শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

একাদশ শ্রেণীর ভর্তিতে বাড়তি টাকা আদায়, কর্তৃপক্ষের দাবি ‘বিবিধ ফি’

দীপ্ত নিউজ ডেস্ক
10 minutes read

মানিকগঞ্জের সেরা বিদ্যাপীঠ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজে একাদশ শ্রেণীর ভর্তিতে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের দাবি ‘বিবিধ ফি’।

মানিকগঞ্জের সেরা বিদ্যাপীঠ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ। কলেজে একাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে এসেছেন মো. নাহিদুল ইসলাম। ভর্তির সকল কাগজপত্র কলেজে জমা দেওয়ার আগে বোর্ড নির্ধারিত টাকা অনলাইনে জমা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু কাগজপত্র জমা দিতে এসে দেখেন তিনশো ত্রিশ টাকা পরিশোধ না করলে আবেদন ফরম জমা নিচ্ছেন না কলেজ কর্তৃপক্ষ।

ভর্তি হতে আসা সব বিভাগের শিক্ষার্থীরাই এ টাকা নগদ হাতে হাতে পরিশোধ করছেন। সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের নিচ তলায় এমন চিত্র দেখে নাহিদুল ইসলামও তিনশো ত্রিশ টাকা পরিশোধ করে ভর্তির সকল কাগজপত্র জমা দিলেন তিনি। নাহিদুল ইসলামের মতো শত শত শিক্ষার্থী এ টাকা দিচ্ছেন। দেবেন্দ্র কলেজে একাদশ শ্রেণীতে তিন বিভাগে শিক্ষার্থীদের আসন সংখ্যা আঠারোশো ৫০ জন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তিনশো ত্রিশ টাকা আদায় করলে টাকার পরিমান দাড়ায় ছয় লাখ দশ হাজার পাঁচশো টাকা।

সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, ডিজিটাল হাজিরা পরিচালন ব্যয়, একাডেমিক ক্যালেন্ডার, কলেজ ব্যাচ,আইডি ফরম ও অন্যান্য খাতে এ টাকা ব্যয় করা হবে। শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে বিবিধ ফি আদায়ের রসিদ। অভিভাবকদের ভাষ্য, ডিজিটাল যুগে ভর্তি আবেদনের টাকা অনলাইন পদ্ধতি নেওয়া হচ্ছে। তাহলে কলেজ কেন নগদে টাকা নিচ্ছে? এদিকে শহরের সরকারি মহিলা কলেজও একই কায়দায় শিক্ষার্থী প্রতি নেওয়া হচ্ছে দেড়শো টাকা। তবে দেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকার রসিদ।

ওই দুই কলেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪২৫ শিক্ষাবর্ষে মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের একাদশ শ্রেণীতে মানবিক শাখায় ৮২৫জন, ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৬০০ এবং বিজ্ঞান শাখায় ৪২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। সরকারি মহিলা কলেজে মানবিক বিভাগে এক হাজার, ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় আড়াইশো ও বিজ্ঞান শাখায় আড়াইশো শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে।

সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের মানবিক শাখার শিক্ষার্থী এনি আক্তার বলেন, বোর্ড নির্ধারিত টাকা ব্যাংকে জমা দিয়েছি। এখন ভর্তি হতে এসে জানতে পারলাম তিনশো ত্রিশ টাকা দিতে হবে। এক বান্ধবীর কাছ থেকে দুইশো টাকা ধার করে জমা দিয়ে ভর্তি হয়েছি।

মানিকগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থী আয়শা আক্তার জানান, ব্যাংকে নির্ধারিত টাকা জমা দিয়ে কলেজে ভর্তি হতে এসে জানতে পারলাম প্রসপেক্ট ও ফরমের জন্য ১৫০ টাকা দিতে হবে। সব শিক্ষার্থী দিচ্ছে তাই আমিও ১৫০ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছি।

জুলেখা আক্তার নামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, বোর্ড যে টাকা নির্ধারণ করেছে তার বাইরে তিনশো ত্রিশ টাকা দেওয়া কতটুকু যুক্তিসংগত এটা ভেবে দেখতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে এমন বিষয়ে অনিয়মের অভিযাগ উঠলে তা শিক্ষার্থীদের মনে প্রভাব ফেলতে পারে।

এ বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিমের সাথে কলেজে তার কক্ষে যোগাযোগ করেন। তার অফিসে কথা হলে তিনি জানান, একাডেমি কাউন্সিল সভায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিনশো ত্রিশ টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গনমাধ্যমকর্মীরা ওই সিদ্ধান্তপত্র দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি। তবে পরে দেখানো যাবে বলে জানান তিনি। একাডেমিক কাউন্সিল সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত টাকা কোন কোন খাতে খরচ হবে তা জানতে চাইলেও তিনি জানাতে পারেননি।

পরে তিনি ভর্তি কমিটির সাথে জড়িত শিক্ষকদের তার কক্ষে ডেকে নিয়ে আসেন। ভর্তি কমিটির সদস্য রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ডক্টর মো. মাহাফিল খান, অর্থনীতি বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক আহামুদুল্লাহ ও গণিত বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক বায়জিদ হাসানের কাছে তিনশো ত্রিশ টাকা কোনো খাতে কত টাতা নেওয়া হচ্ছে তার হিসাব চাওয়া হলে ওই শিক্ষকরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একটি হিসাব দেখান। এতে তিনশো ত্রিশ টাকার হিসাব দেখানো হয় পাঠ পরিক্রমা ৫৮ টাকা, আইডি ফরম ৩ টাকা, রিসিট ২ টাকা, ডিজিটাল আইডি কার্ড ৮৫ টাকা, ডিজিটাল মেশিন ৬০ টাকা ও দুই বছরের শিক্ষার্থীদের এসএমএস ১২২ টাকা। কিন্তু সবগুলো খাত যোগ করা হলে তাতে দেখা যায় ৩৩৩ টাকা হয়। খরচের খাত বেশী হওয়ার প্রসঙ্গে ওই শিক্ষকরা জানান এটা কম বেশী হতে পারে। তাই আইডিয়া করে হিসাব করা হয়েছে।

সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ আদায়কৃত দেড়শো টাকার একশো টাকা ফরম,ব্যাচ,হোল্ডার,প্রসপেক্ট,চকলেট ও ফুলের তোড়ায় খরচ হবে। আর বাকি ৫০ টাকা ডিজিটাল আইড কার্ডে খরচ হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মো. রিজাউল হক বলেন, এ ধরনের ফি নিতে বোর্ড কোন নির্দেশনা দেয়নি। কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল ফি নিতে পারেন। তবে তার স্বচ্ছতা থাকা উচিত। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যাতে পরিষ্কার জানতে পারেন কি কারনে টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে ধালাওভাবে টাকা আদায় করা ঠিক নয়। বিষয়গুলো নিয়ে বোর্ড সভায় আলোচনা করা হবে। নির্ধারিত ভর্তির টাকা যখন ব্যাংকে জমা দেওয়া হয় তখন এই টাকা না নিয়ে কেন নগদে কলেজ কর্তৃপক্ষ নিচ্ছেন এমন বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে যোগদান করেছি। এ বিষয় নিয়ে যাতে কোন প্রশ্ন না উঠে সে বিষয়ে কাজ করবো। কেউ যদি নিয়মের বাইরে কোন অর্থ আদায় করেন তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চন্দন/ / দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More