রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি
রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

পাঁচটা গাড়ি এসেছে একবারে লাশ ধোয়াতে…

দীপ্ত নিউজ ডেস্ক
4 minutes read

প্রথমে দেখলাম একটা গাড়ি। লাশবাহী। পরে দেখি দুইটা। ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম, গাড়ি আসলে চারটা। চারটাই লাশবাহী। আরো দুই কদম এগিয়ে দেখা গেলো, চারটা গাড়ির পেছনে আছে আরো একটা গাড়ি। সেটিও লাশবাহীই। তাকওয়া মসজিদের পেছনে। ঘাটলার পাড়ে। এতো লাশ একবারে ধোয়াতে এনেছে!

মনে কামড় দিলো। দুইজন মানুষ অন্য অনেকের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। জিজ্ঞেস করলাম, এগুলো কি গতকালকের আগুনের ঘটনা? হ্যাঁ। আগুনের শিকার। এক পরিবারের পাঁচজন। পুরো পরিবার। বাবামা আর তাদের তিন সন্তান। সবাই শেষ। এক সাথে। ওরা কাচ্চি ভাইয়ে খেতে গিয়েছিলো। তাকওয়ার পেছনে আমার যে দুজনের সাথে কথা হচ্ছিলো, তাদের একজন এই নিহত পরিবারের বাবার বড় ভাই। ওদের বাসা মগ বাজার। বাসার কেউ জানতো না যে, ওরা কাচ্চি ভাইয়ে খেতে গিয়েছিলো। অনেক রাত হয়ে গেছে। ওরা বাসায় ফিরছে না। ফোন ধরছে না। আবার এইদিকে আগুনের ঘটনা। এইসব কারণে বড় ভাই ও পরিবারের লোকজন নিখোঁজ সদস্যদের  খুঁজতে যান ঢাকা মেডিকেলে। সেখানেই পাওয়া গেছে পাঁচজনকে। বাবামা আর তাদের তিন সন্তান।

খুব ছোটোবেলায় কিশোরগঞ্জে আমাদের সীমান্ত গোরস্থানে দেখেছিলাম ট্রাক ভরা লাশ। সম্ভবত এগারোটা, বড়দের মুখে শুনেছিলাম। তাদের মুখ ছিলো থমথমে। গোলাগুলির ঘটনা ছিলো একটা। বিরাট সাড়াতাড়া পড়েছিলো দেশে। মনে হয়, আশির দশকের এক্কেবারে শেষে বা নব্বইয়ের শুরুর দিকের ঘটনা। আমি তখন খুব ছোটো। মানে দেয়ালের ওইপাড়ে দাঁড়িয়ে এই পাড়ে দেখতে পারি না। পাড়ার পোলাপানের সাথে গোরস্থানের ওয়ালে উঠে লাশ কবরে নামানো দেখেছিলাম।

পৃথিবীতে কেয়ামত নিত্য বর্তমান। কখনো তা একার, কখনো তা গোত্র ধরে। আবার কখনো তা ডাইনোসরের মতন প্রজাতি শেষ করে অশেষ ধুলোর আস্তরনে সূর্য ঢেকে দিয়ে বরফ যুগ নামিয়ে আনার মতন সমবেত কেয়ামত বটে। এই পৃথিবীর ইতিহাস তো কেয়ামতেরও ইতিহাস। এক প্রবাসী বন্ধুর সাথে দেখা করে সকালে নাশতা খেয়ে লেকের ভেতর দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে গিয়ে পথে পড়লো তাকওয়ার ঘাটলায় স্থির হয়ে থাকা এক কেয়ামতের দৃশ্য। চোখ ছলছল সেই বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলতে গিয়ে আমার কান্না ঠেলে উৎলে আসছিলো দেখে আর কোনো প্রশ্ন না করে কয়েক সেকেন্ড বোবা থেকে হঠাৎ মুখ ঘুরিয়ে আমি হাঁটার ভঙ্গি করলাম।

উনারা দুজনকেও পেছন থেকে কেউ ডাকলে তারাও ওইদিকে সাড়া দিলেন। কেয়ামতের ভার বুকে নিয়ে বোবা হয়ে আছে ধানমণ্ডি লেকের দুপুর। লেকের জলে, পলাশ ফুলে, বসন্ত বউরির ডাকে ঝিরিঝিরি হাওয়ায় খানিক হেঁটে ঘোর গ্রস্থের মতন আমি বসে আছি হিজল গাছের নিচে।

লেখকগণমাধ্যমকর্মী, কবি ও লেখক

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More