বিদ্যায়টির একতলা ছোট ভবনের ভিম ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পাশের বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের টিনশেড একটি ঘরে চলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। অপর ছোট একটি ভবন থাকলেও সেখানে দুটি ছোট কক্ষে গাদাগাদি করে ক্লাশ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। মাঝেমধ্যে মাঠেও ক্লাস নেওয়া হয়। শ্রেণিকক্ষ–সংকটের কারণে বিদ্যালয়টিতে ব্যাহত হচ্ছে শিশুদের লেখাপড়া। আছে শিক্ষক–সংকটও। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মুলজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।
খোঁজ নিয়ে এবং বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা শহরের অতিকাছের দীঘি ইউনিয়নের মুলজান এলাকায় বিদ্যালয়টির অবস্থান। ১৯৭৩ সালে ৩৩ শতক জমিতে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টি বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬০। বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষকসহ আটটি পদ থাকলেও একটি পদ শূণ্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
শিক্ষকেরা জানান, বিদ্যালয়ে ছোট ছোট একতলা তিনটি ভবন রয়েছে। ২০০০ সালে নির্মিত এক কক্ষের এক নম্বর ভবনটির ভিম ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সেখানে দুই শিফটে প্রাক–প্রাথমিক ও তৃতীয় শ্রেণির পাঠদান করা হতো। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তৎকালীণ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। সেখানে পাঠদান বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেন। এর পর থেকে বিদ্যালয়ের পাশে মিল্ক ভিটা নামের দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ একটি প্রতিষ্ঠানে টিনশেডের একটি ঘরে কোনো রকমে পালাক্রমে প্রাক–প্রাথমিক ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের দুই নম্বর ভবনেও একটি কক্ষ। এই কক্ষেই বিদ্যালয়ের অফিস কার্যালয় ও শিক্ষকদের মিলনায়তন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আর তিন নম্বর এক তলা ভবনটিতে দুটি কক্ষে প্রথম শিপটে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং দ্বিতীয় শিপটে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয়। এ কক্ষ দুটির পরিসর ছোট হওয়ায় গাদাগাদি করে শিশুদের বসতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনটির কক্ষের ভিম ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। পলেস্তারা খসে পড়ায় ভিমের লোহার রড বের হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের দক্ষিণপাশের বেসরকারি ওই প্রতিষ্ঠানে টিনশেড পুরাতন ঘরে শিশুদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছিল। তাছাড়া অল্প জায়গায় তিনটি পৃথক ভবন হওয়ায় ঘিঞ্জি পরিবেশে শিশুদের বিদ্যালয়ে সময় কাটছে।
এই ঘরে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছিলেন সহকারী শিক্ষক লাইলী আক্তার। তিনি বলেন, এক নম্বর ভবনটির ভিম ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। শ্রেণি–সংকটের কারণে এই অবস্থাতেও সেখানে ক্লাস নেওয়া হয়। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পরিবর্তীতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের এই ঘরে প্রাক–প্রাথমিক ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করা হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির জয় সূত্রধর ও লিথি আক্তার এবং চতুর্থ শ্রেণির কথা সূত্রধর ও মিঠুন হাসানসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, ছোট ছোট কক্ষে গাদাগাদি করে শিশুদের ক্লাস করতে হয়। বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানায় শিশুরা।
শ্রেণি–সংকটে শুধু অন্য প্রতিষ্ঠানের ঘরেই নয়, মাঝেমধ্যে মাঠেও ক্লাস নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভিন আখতার। তিনি বলেন, ২০২০ সালে নতুন ভবন নির্মাণের তালিকায় তাঁর বিদ্যালয়ের নাম আসে। নতুন ভবন নির্মাণের জায়গা নির্ধারণ করে মাটি পরীক্ষাও (ছয়েল টেস্ট) করা হয় দুইবার। সদর উপজেলার তালিকাভূক্ত অনেক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ হলেও তাঁর বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণের কাজ হয়নি।
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শ্রেণিকক্ষ–সংকট পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত আবেদনও করেছেন।
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. সলিম উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ অনুমোদন হয়েছে বলে জেনেছেন। বিদ্যায়ের ভবন নির্মাণ করা হলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানসহ অন্যান্য সমস্যা কেটে যাবে।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বিদ্যায়টির ভবন নির্মাণে সম্প্রতি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, বিদ্যায়টির ভবন নির্মাণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে যাচাইবাছাইয়ের কাজ চলছে। দ্রুত সময়ে মধ্যে তা চূড়ান্ত করা হবে। এর পর ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
জাহিদুল চন্দন/ আল/ দীপ্ত সংবাদ