শুধু পেটের তাগিদে নয় জীবন বাঁচাতে রাজশাহীর মনিরুজ্জামান সেন্টু শ্বাসকষ্টের ব্যাধি থাকায় গত ২ মাস থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়েই রিকশা চালান। তার এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার দায়িত্ব নিলেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক।
২০১৫ সালে রাজশাহী মহানগরীর হেতমখাঁ এলাকার ফুটপাতে শ্বাসকষ্ট সমস্যা নিয়ে মাইনুরজ্জামান সেন্টুর ছিলো ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান। তবে দোকানটি উচ্ছেদের পর দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। ২০১৬ সালে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এবং ধার দেনা করে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে অটোরিকশা কেনেন। রিকশাটা পরবর্তিতে চুরি হয়ে গেলে আবারও ঋণ নিয়ে রিকশা কিনেন তিনি। বর্তমানে তার দুই এনজিওতে ঋণ রয়েছে।
গত ৭ বছর থেকে চিকিৎসার ব্যয় ও সংসারের খরচ মেটাতে চালাচ্ছেন রিকশা। এরিমধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত দুই মাস থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রিকশায় বেঁধে ভাড়া মারতেন তিনি। পরে তার এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়।
বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১২ নম্বর বেডে রেখে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের আওতায় রাখা হয়েছে। গত দেড় মাসে ব্যক্তিগত খরচে কেনা অক্সিজেন সংকটে পড়ে তিনবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।
অর্থবিত্ত হীন ৫৫ বছর বয়সী সেন্টুর নিজের জায়গা জমি নেই। গত সাত বছর ধরে রিকশা চালান, স্ত্রী চম্পাকে নিয়ে থাকেন হেতেমখাঁ কলাবাগান এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে। দুই মেয়ে এক ছেলেসহ তিন সন্তানের সবাই বিয়ের পর আলাদা হয়ে গেছেন। তাই রোজগারের সঙ্গে সঙ্গে জীবন বাঁচাতে অক্সিজেন আর ওষুধ কিনতে রিকশা নিয়ে তাকেই রাস্তায় নামতে হচ্ছে। কিন্তু এখন আর অসুস্থ শরীর কুলচ্ছে না। গত তিন বছর থেকে প্রতিদিন নিয়ম করে তিনটি অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন হয় তার। ওষুধপত্র মিলিয়ে ছয়শত টাকারও বেশি খরচ হয় প্রতিদিন।
সেন্টু অনেক অসুস্থ হলেও কারো কাছে সাহায্যে বা ভিক্ষা করতে দেখা যায়নি, নিজেই কর্মকরে জীবন চালাতে চেয়েছেন। তার দীপ্ত মানসিকতা দেখে আমি অবাক, তাকে হাসপাতালের পক্ষে থেকে সকল ধরনের পরীক্ষা–নিরিক্ষা ফ্রি করে দেবো।
সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে তাকে আর রিকশা চালাতে হবে না, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অন্য কর্মস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। ভিক্ষাবৃত্তি বা কারো কাছে হাতপেতে বেঁচে থাকার মতো নিন্দনীয় জীবন চান না সেন্টু, জীবন সংগ্রামে নিজে কর্মকরে বেঁচে থাকতে চান তিনি।
আল/দীপ্ত সংবাদ