ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যম হিসেবে অনলাইনে বিনিয়োগ করে কম সময়ে অধিক মুনাফার মাধ্যমে লাভবান হওয়ার অন্যতম প্লাটফর্মের মধ্যে রিপটন কয়েন, সিজি ট্রেড ও এমটিএফই হচ্ছে অন্যতম অ্যাপ।
বাংলাদেশে এগুলোর কোনটিরই বৈধ অফিস নেই। তবে এলাকা ভিত্তিক প্রতিনিধিগন রয়েছে। যে প্রতিনিধিরা কোম্পানীর কাছ থেকে পাওয়া বড় ধরণের একটি নির্দিষ্ট মুনাফার বিনিময়ে দেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষদের কম সময়ে অধিক মুনাফার আকর্ষনীয় লোভ দেখিয়ে কোম্পানীগুলোতে নিজস্ব এ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে অর্থ বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করে আসছেন।
তারই ধারাবাহিকতায় নওগাঁয় অনলাইন ভিত্তিক “এমটিএফই” নামে একটি অ্যাপের মাধ্যমে হাজার থেকে লাখ টাকা বিনিয়োগ করে দ্রুত অধিক মুনাফার আয় করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছে হাজারও মানুষ। শহর কিংবা গ্রাম সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল এই অ্যাপটি। যেখানে প্রতিদিন সাধারণ মানুষ টাকা বিনিয়োগ করে দ্রুত অধিক মুনাফার আয় করার স্বপ্ন দেখছিলেন। সম্প্রতি এই
অভিনব পদ্ধতির ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ হারানোর কাহিনীটি ছড়িয়ে পড়ে । নি:স্ব হওয়ার পর কে কত অর্থ কিভাবে বিনিয়োগ করেছিলেন তার সবকিছুই বেরিয়ে আসছে। অর্থবিনিয়োগের উপযুক্ত কোন কাগজপত্রাদি না থাকায় বর্তমানে অ্যাপে বিনিয়োগকারী সবারই মাথায় হাত।
জানা গেছে, বিদেশী অ্যাপ মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ (এমটিএফই) নামের একটি অনলাইন ট্রেডিং ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। এমটিএফই অ্যাপটি চালু থাকা অবস্থায় একাউন্ট চালু করার জন্য সর্বনিম্ন ২৬ডলারের সমপরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করতে হতো। সেই টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন পাওয়া যাবে শতকরা হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ মুনাফা। যার এ্যাকাউন্টে যত বেশি অর্থ থাকবে সে তত বেশি মুনাফা পাবেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, এই আ্যাপে এ্যাকাউন্ট খোলার পর বিনিয়োগ করা টাকার ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা হতো। হঠাৎ করেই এ্যাকাউন্ট থেকে তারা টাকা উঠাতে গিয়ে দেখে তাদের এ্যাকাউন্টে কোন ডলার নেই বরং তাদের এ্যাকাউন্ট থেকে কোম্পানী আরো পাবেন মর্মে মাইনাস চিহ্ন দেয়া হয়েছে। প্রতারণা করে তাদের টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে এমটিএফই। লাভের আশায় এসে উল্টো ঋনের বোঝাও ধরিয়ে দিয়েছে এমটিএফই। এতে করে যারা দ্রুত আয় করার স্বপ্ন নিয়ে লাখ লাখ
টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন তারা এখন সর্বশান্ত হয়ে পথে বসেছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে নওগাঁ শহরের এক ভুক্তভোগী জানান, একটু লাভের আশায় ধার করে ১লাখ টাকা ইনভেস্ট করেছিলাম। কিছুদিন তারা ওই টাকার ওপর লাভও দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে কিছুদিন আগে থেকে অ্যাপটি থেকে টাকা উঠানো বন্ধ করে দেন। এখন শুনছি তারা টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। এখন ধারের টাকা পরিশোধ করবো কিভাবে সেই চিন্তায় আছি।
নওগাঁ সদর উপজেলার শৈলগাছী ইউনিয়নের ভুক্তভোগী আলামিন বলেন, একজন এসে বললো এমটিএফই টাকা ইনভেস্ট করলে নাকি দ্বিগুন পরিমাণ টাকা আয় করা যাবে। পরে একটি এনজিও থেকে ৬০ হাজার টাকা তুলে সেখানে বিনিয়োগ করি। এখন ওই অ্যাপসে আর প্রবেশ করা যাচ্ছে। এখন টাকাগুলো না পেলে এনজিওর টাকা পরিশোধ করবো কিভাবে ? কোন কিছু বুঝতে পারছি না।
রাণীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের আরেক ভুক্তভোগী নাঈম বলে, আমি অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালায়। একজনের পাল্লায় পরে লাভের আশায় কিছুদিন আগেই এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ২৫ হাজার টাকা ইনভেস্ট করেছিলাম। কিন্তু তারা টাকা নিয়ে পালিয়ে গেল। এখন কিভাবে কি করবো কোন কিছুই বুঝতে পারছি না।
এমটিএফই অ্যাপসের সিইও হিসেবে পরিচয়দানকারী রাণীনগর উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে রাব্বী জানান, প্রথমে মহাদেবপুর উপজেলার লতিফুল নামে একজন তাকে লিংক দিয়ে সেখানে কাজ করার জন্য বলেন। পরে তিনি সেখানে বিনোয়োগ করেন এবং বেশ কয়েকজনকেও উদ্বুদ্ধ করেন। তবে কাউকে কোন ধরণের প্রলোভন দেখানো হয়নি বলে দাবি করেন রাব্বী।
রাণীনগর উপজেলার আরেক অ্যাপ ভিত্তিক অনলাইন ব্যবসার ডিলার রানা ট্রের্ডাসের মালিক রানা বলেন তিনি এমটিএফই নয় অন্য অনলাইন অ্যাপস ভিত্তিক কিছু আর্ন্তজাতিক মানের কোম্পানীর সঙ্গে যুক্ত আছেন। তিনি উপযুক্ত কাগজপত্রাদির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ বিনিয়োগ করাচ্ছেন। যদি ভবিষ্যতে তার কোম্পানীগুলো উধাও হয়ে যায় তাহলে তিনি তার বিনিয়োগকারীদের অর্থ নিজেই ফেরত দিবেন।
রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন ভুক্তভোগীরা লিখিত ভাবে বিষয়টি জানালে তদন্ত সাপেক্ষে এই কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে এখনও কেউ কোন অভিযাগ করেনি। কোন ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শায়লা/ দীপ্ত নিউজ