ইন্দোনেশিয়ার জাভায় একটি ফুটবল স্টেডিয়ামে খেলার ফলাফল নিয়ে দাঙ্গার সময় পদদলিত হয়ে শতাধিক লোকের মৃত্যুর পর পুলিশের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছে জনগণ। পুলিশের মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের কারণে এ ট্র্যাজেডি ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। এ বাহিনীর ৯ কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সোমবার ইন্দোনেশিয়ার নিরাপত্তা মন্ত্রী মাহফুদ এমডি বলেন, সেদিন কী ঘটেছিল তা তদন্ত করে দেখতে সরকার একটি স্বাধীন তথ্যানুসন্ধান টিম গঠন করবে। এতে শিক্ষাবিদ, ফুটবল বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তারাও থাকবেন। তিনি জানান, এ শোচনীয় ঘটনার জন্য কে দায়ী তা বের করার জন্য এ দলটি আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে তদন্ত চালাবে।
এ দুর্ঘটনায় নিহত ১২৫ জনের মধ্যে ৩২ শিশু রয়েছে বলে দেশটির নারী ক্ষমতায়ন ও শিশু সুরক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা নাহার জানিয়েছেন। নিহত শিশুদের বয়স ৩ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে বলে জানিয়েছেন তিনি। ইন্দোনেশিয়ার ফুটবলে অনেকদিন ধরেই গুন্ডামি ও সহিংসতা চলে আসছে।
দাঙ্গার মধ্যে পদদলিত হয়ে নিহত আহমাদ চাহিও (১৫) ও মুহাম্মদ ফারেলের (১৪) বড় বোন এন্দাহ ওয়াহিউনি বলেন, ‘এমন পরিণতি ঘটবে তা আমি ও আমার পরিবার ভাবতেই পারিনি। তারা ফুটবল খেলা পছন্দ করত, কিন্তু কখনোই কানজুরুহান স্টেডিয়ামে গিয়ে সরাসরি আরেমার খেলা দেখেনি। এই প্রথম তারা খেলা দেখতে গিয়েছিল।’ ইন্দোনেশিয়ার দৈনিক কোরান টেম্পো সোমবার তাদের প্রথম পৃষ্ঠা পুরোটা কালো রেখে মাঝখানে লাল অক্ষরে ‘আমাদের ফুটবল ট্র্যাজেডি’ লিখে সঙ্গে নিহতদের একটি তালিকা দিয়েছে।
শনিবার রাতে আরেমা এফসি ও পারসেবায়া সুরায়া ক্লাবের ম্যাচ শেষে দাঙ্গা ও পদদলনের ঘটনা ঘটে। ইন্দোনেশিয়ার লিগা ওয়ানের ম্যাচটি ৩-২ গোলে জেতে পারসেবায়া। দুই দশকের বেশি সময় পর পারসেবায়ার কাছে হারায় আরেমার সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে মাঠে ঢুকে পড়ে দাঙ্গা শুরু করলে তাদের হটাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এ সময় আতঙ্কিত দর্শকরা স্টেডিয়ামটি থেকে একযোগে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পদদলনের ঘটনা ঘটে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেছেন, সমর্থকরা বিশৃঙ্খলা শুরু করলে পুলিশ লাগাতার অসংখ্য টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে। জনগণ পুলিশ কর্মকর্তাদের ‘খুনি’ বলে স্লোগান দিচ্ছে।
পুলিশের মুখপাত্র দেদি প্রসেতিও সাংবাদিকদের বলেছেন, এ বাহিনীর তদন্তাধীন কর্মকর্তারা অবৈধভাবে অস্ত্র ধারণ করছিলেন কিনা তা নিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ দল তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তিনি বলেন, মাঠের নিরাপত্তা টিমসহ আরও বেশ কয়েকজন এবং দেশটির ফুটবল লিগের কিছু কর্মকর্তাও তদন্তের আওতায় রয়েছেন।
ইন্দোনেশিয়ার মানবাধিকার কমিশন বলেছে, এ বিপর্যয়ের বিষয়ে তারাও নিজস্ব তদন্ত পরিচালনা করবে। প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো বলেছেন, আনুষ্ঠানিক তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষ লিগের সব ম্যাচ বন্ধ থাকবে।
বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা ফিফা এই ঘটনাকে ‘জড়িতদের সবার জন্য একটি অন্ধকার দিন’ বলে আখ্যা দিয়েছে। এ ঘটনায় ইন্দোনেশিয়ার ফুটবল কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রতিবেদন চেয়েছে তারা। আরেমা এফসির সভাপতি গিলান উইদা প্রমাণা কান্নাজড়িত কণ্ঠে পদদলিত হয়ে নিহত ও আহতদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এবং এই বিপর্যয়ের সব দায় গ্রহণ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন ফুটবল থেকে জীবনের দাম অনেক বেশি। সূত্র : বিবিসি, আলজাজিরা ও রয়টার্স।