মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হাতিয়ার নৌ এ্যাম্বুলেন্স এখনো বিকল

দীপ্ত নিউজ ডেস্ক
8 minutes read

নোয়াখালীর হাতিয়ায় রোগিদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে একটি নৌএ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু, গত বছরের অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় নৌএ্যাম্বুলেন্সটি। এরপর থেকে দীর্ঘসময় কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও সঠিক তদারকির অভাবে এখনও বিকল হয়ে মেঘনার পাড়ে নলচিরা ঘাটের কাছে পড়ে আছে নৌএ্যাম্বুলেন্সটি। ফলে প্রতিনিয়ত রোগি নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় সেবাপ্রত্যাশীদের।

নোয়াখালীর মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। এ দ্বীপে প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ লোকের বসবাস। সারাদেশের সাথে যোগাযোগের জন্য নৌপথই একমাত্র ভরসা এ দ্বীপবাসির। ঝড়জলোচ্ছ্বাস নিয়ে লড়াই করা দ্বীপবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ওছখালিতে রয়েছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এ কমপ্লেক্সেও নেই তেমন অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা। এখানে সেবা নিতে আসা অনেক রোগিকেই জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

জানা যায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রতিমাসে উন্নত চিকিৎসার জন্য গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সরকারি এ হিসেবের বাইরে প্রায় সময় নিজেদের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদরে জানা আরও অন্তত শতাধিক রোগি। নলচিরা ঘাট হয়ে চেয়ারম্যান ঘাট দিয়ে দ্বীপ থেকে জেলা শহরে যেতে হয়। প্রায় ২১ কিলোমিটারের এ নৌপথ পাড়ি দিতে হয় স্পীডবোট অথবা ট্রলারে। স্পীডবোটে জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হয় ৫০০ টাকা ও ট্রলারে ২০০টাকা। যা সাধারণ মানুষের জন্য অনেকটা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তারমধ্যে স্পীডবোট, ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রীদের সাথে গাদাগাদি করে নদী পথ পার হতে হয় রোগিদের। রোগিদের এসব ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ২০১৯সালে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে হাতিয়া জন্য একটি নৌএ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে সরকারি নৌএ্যাম্বুলেন্সটি বিকল থাকায় নলচিরাচেয়ারম্যান ঘাট রুটে থাকা ট্রলার, স্পীডবোটে সাধারণ যাত্রীদের সাথে মেঘনা পার হতে হচ্ছে রোগিদের। এতে করে অতিরিক্ত ভাড়া দেওয়ার পাশাপাশি যাত্রী হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘসময় ঘাটে অপেক্ষ করে জেলা সদরে যেতে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে রোগিরা।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে ছিলো নৌএ্যাম্বুলেন্সটি। বিকেলে দ্বীপে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এসময় মেঘনা নদীর তীরে থাকা এ্যাম্বুলেন্সটিকে ঝড়ের আঘাতে ঘাটের পাশের গাছের সাথে লেগে ভেঙে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরপর থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনের তদারকির অভাবে ক্ষতিগ্রস্থ এ্যাম্বুলেন্স থেকে প্রয়োজনীয় মূল্যবান যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যায় লোকজন। যার ফলে বর্তমানে পুরোটাই বিকল এ্যাম্বুলেন্সটি। দ্বীপের রোগিদের কথা চিন্তা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নৌএ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করে পুনঃরায় চালু করার দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, সিত্রাং এর সিগনাল পড়ার পরপর প্রতিটি নৌযানকে তাদের মালিকগণ নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেলেও নৌএ্যাম্বুলেন্সটি নলচিরা ঘাটের পাশে পড়ে ছিলো। জোয়ার ও প্রচন্ড বাতাসের আঘাতে এ্যাম্বুলেন্সটি নদীর তীরে থাকা নারিকেল গাছের সাথে ধাক্কা লেগে ভেঙে যায়। তারপর থেকে ওই গাছের সাথে এখনও পর্যন্ত পড়ে থেকে বিকল হয়ে যায় এ্যাম্বুলেন্সটি। ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পর পর যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি মেরামতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন তাহলে তখনই একটি সচল করা সম্ভব হতো। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ্যাম্বুলেন্সটি সচল করে মানুষের সেবা ব্যবহার হবে এমন প্রত্যাশা দ্বীপের সাড়ে সাত লাখ মানুষের।

নোয়াখালী জেলা পরিষদ সদস্য মহিউদ্দিন মুহিন বলেন, দেশের উত্তাল নদীগুলোর মধ্যে একটি মেঘনা। জোয়ার ও জোয়ারের পরবর্তী সময়ে প্রায় উত্তাল থাকে নদীটি। এ নদী পার হয়েই আমাদের জেলা শহরে যেতে হয়।এখানে রোগীদের পরিবহনের জন্য যে নৌ এ্যাম্বুলেন্সটি রয়েছে তা দীর্ঘ ৭ মাসের মত বিকল। ফলে এখান থেকে রোগীদের জেলা শহর কিংবা অন্যত্র যেতে অনেক ভোগান্তি পোাহাতে হয়। তাই ক্ষতিগ্রস্থ নৌএ্যাম্বুলেন্সটি সচল করার পাশাপাশি এ নদীর জন্য একটি সীএ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার দাবি সেবাপ্রত্যাশিদের।

নৌএ্যাম্বুলেন্স চালক আশ্রাফ আলী বলেন, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা থাকা এ্যাম্বুলেন্সটি কমিউনিটি বেস্ট হেলথ কেয়ার থেকে বুঝে নেয় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু তখন এ্যাম্বুলেন্সটির জন্য কোন চালক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। রোগিদের কাছ থেকে নেওয়া নির্দিষ্ট পরিমান টাকার একটি অংশ দিয়ে আমাকে চালক হিসেবে রাখা হয়। ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর আউটসোসিং থেকে আমাকে নিয়োগ দিলেও এখনও পর্যন্ত কোন বেতন দেওয়া হয়নি, এদিকে নৌএ্যাম্বুলেন্স বিকল থাকা বেকার সময় পার করতে হচ্ছে আমাকে।

হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৌমেন সাহা বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে এ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করে রোগিদের ব্যবহারের উপযোগি করা হবে। এ সংক্রান্ত একটি বরাদ্দ মন্ত্রানালয় থেকে পাস হয়েছে বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে আমাকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

আল/দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More