উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’। ক্রমে দুর্বল হয়ে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার দিয়ে যেতে শুরু করেছে।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে হামুনের মূল অংশ উপকূল অতিক্রম করা শুরু করেছে। এ সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার।
এর প্রভাবে উপকূলের অনেক জায়গায় স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল এতে প্লাবিত হয়েছে বলে জানা যায়। ঝড়ের কারণে বেশ কিছু গাছপালা ভেঙে পড়েছে। তবে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ উপকূলের উঠে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে শক্তি হারিয়ে ঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ নেমে আসে ৯০ কিলোমিটারের নিচে। আগামী ১০ ঘণ্টার মধ্যে এটি পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসবে। বুধবার আরও শক্তিক্ষয় করে পরিণত হবে নিম্নচাপে।
ঘূর্ণিঝড়ের ১৩ নম্বর বুলেটিনে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উত্তর–পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর–পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ পূর্ব থেকে উত্তর–পূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উত্তর–পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
এটি সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ–পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণ–পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ–পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ–পূর্বে অবস্থান করছিল।
ঘূর্ণিঝড়টির মূল অংশ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে পরবর্তী ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল।
এদিকে, উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩–৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এর প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ