হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে মামলার বাদীকে মারধরের ঘটনায় অ্যাসরোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুল ইসলামসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গত (২০ সেপ্টেম্বর) চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপ–পুলিশ ইরফান খান।
এর আগে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের সামনে এই হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে। আলোচিত এই ঘটনায় আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগী পাথর ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম।
তদন্ত কর্মকর্তা ইরফান খান জানান, তদন্তে তিনজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
তারা হলেন— অ্যাসরোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুল ইসলাম, পরিচালক আমির হোসাইন ও তাদের সহযোগী অরুপ রতন সাহা। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার আদালত প্রতিবেদন গ্রহণ করে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন।
আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, বাদী আমিনুল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী। তিনি ও আসামিরা ব্যবসায়িক পার্টনারের কারণে পরস্পরের পরিচিত ছিলেন।
গতবছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাদী তার এক মামলার শুনানিতে অংশ নিতে হাইকোর্ট ভবনের এনেক্স ভবনে যান। একইদিন আসামি আসাদুল ইসলাম ও আমির হোসেন বাদীর করা জাল–জালিয়াতির মামলায় আগাম জামিন নিতে আদালতে যান।
তদন্তে উঠে এসেছে, এদিন বিকাল আনুমানিক ৩টা ৪৫ মিনিটে এনেক্স ভবনের দ্বিতীয় তলায় অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সামনে বাদীকে দেখে আসামীরা তাদের সঙ্গে থাকা আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী নিয়ে ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলামের ওপর আক্রমণ করে। এসময় তাদের উপর্যুপরি মারধরে বাদী আমিনুল ইসলাম গুরুতর জখম হন। ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত আইনজীবীরা ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করেন; পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ডিবি পুলিশের তদন্তে আরও বলা হয়, ঘটনাস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় ঘটনার কোনো ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়নি। তবে সাক্ষ্যপ্রমাণ, ডাক্তারি সনদপত্র ও প্রকাশ্য তদন্তে পেনাল কোডের ৩২৩ ও ৫০৬ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ১৬ অক্টোবর ডিবি পুলিশের প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন আদালত। এরইমধ্যে তিন আসামির বিরুদ্ধে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত সমন জারি করে।
মামলার বাদী আমিনুল ইসলাম জানান, প্রায় ১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও জাল–জালিয়াতির অভিযোগে অ্যাসরোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন তিনি। ওই মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি অর্থ আত্মসাৎতের প্রমাণ পায়। পরে সংস্থাটি আদালতে প্রতিবেদন দেয়। সেই মামলায় আদালত আসাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও শামীম ওসমানের প্রভাবে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি। তখন আসামিদের হয়ে মামলা লড়তেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। শুধু তাই নয়, আসামিরা একাধিকবার মহামান্য হাইকোর্টের সঙ্গে জামিন নিয়ে প্রতারণা করেছে।
আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আসামীরা এতটাই চতুর যে, আমার আত্মসাৎ করা টাকা দিয়ে কামরুল ইসলামের মতো ক্ষমতাধরদের ব্যবহার করে অপরাধ করে চলছে। এখন একটি বড় রাজনৈতিক দলের আইনজীবীকে দিয়ে মামলা লড়ছেন।’
আমিনুল ইসলাম দাবি করেন, ডিবির তদন্ত প্রতিবেদনে আসামিরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে নানা ভাবে গুম ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আসামিরা আমাকে ঘায়েল করতে ষড়যন্ত্র করছে। তারা আমাকে প্রাণেও মেরে ফেলতে পারে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে আমি ও আমার পরিবারের আতঙ্কে রয়েছি।’