আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে ২০২২ সালের শেষ প্রান্তে এসেছে নির্বাচন কমিশন। অনিয়মের অভিযোগে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করে, অনেকের প্রশংসা কুড়িয়েছে কমিশন। এতে মানুষের আস্থা বেড়েছে বলে মনে করেন অনেকে। তবে, ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিভক্তি।
২০২১ সালে স্থানীয় নির্বাচনে প্রাণহানির ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়ে, কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে সিইসি প্রাণহানি এড়াতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকারও করেন। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগসহ, বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মতামত নেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তবে, বিএনপিসহ কয়েকটি দল রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে সাড়া দেয়নি।
চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে পাশ হয় নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন। ফেব্রুয়ারিতে বিচারপতি ওবায়দুর হাসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে বৈঠক করে, প্রস্তাবিত তিন শতাধিক ব্যক্তির নামের তালিকা থেকে, দশজনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে, অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।
দায়িত্ব নেয়ার পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইভিএমের ব্যবহার ও ভোট সুষ্ঠু করতে কয়েক দফা সংলাপ করে বর্তমান কমিশন। এতে রাজনৈতিক দল, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন বিশেষজ্ঞসহ বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া হয়।
১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ছিল এই কমিশনের প্রথম পরীক্ষা। ভোটের ফল ঘোষণা নিয়ে সমালোচনা হয়। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে ইসি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ দেড়শো আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। যদিও জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এর বিরুদ্ধে। এ লক্ষ্যে প্রায় নয় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে।
নিবন্ধন বাতিলের পর বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি-বিডিপি নামে নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করে, জামায়াতে ইসলামী। যদিও মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি, স্বাধীনতাবিরোধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন না দেয়ার দাবি জানিয়েছে, প্রজন্ম একাত্তরের নেতারা।
২০২২ সালে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন। ১২ অক্টোবর ভোটে অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন বাতিল করা হয়। সেখানকার ভোট সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে এই সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। বিভিন্ন মহলে ইসি’র এই সিদ্ধান্ত প্রশংসিত হয়।
এদিকে, পয়লা ডিসেম্বর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে কমিশন। এতে দায়িত্ব অবহেলার জন্য রিটার্নিং অফিসার ও একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ, মোট ১৩৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে ইসি।
রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার- আরপিও বা নির্বাচনী আইন সংশোধনের প্রস্তাব করেছে কমিশন। এটি সাড়ে তিন মাস ধরে আইন মন্ত্রণালয়ের পড়ে আছে।
এদিকে, জাতীয় পরিচয়পত্র- এনআইডি’র দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে নেওয়ার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এটি নিজেদের কাছেই রাখতে চায় নির্বাচন কমিশন।