রক্তাক্ত ২১ আগস্ট আজ। বাংলাদেশের ইতিহাসে ২১ আগস্ট এক নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের দিন। বারুদ আর রক্তমাখা বীভৎস ‘রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের’ ১৯তম বার্ষিকী।
বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের এই দিনে মুহুর্মুহু গ্রেনেডের বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে হিংসার দানবীয় সন্ত্রাস আক্রান্ত করে মানবতাকে। আক্রান্ত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেদিন গ্রেনেড হামলার আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের মোট ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন, আহত হন পাঁচ শতাধিক। সেদিন অল্পের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও বিস্ফোরণের শব্দে তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গ্রেনেডের আঘাতে কেউ কেউ আজও ফিরে পাননি স্বাভাবিক জীবন। অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। গ্রেনেডের স্পিন্টারের দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন মৃত্যুর দিকে।
২০০৪ সালের এই দিনে ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি বিরোধী’ শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা ছিলেন প্রধান অতিথি। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরপরই তাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক ১৩টি গ্রেনেড। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে।
স্প্লিন্টারের আঘাতে মানুষের হাত–পাসহ বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে। সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথরদেহ। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ভেসে আসে শত শত মানুষের গগনবিদারী আর্তচিৎকার।
ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্য শেখ হাসিনা বেঁচে গেছেন দেখে তার গাড়ি লক্ষ্য করে ১২ রাউন্ড গুলি করা হয়। তবে টার্গেট করা গুলি বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ি ভেদ করতে পারেনি। হামলার পরই তাকেকর্ডন করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তার তৎকালীন বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদনে।
সেদিন রাজধানীর প্রতিটি হাসপাতালে আহতদের তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। ২১ আগস্টের রক্তাক্ত হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে। আহত হয়েছিলেন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
এই জঘন্যতম হামলার ১৯তম বার্ষিকীতে বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাবনতচিত্তে হামলায় নিহতদের স্মরণ করবে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটি পালনে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
কর্মসূচিগুলো হলো :
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে বেলা সাড়ে ১১টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে। এ ছাড়াও বেলা ১১ টা ১৫ মিনিটে ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ ও নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন।
এসএ/দীপ্ত নিউজ