আগামী মাস থেকে মাসিক ভাতা পেতে যাচ্ছেন চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আহত ‘জুলাই যোদ্ধারা’। একইসঙ্গে আজীবন সরকারি হাসপাতালে বিনা খরচে চিকিৎসা সুবিধা এবং পুনর্বাসনের জন্য নেয়া হচ্ছে বিশেষ কর্মসূচি। সোমবার (২৩ জুন) সচিবালয়ে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম।
তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করতে যেখানে ৫৪ বছর সময় লেগেছে, সেখানে অন্তর্বর্তী সরকার মাত্র ৭–৮ মাসেই জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শহীদ ও আহতদের তালিকা প্রণয়ন করেছে।”
আহত যোদ্ধাদের তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে মাসিক ভাতা দেয়া হবে।
ক্যাটাগরি এ: যারা চিরতরে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন, যেমন উভয় চোখ হারানো বা গুরুতর অঙ্গহানি; তারা মাসে ২০,০০০ টাকা ভাতা ও এককালীন ৫ লাখ টাকা পাবেন।
ক্যাটাগরি বি: যারা আংশিকভাবে চলাফেরায় অক্ষম হয়েছেন (যেমন এক চোখ বা পা হারানো), তাদের ভাতা ১৫,০০০ টাকা এবং এককালীন ৩ লাখ টাকা।
ক্যাটাগরি সি: যারা চিকিৎসার পর বর্তমানে সুস্থ, তারা মাসে ১০,০০০ টাকা এবং এককালীন ১ লাখ টাকা সহায়তা পাবেন।
ফারুক–ই–আজম জানান, এরই মধ্যে ক্যাটাগরি ‘এ’–এর যোদ্ধাদের ২ লাখ টাকা এবং ক্যাটাগরি ‘বি’–এর যোদ্ধাদের ১ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি অর্থ আগামী মাসে পরিশোধ করা হবে।
শহীদ পরিবার পবে এককালীন ৩০ লাখ টাকা:
প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী ৮৩৪ জন ‘জুলাই শহীদ’–এর পরিবারকে এককালীন ৩০ লাখ টাকা করে সহায়তা দেয়া হবে। এরপর ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ইতোমধ্যে ১০ লাখ টাকা জাতীয় সঞ্চয়পত্র আকারে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২০ লাখ টাকা দেয়া হবে আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরে। এছাড়া, প্রতি মাসে শহীদ পরিবারের জন্য ২০,০০০ টাকা ভাতা এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরির সুযোগ থাকবে।
উপদেষ্টা জানান, ১৩৪টি শহীদ পরিবারে ওয়ারিশ জটিলতা থাকায় কিছুটা দেরি হচ্ছে, তবে দ্রুতই তা সমাধান হবে।
পুনর্বাসন অধিদপ্তর চালু:
আহত যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নতুন একটি অধিদপ্তর গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ১০ম তলায় স্থাপিত এই অধিদপ্তরে ২০ জন কর্মকর্তা কাজ করছেন, যার নেতৃত্বে রয়েছেন একজন অতিরিক্ত সচিব।
আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, প্রশিক্ষণ এবং চাকরি সহায়তায় এই অধিদপ্তর কাজ করছে। গুরুতর আহত ৭ জন যোদ্ধাকে ইতোমধ্যে তুরস্কে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। আরও অনেককে থাইল্যান্ডসহ বিদেশে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত:
আন্দোলনের স্মৃতি সংরক্ষণে প্রতি বছর ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস‘ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান সরকার। দিনটিকে ভবিষ্যতে জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করা হবে।
ফারুক–ই–আজম বলেন, “জুলাই যোদ্ধারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জাতি আজীবন তাদের ত্যাগ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।”