সংযুক্ত আরব আমিরাতে জাতীয় প্রবাসী দিবস উপলক্ষে আবুধাবি দূতাবাস ও দুবাই কনস্যুলেট বিশেষ ভাবে দিনটি পালন করেন।
আবুধাবি বাংলাদেশ দূতাবাসে বিশেষ সেবা সপ্তাহ পালন করেন। এ বছরই প্রথম দেশের উন্নয়নের প্রবাসীদের বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতীয় প্রবাসী দিবস ঘোষণা করেছে সরকার। গত ২৪ হতে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশেষ সেবা সপ্তাহ ২০২৩ পালিত হয়। আবুধাবি দূতাবাস হতে দূরবর্তী লিউয়া, আল ওয়াগন, আল আইন সহ বিভিন্ন দুর্গম স্থানে গিয়ে প্রবাসীদের মাঝে কনস্যুলার সেবা প্রদানের মাধ্যমে সেবা সপ্তাহটি পরিচালিত হয়েছে।
৩০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো এ দিবসটি উদযাপিত হলো। দূতাবাস প্রাঙ্গণ ছিল বিভিন্ন পেশা শ্রেণীর প্রবাসী বাংলাদেশীর পদচারণায় মুখরিত। এ উপলক্ষ্যে ১০ জন প্রবাসী বাংলাদেশীকে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার আলোকে তাদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ কৃতি প্রবাসী হিসেবে সম্মানিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ দূতাবাস মিলনায়তনে বিশেষ সেবা সপ্তাহের সমাপনী ও প্রবাসী দিবসের অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন আবুধাবিতে নিযুক্ত মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব মোঃ আবু জাফর। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন কাউন্সিলর (শ্রম) জনাব হাজরা সাব্বির হোসেন। পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। এতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রেরিত বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। এরপর প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত সূচি ও কর্মপরিকল্পনা দৃশ্যায়ন করা হয়।
দিবস সম্পর্কে আলোচনার একাংশে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে যাদেরকে কৃতি প্রবাসী হিসেবে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে তাদের মধ্য হতে কয়েকজনের প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হয়। এছাড়া অন্যান্য আগত অতিথিবৃন্দের মধ্য হতেও বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়।
আবুধাবি হতে ২৬০ কিলোমিটার দূরত্বের আরাধা নামক স্থান হতে আগত হাজী মুহাম্মদ আবু হানিফ দীর্ঘ ৩৫ বছরের প্রবাস জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোকপাত করেন। প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে একটি কর্মীর আবুধাবি আসতে একটি দিনের হাজিরা যেমন কাটা যায় তেমনি ২০০/৩০০ দিরহাম খরচ হয়। তাই তিনি মানব্যর রাষ্ট্রদূত কে অনুরোধ জানান, এরকম দুর্গম এলাকায় কনস্যুলার সেবা কৃষি শ্রমিকদের জন্য পরিচালনা করা হলে তারা উপকৃত হবেন এবং এই সঞ্চয়কৃত টাকা তারা দেশের রেমিটেন্স হিসেবে প্রেরণ করতে পারবেন।
এম এ রাজু আহমেদ আবুধাবি সৌদি আরব সীমান্ত এলাকা আল শিলা এলাকায় নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। দূতাবাস হতে তিনিও কৃতি প্রবাসী হিসেবে সম্মানিত হওয়ায় দূতাবাসকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি তার জীবনের গল্প সকলকে জানান এবং অন্যদেরকেও উদ্বুদ্ধ করেন।
এছাড়া ডঃ ফাহিম কে সুফি তার বক্তব্যে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি দক্ষ কর্মী এদেশে পাঠানোর জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে মানব্যর রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানান।
কৃতি প্রবাসী হিসেবে সম্মাননা প্রাপ্ত জনাব ফখরুল ইসলাম নিজের কর্ম জীবনের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
ডাঃ মিসবাহ উদ্দিন আহমেদ ১৯৮৪ সালে এদেশের সরকারি চাকরি নিয়ে আল আইন আল জিমি হাসপাতালে যোগদান করে জীবনের অনেকটা সময় এদেশে কাটিয়ে দেন বলে জানান। তিনি তার দীর্ঘ কর্মজীবনের ঘটনাগুলি সকলের সামনে তুলে ধরেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে তার অবস্থানের জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন। কৃতি প্রবাসী সম্মাননার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি।
এছাড়া ইউনুস মিয়া চৌধুরী সিআইপি সহ আরও অনেকেই বক্তব্য উপস্থাপন করেন। প্রবাসীদের সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশে একটি পৃথক ট্রাইবুনাল করা, পাসপোর্ট এর পুলিশ ভেরিফিকেশনে হয়রানি সহ নানা বিষয় নিয়ে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
রাষ্ট্রদূত দুর্গম এলাকাসহ দূরবর্তী স্থান সমূহে ডায়াসপোরা ফোকাল পয়েন্ট তৈরি করবার বিষয়ে মত প্রকাশ করেন। এছাড়া আগত অতিথিদের বিভিন্ন বক্তব্য থেকে প্রস্তাবনাগুলি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের শেষাংশে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) মোছাঃ লুৎফুন নাহার নাজীম এর সঞ্চালনায় ১০ জন কৃতি প্রবাসীকে মিনিস্টার (শ্রম) আবদুল আওয়াল সহ মান্যবর রাষ্ট্রদূত কর্তৃক সম্মাননা সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। সবশেষে কৃতি প্রবাসীদের নিয়ে গ্রুপ ফটোসেশন শেষে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
এদিকে দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেট প্রবাসী দিবস–২০২৩ দিনটি উপলক্ষে ‘প্রবাসীর কল্যাণ–মর্যাদা আমাদের অঙ্গীকার, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ায় তারাও সমান অংশীদার’–শ্লোগানে প্রবাসী দিবস–২০২৩ পালন করে। এই উপলক্ষে শনিবার আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।দিনটির প্রতিপাদ্যের সঙ্গে মিল রেখে প্রদর্শন করা হয় একটি প্রামাণ্যচিত্র। এর পূর্বে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীদের পাঠানো বাণী পাঠ করেন কনস্যুলেট কর্মকর্তারা। এসময় দুবাই কনসুলেট বক্তব্য রাখেন কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন।
তিনি বলেন, প্রবাসীদের সম্মান প্রদর্শন সরূপ প্রবাসী দিবস উদযাপনের ঘোষণা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। প্রবাসীদের মর্যাদা রক্ষা আমাদের অঙ্গীকার। তিনি আরো বলেন প্রবাসীদের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের অংশীদারত্বের বিষয়টি আরও গুরুত্ব সহকারে আলোচনার দাবি রাখে ৷ প্রবাসীদের অংশীদারত্বকে চিহ্নিত করা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, নানা অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের পরেও প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন৷ সকল অপপ্রচার উপেক্ষা করে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
আলোচনা সভায় প্রবাসীরা বিমানবন্দরে হয়রানি বন্ধসহ নানা দাবি ও অনিয়ম তুলে ধরে সমাধান প্রত্যাশা করেন ৷ শ্রম কাউন্সিলর আব্দুস সালামের সঞ্চালনায় আলোচনায় বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিগণ বক্তব্য অংশ গ্রহণ করেন।
মাহাবুব হৃদয়/ আল/ দীপ্ত সংবাদ