শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

দুর্গাপূজার ব্যতিক্রম আয়োজন করে মাগুরার নারীরা

6 minutes read

দুর্গাপূজার মত এত বড় একটি আয়োজন করতে যেখানে পুরুষরাই হিমশিম খেয়ে যান। সেখানে নারীরা দুর্গাপূজার আয়োজন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মাগুরাতে। তবে এবারই প্রথম নয়, ১০ বছর ধরে এই আয়োজন করছে নারীরা।

ঢাকি, পূজারি, বাজার করা, নিমন্ত্রণ দেওয়া, প্রসাদ বিতরণ সব কাজই করেন নারীরা। তবে এই পথটি সহজ ছিল না তাদের। প্রথমদিকে এসেছে নানা রকম বাধা। তবুও দমে যায়নি তারা। তাদের চেষ্টা দেখে এক পর্যায়ে গ্রামের পুরুষরা তাদেরকে করেছেন সহযোগিতা। আর তাদের এই পূজার আয়োজন দেখতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে দর্শনার্থীরা। এই পূজার শুরুটা করেছিলেন সবিতা বিশ্বাস। সবিতা বিশ্বাস ওই গ্রামের মৃত নয়ন চন্দ্র বিশ্বাসের স্ত্রী।

সবিতা বিশ্বাস বলেন, ২০ বছর আগে সাপের কামড়ে আমার ছেলে মারা যাওয়ার পর আমি অনেকটা পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিলাম। সারাক্ষণ কালী মন্দিরে পূজা সহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকতাম। আমার মনে হল এখানে কালী পূজার পাশাপাশি যদি দুর্গাপূজা করা যায়। কোন এক রাতে মনে হয়েছিল আমার ছেলেও আমাকে এখানে পূজা করার ব্যাপারে বলছে। তারপর গ্রামের নারীদের একত্রিত করে এখানে দুর্গাপূজা শুরু করি। প্রথম দিকে অনেকেই বাধা দিয়েছিল। তবে আমরাও ছিলাম নাছোড়বান্দা। যে কারণে পরে গ্রামবাসী আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে। সেই থেকে আজ ১০ বছর এখানে আমরা দুর্গাপূজা করে আসছি।

বাঁশকোঠা সর্বজনীন দূর্গা মন্দিরের মহিলা কমিটির সভাপতি অঞ্জলি টিকাদার বলেন, আমরা নারীরাও যে পারি সেই চেষ্টা থেকেই আমরা ১০ বছর ধরে এখানে পূজা করে আসছি। আমরা সমিতির সদস্যরা একটু একটু করে টাকা গুছিয়ে রাখি। এছাড়া গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা চাউল উঠিয়ে সেগুলো আমাদের ফান্ডে রেখে দি। সেই টাকা দিয়ে আমরা প্রতিবছর দুর্গাপূজার আয়োজন করি। সাথে সরকারি সাহায্য ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও আমাদেরকে সহযোগিতা করে। তিনি আরো বলেন,প্রথম বছর যখন পূজা শুরু করি তখন পূজা শেষে আমাদের ২২ হাজার টাকা বেঁচে যায়। তা দিয়ে কালি মন্দিরের পাশে নতুন একটি মন্দির তৈরি করেছি।

শুধু বাঁশকোঠা নয় এই ইউনিয়নের কাটাখালি গ্রামে আরো একটি দূর্গা মন্দির রয়েছে যেখানে তিন বছর ধরে দুর্গাপূজা করে আসছে নারীরা। যেখানে দীর্ঘদিন ধরে কাত্যায়ানি পূজা সহ অন্যান্য পূজা হলেও দুর্গাপূজা হতো না। এই গ্রামের নারীদের দুর্গাপূজায় যেতে হতো অন্য গ্রামে। কাটাখালী সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের নারীদের নেতৃত্ব দেন বিউটি বালা। তিনি এই কমিটির সভাপতি।

বিউটি বালা বলেন, আমি ১৫ বছর এই গ্রামে বউ হয়ে এসেছি। এখানে আসার পর কাত্যায়ানি পূজা সহ নানা পূজা গ্রামে দেখলেও দুর্গা পূজার আয়োজন হতো না। আমরা নারীরা চিন্তা করি আমাদের গ্রামে এই মন্দিরে দুর্গা পূজা করা যায় কিনা। তারপর সব নারীরা একত্রিত হয়ে ৩ বছর হলো এখানে দুর্গাপূজার আয়োজন করছি। কেনাকাটা, টাকা উঠানো থেকে শুরু করে সব কাজ আমরাই করি। তবে আমাদের কাজে আমাদের গ্রামের পুরুষরা সহযোগিতা করে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সঞ্জিবন বিশ্বাস বলেন, আমার ইউনিয়নে ৬৮ টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তার মধ্যে ব্যতিক্রম রয়েছে দুইটি পূজা মন্দির। যেখানে পূজার আয়োজন করে নারীরা। তাদের আয়োজনটাও হয় অনেক সুন্দর। আমি আমার পরিষদের পক্ষ থেকে সব সময় চেষ্টা করি তাদের পাশে থাকার জন্য।

জেলা পূজা উৎযাপন কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহন লাল রায় (খোকন ঠাকুর ) বলেন, এ বছর মাগুরাতে ৭০২ টি মন্দিরে দুর্গাপূজা হচ্ছে।

৭০০টি মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন পুরুষরা করলেও দুইটিতে রয়েছে ব্যতিক্রম। এখানে আয়োজক নারীরা।যেখানে নারীরা পূজার সব দায়িত্ব পালন করে। আমি মনে করি, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। জেলার অন্যান্য গ্রামেও নারীদেরকে এভাবে পূজার কাজে এগিয়ে আসা উচিত। অন্য গ্রামের নারীরাও যদি এগিয়ে আসে জেলা পূজা উৎযাপন কমিটির পক্ষ থেকে তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

 

মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More