লক্ষ্যটা ছিল মাত্র ১২৫। টি–টোয়েন্টিতে এটি একেবারেই মামুলি লক্ষ্য হলেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পা হড়কাতে বসেছিল বাংলাদেশ।
শুরুতে জোড়া ধাক্কা ও দলীয় ২৮ রানে তিন উইকেট হারানোর পর ৬৩ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দর দেখিয়ে বিদায় নেন তৌহিদ হৃদয় ও লিটন দাস।
লিটন আউট হওয়ার পর জয়ের জন্য ৩৫ বলে ২৬ রানের দরকার ছিল। কিন্তু এখানে ফের ঘুরে যায় ম্যাচের মোড়। টাইগাররা একের পর এক উইকেট হারাতে থাকলে ভক্তদের হৃদয়ের ভয় বেড়ে যায়। এদিনও ভক্তদের হতাশ করেননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ব্যাটিং দৃঢ়তায় দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন তিনি।
সাত নম্বরে ব্যাট করতে নামা মাহমুদুল্লাহর এর আগেও এমন কীর্তি আছে অসংখ্য। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে যখন দলের বিপদ, ঠিক সেই সময়ে হাল ধরেন তিনি।
তৌহিদ হৃদয় ২০ বলে ৪০ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে বিদায় নিলে ব্যাটিংয়ে নামেন সাকিব। শুরুতে তিনি দেখেশুনে খেলছিলেন। ফলে বল ও রানের ব্যবধান ক্রমেই কমছিল। এরই মধ্যে লিটন আউট হয়ে গেলে মাহমুদুল্লাহ ক্রিজে আসেন। তিনিও শুরুতে কয়েকটি বল দেখেশুনে খেলেন।
রানের চাকায় গতি বাড়াতে ১৬.২ ওভারে পাথিরানার ওপর চড়াও হন সাকিব। তবে থার্ড ম্যান অঞ্চলের সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকা মাহিশ থিকশানাকে অতিক্রম করতে পারেনি তার শট। ফলে ১৪ বলে ৮ রান করে তিনি বিদায় নেন।
সাকিব সাজঘরে ফিরলে ২২ বলে ১৬ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। তবে পরের ওভারে পরপর দুই বলে জোড়া উইকেট নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন নুয়ান থুশারা। ১৮তম ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে রিশাদ হোসেন ও তাসকিনকে যথাক্রমে বোল্ড ও লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তিনি। এরপর ওই প্রান্ত থেকে উইকেট ধসের আশঙ্কা দেখা দেয়। অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না মাহমুদুল্লাহর।
তবে ৩৮ বছর বয়সী সতীর্থের পরামর্শ নিয়ে ওই ওভারের পরের দুটি বল কোনোরকমে মোকাবিলা করেন তানজিম সাকিব। পরের ওভারে স্ট্রাইকে এসেই ছক্কা হাঁকিয়ে চাপমুক্ত হন মাহমুদুল্লাহ, ভারমুক্ত করেন বাংলাদেশের কোটি ভক্তকেও। পরের বলে স্ট্রাইক রোটেট করলে তানজিম ফের অস্বস্তিতে পড়েন। তবে তৃতীয় বলে তিনি কোনোমতে এক রান নিলে আর সুযোগ নেননি মাহমুদুল্লাহ। বাকি কাজটুকু তিনি নিজ হাতেই সারেন।
ম্যাচ শেষ হতেই তাই সতীর্থরা তার দিকে ছুটে আসেন। ছুটে এসে বুকে জড়িয়ে ধরেন কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহেও। আর সবার ভালোবাসা নিয়ে বুক চিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
প্রথম ম্যাচেই শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শেষ আটে ওঠার পথ সুগম করল টাইগাররা। ‘ডি’ গ্রুপে তাদের শক্ত প্রতিপক্ষ বলতে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ও লঙ্কানরা। গ্রুপের অন্য দুই দল হচ্ছে নেপাল ও নেদারল্যান্ডস। তুলনামূলক দুর্বল এই দলদুটির বিপক্ষে জিততে পারলে শেষ আট নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের। সেইসঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় পেলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের রাউন্ডে ওঠারও সুযোগ থাকবে তাদের।
অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও হারল শ্রীলঙ্কা। এর ফলে পরের রাউন্ডে যাওয়ার স্বপ্ন খানিকটা ফিকে হয়ে গেছে তাদের। সুযোগ বাঁচিয়ে রাখতে তাই নেপাল ও ডাচদের বিপক্ষে বড় জয়ের বিকল্প নেই লঙ্কানদের। পাশাপাশি একাধিক ম্যাচে বাংলাদেশের পরাজয় চাইবে হাসারাঙ্গা বাহিনী।
সোমবার রাত সাড়ে আটটায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। প্রোটিয়াদেরও দ্বিতীয় ম্যাচ সেটি। আর বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় তৃতীয় ম্যাচে নেপালের মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা।