বুধবার, ১৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
বিজ্ঞাপন
বুধবার, ১৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ত্রাণের ৯ কোটি টাকা কেন ব্যাংকে রেখেছেন সমন্বয়করা?

দীপ্ত নিউজ ডেস্ক
12 minutes read

সাম্প্রতিক বন্যায় আক্রান্তদের সাহায্যার্থে টিএসসিতে গত ২২ আগস্ট গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচির তহবিলে প্রায় ১১ কোটি ১০ লাখ টাকা জমা পড়েছিল। এর মধ্য থেকে এখন পর্যন্ত বন্যার্তদের সহায়তায় খরচ হয়েছে প্রায় এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অবশিষ্ট প্রায় নয় কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে। কিন্তু এসব টাকা ব্যাংকে কেন সেই প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

সাম্প্রতিক বন্যায় আক্রান্তদের সাহায্যার্থে গণত্রাণ সংগ্রহের ঘোষণা দিয়ে ব্যাপক সাড়া পেয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অসংখ্য মানুষকে তখন ট্রাকভরে ত্রাণের মালামাল নিয়ে সমবেত হতে দেখা গিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি)

ত্রাণ তহবিলে জমা পড়া এসব অর্থ বন্যার্তদের সহায়তায় ঠিকঠাক ব্যবহার হচ্ছে কি না, সেটি নিয়ে গত কিছুদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ধরনের আলোচনা চলছিল। এরই মধ্যে আলোচনায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে যখন শনিবার সমন্বয়কদের বার্তা থেকে জানা গেছে যে, সংগৃহীত অর্থের বেশিরভাগই অব্যবহৃত অবস্থায় ব্যাংকে পড়ে রয়েছে।

ব্যয় বাদে বাকি টাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক শাখা, ইসলামী ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সংরক্ষিত রয়েছে,” শনিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টের একটি পোস্টে উল্লেখ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

মূলত এই পোস্টের পরেই ত্রাণ তহবিলের টাকার আয়ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন মহলে চলছে নানান আলোচনাসমালোচনা। বন্যার্তদের নামে টাকা তুলে কেন সেটি তাদের সহযোগিতায় ব্যয় করা হলো না, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার “অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা হচ্ছে” বলেও অভিযোগ তুলছেন।

জানা গেছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১১টি জেলার মানুষের জন্য টিএসসিতে গত ২২ আগস্ট গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু করেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পরবর্তী দুই সপ্তাহে ওই তহবিলে প্রায় ১১ কোটি ১০ লাখ টাকা জমা পড়েছিল। এর মধ্য থেকে এখন পর্যন্ত বন্যার্তদের সহায়তায় খরচ হয়েছে প্রায় এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অবশিষ্ট প্রায় নয় কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

এছাড়া খাবারদাবারসহ অন্যান্য যত প্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহ হয়েছিল, প্রায় ১৯১টি ট্রাকে করে সেগুলো বন্যাদুর্গত এলাকায় নিয়ে বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। চলতি মাসের শুরু দিকে দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় গত চৌঠা সেপ্টেম্বরের পর নতুন করে আর গণত্রাণ সংগ্রহ করা হয়নি বলেও প্লাটফর্মটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সরকারি হিসেবে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যায় প্রায় ৫৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে আক্রান্ত এলাকার কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত। বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অসংখ্য বাড়িঘর। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর এখন নতুন সংকট হিসেবে সামনে এসেছে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। দুর্গত এলাকায় শিশুসহ অসংখ্য মানুষ ডায়রিয়াসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, যাদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। কোনো কোনো এলাকায় খাবার স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের সংকটের কথাও শোনা যাচ্ছে।

অথচ আমাদের সমন্বয়করা ওইসব মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে ত্রাণের টাকা ব্যাংকে রেখে দিয়েছেন,” ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিলয় মাহফুজ।

তিনি বলেন, নিজে ত্রাণ তহবিলে অর্থ দিয়েছি। পরিবারসহ পরিচিতজনদেরও ত্রাণ কাজে সহায়তা করতে উদ্বুদ্ধ করেছি। তখন যারেই এই কাজে পার্টিসিপেট করতে অনুরোধ করছি, কেউই না করে নাই। যে যেভাবে পারছে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এতকিছু করে লাভটা হলো কী? এই টাকা কি ব্যাংকে ফেলে রাখার জন্য তোলা হইছে?

একই প্রশ্ন তুলেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মাসুমা আক্তার। হতাশা জানিয়ে তিনি বলেন, “সত্যি কথা বলতে, খবরটা শুনে আমি খুব হতাশ হয়েছি, কষ্ট পেয়েছি। কারণ টিএসসিতে ত্রাণ জমা দিতে গিয়ে ওই ছেলেমেয়েদের যে কর্ম উদ্দীপনা আমি নিজের চোখে দেখেছি, তাতে ভেবেছিলাম এদের হাতে ধরে ভালো কিছু হবে। কিন্তু তারা যে কেন ত্রাণের টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ না করে ব্যাংকে ফেলে রাখলো, সেটাই মিলাইতে পারতেছি না।

এদিকে, তহবিলের টাকাটা ব্যাংকে আছে কি না, সেটাই নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেছেন কেউ কেউ।

চারিদিকে এখন যেভাবে সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ধান্ধাবাজির অভিযোগ শুনতেছি, তাতে তো টাকাটা আদৌ ব্যাংকে আছে কি না, সেটাই আমার সন্দেহ লাগতেছে,” বলেন ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম।

বিভিন্ন জেলায় গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা যেসব সভাসমাবেশ করছেন, সেটি ঘিরেও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ত্রাণের টাকার হিসাব চেয়ে পোস্ট করছেন অনেকে।

পই পই করে ত্রাণের টাকার হিসাব নিবো ভাইয়া,” নিজের অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন অভিনেতা ও নাট্য নির্দেশক দীপক সুমন।

তবে বন্যার্তদের সহযোগিতার উদ্দেশে গঠিত ত্রাণ তহবিলের যে নয় কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যাংকে রাখা হয়েছে, সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে জানাচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।

প্ল্যাটফর্মটির অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “ত্রাণ সহায়তার জন্য যত অর্থ আমরা পেয়েছি, সেগুলোর প্রতিটি পয়সার হিসাব আমাদের কাছে আছে। কাজেই এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।”

প্রাথমিক ত্রাণ কার্যক্রমে খরচের পর তহবিলের বাকি অর্থের বেশিরভাগই জমা রাখা হয়েছে জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখায়। চাইলেও সেগুলো কেউ আত্মসাৎ করতে পারবে না বলে জানান হাসনাত আব্দুল্লাহ।

তিনি বলেন, সেগুলো বিশেষভাবে খোলা হয়েছে, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকও যুক্ত রয়েছেন। তিনিসহ আরও দুইজনের সম্মিলিত সিগনেচার ছাড়া কেউ টাকা তুলতে পারবে না। আমরা ত্রাণ কার্যক্রমের আয় ও ব্যয়ের ওপর একটি অডিট করছি এবং আগামী কয়েকদিনের মধ্যে অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। সিএ ফার্মের প্রফেশনাল ব্যক্তিদের দিয়েই নিজ দায়িত্বে এটা আমরা করছি, যাতে পরবর্তীতে কেউ কোনো অভিযোগ বা অপবাদ দিতে না পারে।

প্লাটফর্মের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জেলায় যত সভাসমাবেশ হচ্ছে, সেগুলোতেও ত্রাণের কোনো অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে না বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।

কেউ যদি দেখাতে পারে যে, আমরা ত্রাণ তহবিলের কোনো টাকা অন্যকাজে ব্যবহার করছি, তাহলে যা শাস্তি দেওয়া হবে, বিনাবাক্যে সেটা মাথা পেতে নেবো,” বলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।

ব্যাংকে টাকা রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, “তহবিল সংগ্রহের শুরুতেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, অর্থ সংগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে সব খরচ না করে বেশিরভাগই জমা রাখা হবে। কারণ আগের অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা জেনেছি যে, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরবর্তী ধাপে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর অর্থ সহায়তা বেশি প্রয়োজন হয়।

তিনি বলেন, আরও আগে থেকেই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর নির্মাণসহ অন্য কাজগুলো করে দেওয়ার কথা ভাবছিলাম, কিন্তু আয়ব্যয়ের অডিট কমপ্লিট না হওয়ায় সেটা সম্ভব হচ্ছিল না। নিরীক্ষা শেষ করে শিগগিরই তহবিলের সব অর্থ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সরকার যে তহবিল গঠন করেছে, সেখানেই টাকাগুলো দেওয়া হবে। এর ফলে সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবেই আমাদের তহবিলের অর্থ মানুষের কাজে আসবে বলে আশা রাখি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা।

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More