতি অনেকটা ছুরির মত। ঝর্ণার সামনে প্রাকৃতিকভাবেই জলাধার সৃষ্টি হয়েছে। সেই জলাশয়ের শীতল পানিতে মন ভরে ডুবডুবি চলে। সকাল গড়িয়ে বিকেল। তাই আর দেরি না করে, বারৈয়ার ঢালা দিয়ে ফেরার পথ ধরি।

কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে চট্রগ্রামগামী বাসে চড়ে পড়বেন মিরসরাই উপজেলার বড় দারোগার হাট। সেখান থেকে সিএনজি অথবা অটোরিকশা করে কমলদহ গ্রামের রেল লাইন।

খাওয়াদাওয়া
স্থানটিতে খাবারের তেমন সুবিধা নেই। তাই সঙ্গে শুকনো খাবার রাখতে হবে।

ভ্রমণ তথ্য
সময় নিয়ে ভালোভাবে দেখতে হলে সকালে যেতে হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ৭৮ ঘন্টার ট্রেইল। সঙ্গে ভালোমানের রসি রাখুন।

যা করবেন না
খাবারদাবারের অপচনশীল মোড়ক ফেলে আসবেন না।প্রয়োজনে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ফেলবেন। দক্ষ গাইড সঙ্গে নিন। অন্যথায় হারিয়ে যাবার সুযোগ রয়েছে।

লেখক, মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম।

এজে /আল / দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More