রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

নওগাঁয় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বেচা-কেনার মহোৎসব চলছে

দীপ্ত নিউজ ডেস্ক
5 minutes read

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পেরবাড়ি বেচাকেনার অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, উপজেলার একডালা ইউনিয়নের ডাকাহার চৌধুরীপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বেচাকেনার অভিযোগ পাওয়া যায়। শুধু ডাকাহার আশ্রয়ণ প্রকল্পেই নয় উপজেলার অন্যান্য প্রকল্পেও এমন ঘটনা ঘটছে।

বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) উম্মে তাবাসসুম বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে জানান ইউএনও।

২০২১২২ অর্থ বছরে উপজেলার একডালা ইউনিয়নের ডাকাহার চৌধুরীপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে কয়েক দফায় ৫৯টি ঘর নির্মাণ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে নির্মাণ করা হলেও প্রকল্পের অধিকাংশ ঘরই অনৈতিকভাবে এমন ব্যক্তিদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে; যাদের জমি ও বাড়ি উভয়ই আছে। ঘর বরাদ্দ পাওয়া সুবিধাভোগীরা নিজের জমি ও বাড়ি থাকায় সেখানে বসবাস না করে উদ্বোধনের কিছুদিন পর হতে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ঘরবেচা শুরু করেন। অনেকে যারা বৈধ উপায়ে ঘর পাননি তারা নিরূপায় হয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে প্রকল্পে বসবাসরত কতিপয় দালাল ও প্রকল্প অফিসের দালালদের মাধ্যমে ঘর কিনে বসবাস করছেন।

আবার অনেকে অল্প দামে ঘর কিনে রেখেছেন; ভবিষ্যতে বেশি দামে বিক্রির আশায়। আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বেচাকেনার মহোৎসব চলছে।

ঘর না পাওয়া স্থানীয়রা জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১ নং ঘর বিক্রয় করেন মো. বেনো হোসেন। আর কিনে নেন আজিজার। ৩৫ নং ঘর বিক্রয় করেন মো. ফকরুল। ডাকাহার গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে ইউনুছ আলী ঘরটি কিনে নেন। একই ঘর আবার ইউনুছ আলী বিক্রয় করেন দুলালের কাছে। ৩৭ নং ঘর আলম বিক্রয় করেন শরিফুলের কাছে।

ডাকাহার গ্রামের ছলিম উদ্দীনের নিজস্ব জমি থাকার পরও বাপছেলে দুটি ঘর বরাদ্দ পেয়েছে। এছাড়াও তারা আরও দুটি ঘর বিক্রয়ের জন্য ক্রয় করে রেখেছেন। রহমান কবিরাজের কংক্রিটের বাড়ি থাকা সত্বেও আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুটি ঘর কিনে রেখেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা জানান, প্রকল্পের সমবায় সমিতির সহসভাপতি হাছিন আলীর গ্রামে জমি ও বাড়ি থাকার পরও তার মা হাসিনা বেগমের নামে একটি ঘর, নিজের নামে একটি ঘর ও স্ত্রীর নামে একটি ঘরসহ মোট তিনটি ঘর বরাদ্দ নিয়ে নিজেদের দখলে রেখেছেন।

মায়ের ঘর বিক্রির জন্য আগ্রহী ক্রেতাদের কাছে দরদামও চলমান রেখেছেন।

স্থানীয়রা জানান, আশ্রয়ণের সব ঘর বিক্রয়ের মূল হোতা হাছিন আলী।

এ প্রকল্পের ৫৯টি ঘরের মধ্যে বিশটি ঘর ছাড়া সবই ক্রয়বিক্রয় হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আশ্রয়ণের প্রকল্পের অন্য বাসিন্দারা।

ঘর পাওয়ার যোগ্য এমন অসহায় মানুষরা সংশ্লিষ্ট অফিসের দালালদের চাহিদা মাফিক মোটা অঙ্কের টাকা দিতে না পারার কারণে ঘর পায় না। অভিযোগকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি ঘর প্রকৃত গৃহহীন ও ভূমিহীনরা পায়নি। যাদের ঘর আছে তারা পেয়েছে। যারা শুরু থেকেই অফিসের দালালদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন বজায় রেখেছিলেন; তারাই অন্যায়ভাবে সুবিধা ভোগ করছেন। তাই প্রশাসনের কাছে আমার দাবি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে পুনরায় যাচাইবাছাই করে প্রকৃত সুবিধা ভোগীদের মাঝে ঘরগুলো বরাদ্দ দেয়া হোক।

একডালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান আলী বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ঘরগুলো হাত বদল হচ্ছে। উপজেলার আইনশৃঙ্খলা মাসিক সভায় এ বিষয়ে একাধিকবার বলার পরও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমন সব অন্যায় ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আশ্রয়ণ প্রকল্প সমিতির পদে থাকা প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তিরা পুরোদমে জড়িত। প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠ তদন্তের দাবি করছি।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
(ইউএনও) উম্মে তাবাসসুম মোবাইল ফোনে জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সামনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কারণে তদন্ত কমিটি নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকায় এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রিপন/ সুপ্তি/এজে/দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More