মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বিধ্বস্ত ফেনী

12 minutes read

ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র আঘাতে ফেনীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কাঁচা বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। বিনষ্ট হয়েছে খেতের আমন ফসল ও শাকসবজি। জমিতে হেলে পড়েছে ২৮২ হেক্টর জমির আমন ধান৫৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত, ১৭২টি স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে গেছে৫৫টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৩টি ঘরের চাল উড়ে গেছে

ফেনীতে শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) বিকেল থেকে বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়া বয়ে যায়। জেলার বিভিন্ন স্থানে বাতাসের তীব্র চাপে গাছ ভেঙে রাস্তায় পড়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। রাতেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গাছ কেটে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। ঝড়ো বাতাসের কারণে ২৮২ হেক্টর জমিতে পাকা ও আদাপাকা আমন ধান নুয়ে পড়েছে। বাতাসে লাইনের উপর গাছ ভেঙে পড়ায় ৫৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ১৭২টি স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে গেছে। ৫৫টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ৩টি ঘরের চাল উড়ে গেছে। 

এদিকে বিদ্যুতের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ও বিভিন্ন স্থানে লাইনের উপর গাছ ভেঙে পড়ায় জেলার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

পল্লী বিদ্যুৎ অফিস জানায়, বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়া ও গাছ ভেঙে পড়ে ৫৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৭২টি স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে গেছে। জেলার প্রায় ৬০% এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ সচল হয়নি। বিদ্যুৎহীন অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, কৃষি অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দমকা হাওয়ায় জেলায় ৫৫টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনটি ঘরের চাল উড়ে গেছে।

এবার জেলায় মোট আমন আবাদ হয়েছে ৫৯ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে মিধিলির প্রভাবে দমকা হাওয়ায় পুরো জেলায় দুর্যোগ কবলিত হয়েছে ২৮২ হেক্টর জমির আমন ফসল। শীতকালীন সবজি আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৩৯২ হেক্টর। দুর্যোগের কবলে পড়েছে ২৩ হেক্টর। সরিষা আবাদ হয়েছে ২০ হেক্টর জমিতে। দুর্যোগ কবলিত হয়েছে ২ হেক্টর জমির সরিষা। এছাড়া আধা হেক্টর জমির খেসারি ও দুর্যোগের কবলে পড়েছে। ঝড়ের কারণে ধানের তেমন ক্ষতি না হলেও রবিশস্য আবাদ পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

ফেনীস্থ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক একরাম উদ্দিন জানান, দুর্যোগ আক্রান্ত আমন ফসলি জমির মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ১১০ হেক্টর, ছাগলনাইয়ায় ৭০ হেক্টর, ফুলগাজীতে ১৫ হেক্টর, পরশুরামে ২০ হেক্টর, দাগনভূঞায় ১৭ হেক্টর ও সোনাগাজীতে ৫০ হেক্টর।

শীতকালীন সবজি ফেনী সদর উপজেলায় ৫ হেক্টর, সরিষা ১ হেক্টর, ছাগলনাইয়া শীতকালীন সবজি ৪ হেক্টর, সরিষা আধা হেক্টর, ফুলগাজীতে শীতকালীন সবজি ২ হেক্টর, সরিষা আধা হেক্টর, পরশুরামে শীতকালীন সবজি ২ হেক্টর, দাগনভূঞায় শীতকালীন সবজি ৫ হেক্টর, সোনাগাজীতে শীতকালীন সবজি ৫ হেক্টর, খেসারি আধা হেক্টর। ফেনীতে ১৭ নভেম্বর বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৭.৩৩ মিলিমিটার ও ১৮ নভেম্বর বৃষ্টিপাত হয়েছে ৬১.৩৩ মিলিমিটার।

তিনি আরো বলেন, ঝড়ো বাতাসের কবলে ধান হেলে পড়েছে। আক্রান্ত দানের স্তর দুধ, দানা ও পাকা পর্যায়ে রয়েছে। সবজি ও অন্যান্য আক্রান্ত ফসল আর বৃষ্টি না হলে সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।

পরশুরামের বীরচন্দ্র নগর এলাকার কৃষক আবুল কালাম বলেন, ফলন ভালো হলেও আমন ধান ঘরে তুলতে পারব কি না জানি না। বাতাসে ২০ শতকের বেশি জমির ধান নুয়ে পড়েছে। এছাড়া সকাল থেকে বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। সবকিছু স্বাভাবিক না হলে আমাদের দুর্ভোগ আরো বাড়বে। 

সোনাগাজীর চর চান্দিয়া এলাকার কৃষক আব্দুল খালেক জানান, ধান পেকে গেছে কাটা ও শুরু করেছি, হঠাৎ এই ঝড় বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে গেছে। পানি দ্রুত শুকিয়ে গেলে ক্ষতির আশঙ্কা কম।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফেনী শহরের শান্তি কোম্পানি রোডে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স সংলগ্নে তোরণ ভেঙে পড়ে যানচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া ফেনীপরশুরাম আঞ্চলিক সড়কের ফুলগাজী রাণীরহাট, উত্তর শ্রীপুর, ফরেস্ট অফিস, সোনাগাজী ওলামা বাজার সড়কসহ বিভিন্ন জায়গায় ঝড়ে গাছ পড়ে যানচলাচল ব্যাহত হয়। রাতেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গাছ কেটে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, সড়কের যেসব স্থানে গাছ পড়েছে তা রাতেই সরানোর কাজ চলে। ফায়ার সার্ভিস গাছ সরিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক করেছে।

সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান জানান, পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম খোলা রয়েছে। 

ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম হাওলাদার মো. ফজলুর রহমান জানান, জেলার প্রায় ৬০% জায়গায় এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ সচল হয়নি। বিদ্যুৎ কর্মীরা নিরবিচ্ছিন্ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ৫৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি খুঁটিগ্রস্ত হয়েছে। ১৭২টি স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে।

ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার জানান, মিধিলির প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। ঘর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে টিন দিয়ে সহযোগিতা করবে জেলা প্রশাসন।

 

মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More