শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

দিনাজপুরে শ্রমজীবীদের করুণ জীবন,পানি-মুড়িতেই পেট চলে

9 minutes read

কয়েক দিন ধরে টানা হরতাল অবরোধে দিনাজপুরের শ্রমজীবী (দিনমজুর শ্রেনীর) মানুষের জীবনযাপন অনেকটাই দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যারা শ্রম বিক্রি করে (দিনে আনে দিনে খায়) তারাই বেশি সমস্যায় পড়েছে।

বুধবার (২২ নভেম্বর) দিনাজপুর শহরের ষষ্ঠী তলা শ্রমবাজারে সকাল থেকেই জেলার বিরল,চিরিরবন্দর, দিনাজপুর সদরের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সেখানে শ্রমজীবীরা কাজের সন্ধানে এই শ্রম বাজারে আসেন।

দূরদূরান্ত থেকে কেউ বাইসাইকেল যোগে কিংবা পায়ে হেঁটে কোদাল, ধামা ,কাস্তে ,দা সাথে নিয়ে শত শত নারী, পুরুষ দিনাজপুরের শ্রমবাজার ষষ্ঠী তলায় এসে বসে থাকেন মুলত শ্রম বিক্রি করার জন্য। বর্তমানে হরতাল অবরোধের কারণে শ্রম বিক্রি হয় না। ফলে জীবন যাপন করাটা তাদের জন্য অনেকটাই দূর্বিসহ হয়ে পড়েছে।

কয়েক দিন ধরে টানা হরতাল অবরোধের কারনে শ্রম বিক্রি করতে এসে অনেকেই শ্রম বিক্রি করতে না পেরে মুড়ি কিংবা এক গ্লাস পানি খেয়ে আবার বাড়ির দিকে রওনা হতে হয়। বাড়িতে থাকা তাদের ছেলেমেয়ে, স্ত্রী, বাবামা তার দিকে তাকিয়ে থাকে। দিন মজুরের কাজ শেষে হয়তো বা তিনি চাল ডাল তরকারী হাতে নিয়ে আসবেন এমন আশা করেন। কিন্তু যেদিন দিনমজুরের কাজ জোগাতে না পারে শ্রমজিবীরা সেদিন শুকনো মুখ আর ছলছল চোখ নিয়ে বাড়ির দিকে ফিরে যেতে হয়। এই শ্রমজীবী মানুষদেরকে কষ্টেই অনাহারে কিংবা অধাহারে তাদের দিন যাপন করতে হচ্ছে।

শ্রমজীবিদের মধ্যে কেউ বলছে, বাড়ির সর্বশেষ গরু, ছাগল কিংবা হাস মুরগি বিক্রি করে সংসার কয়েকদিন চললেও এখন আর পারছি না।

ষষ্ঠী তলা শ্রম বাজারে ৭০ বছর বয়সি চুল দাড়ি পাকা ওমর আলীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিরলের বাজনা হার থেকে দিনাজপুর শহরের ষষ্ঠী তলা শ্রম বাজারে শ্রম বিক্রি করতে এসেছি। ঘরের দাড়ি বেড়ার কাজ ভাল করতে পারি। বাড়িতে স্ত্রী ছেলে মেয়ে রয়েছে। গত তিনদিন আগে একদিন কাজ করতে পেরেছেন। ৩০০ টাকা আয় হয়েছিল।

আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘আজ তিন দিন ধরে সকালে আসি কিন্তু আর কাজ পাচ্ছি না। সকাল থেকে এখন ১২ টা পযন্ত কয়েকবার পানি খেয়েছি। আর পারছি না। মরণ যে কবে আসবে মরণের অপেক্ষায় আছি।কথাগুলো বলতে বলতেই চোখের কোণ থেকে দু ফোটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো মাটিতে।

ঠিক পাশেই মকবুল আলীও বললেন, ‘আমিও এসেছি ধুকুর ঝারি থেকেতারও বয়স ৬০ বছরের বেশি। তারও চোখ দুটি ছলছল করছে আর করুণ মুখটা শুকিয়ে গেছে। সেও বলল, ‘বাবা গত তিন দিন আগে আমিও কাজ করেছি, একদিনের মজুরি পেয়েছি ৪০০ টাকা। সে টাকা দিয়ে সেই দিনের চালডাল সবজি কিনে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলাম। গত তিনদিন ধরে আর কাজ পাচ্ছি না। বয়স হয়েছে তাই কঠিন পরিশ্রম করতে পারি না। তাই আমাদেরকেও কাজে নিচ্ছে না কেউ। কাজও পাওয়া যাচ্ছে না।কষ্টে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এই হরতাল অবরোধ যে কবে শেষ হবে। আমরা সুন্দরভাবে একটা জীবন চাই। আমরা কাজের বিনিময়ে খাদ্য চাই। কাজ করতে চাই। এই অস্থিরতা আর ভালো লাগছে না।

চিরিরবন্দরের আউলিয়াপুর থেকে আসা মাইনুল হোসেন বলেন, ‘হরতাল অবরোধে কাজ হচ্ছে না। বাড়িতেও বসে থাকতে পারছি না। বাসায় দুটো ছোটছোট ছেলেমেয়ে রয়েছে। তাদেরকেও ঠিকমতো খাবার দিতে পারছি না। এভাবে আর কতদিন চলবে। পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করা একেবারে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বাজারে প্রতিটি জিনিসের দাম উর্ধ্বগতি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আমাদের একদিকে দিনমজুরের কাজ নেই। অন্যদিকে বাজারে চাল ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঊধ্বগতি জীবনযাপন করা একেবারেই দুর্বিষহ হয়ে ওঠেছে।

দিনাজপুর ষষ্টীতলা শ্রমিক সরদার আবুল কালাম বলেন, দিনাজপুরের এই ষষ্ঠী তলা শ্রম বাজারে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ জন শ্রমিক শ্রম বিক্রি করতে আসে। গত কয়েক দিনের টানা হরতাল অবরোধের কারণে এক থেকে দেড়শ জন শ্রমিক শ্রম বিক্রি করতে পারে। বাকিরা শ্রম বিক্রি করতে না পেরে খালি হাতে মুড়ি খেয়ে কিংবা কেউ পানি খেয়ে বাড়ি চলে যায়। আবার পরের দিন শ্রম বিক্রি করতে পারবে এমন আশা নিয়ে ষষ্ঠী তোলা এই শ্রম বাজারে উপস্থিত হয়। সেইদিনও শ্রম বিক্রি হচ্ছে না। কারণ, এই হরতাল অবরোধের কারণে মহাজনেরাও বা গৃহস্থরা শ্রমজীবী ব্যক্তিদেরকে দিনমজুরের কাজ করাইতে আসছে না। কাজের চাহিদা কম থাকায় শ্রমিকের মজুরি অনেক কমে গিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় আমরা না খেয়ে মারা যেতে হবে। এই অবস্থায় দিনে আনে দিনে খায় এই ধরনের নারী পুরুষ শ্রমিকদের সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা দাবি জানান।

 

মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More