সোমবার, ১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১লা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৩ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
সোমবার, ১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১লা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৩ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

খেজুর রস আহরণে ব্যস্ত গাছিরা

7 minutes read

এসেছে শীত, শীতের কণকণে ঠাণ্ডায় চার দিকে সবাই যখন আচ্ছন্ন ঠিক তখন কুয়াশা বরফ শিশির বেধ করে কলস হাতে বেরিয়ে পড়েন গাছিরা।

মানিকগঞ্জের ঝিটকা এলাকার প্রসিদ্ধ হাজারি গুড়। বহুকাল আগে থেকে এ অঞ্চলে খেজুর রস আহরণ করেন গাছিরা। কালের বিবর্তনে গাছির সংখ্যা কমলেও শীতের আগমনে গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের অনেক এলাকায় এখনো গাছিরা তাদের আগের পেশা ধরে রেখে খেজুর রস সংগ্রহ করেন। তবে তা আগের তুলনায় একেবারেই নামমাত্র বলা চলে। শীতের আগমণে এখন রস সংগ্রহের প্রস্তুতিতে খেজুর গাছ পরির্চযা বা চাচাইয়ের কাজেই ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। হাতে দা, বাটাল, নিয়ে ও কোমরে দড়ি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাঁচাছোলা ও নলি বসানোর কাজ করছেন গাছিরা। কয়েকদিন পরেই গাছে বাঁধানো হবে হাঁড়ি। এরপর চলবে রস সংগ্রহের কাজ। সেই রস থেকেই খেজুরের গুড় পাটালি ও হাজারী তৈরি করা হবে।

বিশেষ করে হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকার খেঁজুর গাছ ও হাজারী গুড় আমাদের দেশের এক বিশাল কৃষিভিত্তিক লোকায়ত সম্পদ। ব্রিটিশ শাসনামলে এই গুড়ের সুনাম এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। এখনো এই গুড়ের কদর দেশ বিদেশে রয়েছে।

ঝিটকা কলাহাটা গ্রামের গাছি মো. মোস্তফা জানান, অনেক বছর আগে থেকেই আমি খেজুর গাছ ঝোড়া ও গুড় তৈরীর কাজ করি। আরোও ১০ থেকে ১৫ দিন পরে রস এবং গুড় পাওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, খেজুর গাছের সংখ্যা এখন কমে যাওয়ায় রস ও গুড়ের দাম বেশি। কিন্তু এরপর চাহিদা আছে।

গাছি আব্দুল শেখ বলেন, শীতের আগমন শুরু হয়েছে। এ আবহাওয়া খেজুর গাছ প্রস্তুতের উপযুক্ত সময়। গত দুইদিনে ৮ টি গাছ প্রস্তুত করেছি। আরো ১৫ টি খেজুর গাছ ৪/৫ দিনে খেজুর রস আহরনের জন্য প্রস্তুত করবো। 

ঝিটকা শিকদারপাড়া গ্রামের গাছি মো. মিজান খন্দকার জানান, “কৃষিকাজ কাজের ফাঁকে শীত মৌসুমে খেজুর গাছ কাটি। প্রতি বছরই আমরা গুড় বানাই। তবে আগের মতো এখন আর গাছ নাই। রসও তেমন হয় না। নিজস্ব গাছ কম থাকায় বিভিন্ন জনের কাছ থেকে গাছ প্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা করে কিনে নিয়ে কাটি। লাল গুড়ের পাশাপাশি হাজারি গুড় বানাই। এ বছর শতাধিক গাছ প্রস্তুত করেছি। ৫ দিন পর থেকেই রস নামতে পারে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান বলেন, ‘কালের বিবর্তনে আমাদের দেশের খেজুর গাছগুলো অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। সরকারিবেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেশি বেশি খেঁজুর গাছ রোপণ করে এর চাষ বাড়ানো প্রয়োজন। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই খেজুরের গুড়ের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে এবং গাছিরাও লাভবান হবে।’ উপজেলা কৃষি অফিস এ বিষয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহণ করছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, ‘মানিকগঞ্জের ঐতিহ্য হাজারী গুড়। এই গুড় মানিজগঞ্জ জেলার একটি ব্র্যান্ড। কিন্তু কিছু অসাধু গাছিরা বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে ভেজাল গুড় তৈরি করছে। যা সুস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিবছরই ভেজাল রোধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ বছরও ভেজালরোধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, খেজুর গাছগুলো অনেকটাই বিলুপ্তির পথে এজন্য এ বছর আমরা উপজেলায় ৫ লাখ খেজুর গাছের চারা রোপন করার উদ্যোগ নিয়েছি। খেজুর গাছের চারা সচরাচর পাওয়া যায় দেখে আমরা যশোরে চারা অর্ডার দিয়েছি। অলরেডি আমার বাসার সামনে একটা খেজুরের বাগান করা হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যে সারা উপজেলায় চারা রোপণ করা হবে।

 

মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More