শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

দুর্ভাগা তোফাজ্জেলের এ কেমন নিয়তি

দীপ্ত নিউজ ডেস্ক
5 minutes read

মা মরলেন ক্যান্সারে। একমাত্র বড় ভাইও মরলেন ক্যান্সারে। বাবা মরলেন সড়ক দুর্ঘটনায়। সব হারিয়ে অবশেষে মানসিক ভারসাম্যহীন। পরিবার পরিজন বলে কিছুই নেই তোফাজ্জেলের। এ কেমন নিয়তি দুর্ভাগা জীবনের সমাপ্তিটাও হলো তাঁর নিঠুর নির্মমতায়।

বাংলা সাহিত্যে অনার্স এবং মাস্টার্স করেছিলেন পিরোজপুর সরোয়ার্দী কলেজ থেকে। পাথরঘাটা সরকারি কলেজ থেকে ২০১১ সালে তার এইচএসসি। ২০০৯ সালে পাথরঘাটার কাঠালতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে তার এসএসসি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্মম নির্যাতনে প্রাণ হারানো তোফাজ্জল হোসেনের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায়। প্রাণপ্রিয় প্রিয়তমাকে না পাওয়ার যন্ত্রণা আর একের পর এক স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে চার বছর আগে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তোফাজ্জেল। বাবা, মা, ভাই, বোন কিছুই না থাকার কারণে মৃত্যুর আগে ন্যুনতম চিকিৎসাটাও হলো না তার।

মেধাবী তোফাজ্জল হোসেন একসময় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতিও ছিলেন তিনি। স্থানীয়দের কাছে অত্যন্ত সজ্জন, পরিচ্ছন্ন ও বিনয়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন তোফাজ্জেল। বাবা মা আর একমাত্র বড় বড় ভাইকে নিয়ে সাজানো গোছানো সংসার ছিলো তাদের। বাবা আব্দুর রহমান ছিলেন ব্যবসায়ী। চরদুয়ানি বাজারে জুতোর দোকান ছিলো তাঁর। বড় ভাই নাসির উদ্দিন ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের একজন সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই)। পিরোজপুর জেলায় কর্মরত থাকায় বড় ভাইয়ের কাছে থেকেই লেখাপড়া করেন তোফাজ্জেল।কিন্তু দুর্ভাগ্যের তিলক যার কপালে। তার যে ভাল থাকার উপায় নেই। আট বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তার বাবা।

এরপর বছর চারেক আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় মা বিউটি বেগমের। একদিকে প্রিয়তমাকে না পাওয়ার বেদনা আরেক দিকে মা হারানোর শোক। সবকিছু এলামেলো হয়ে যায় তোফাজ্জেলের। তোফাজ্জলকে সুস্থ করতে নিজের কাছে নিয়ে যান বড় ভাই পুলিশ কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন। হঠাৎ করেই লিভার ক্যান্সার ধরা পড়ে বড়ভাই নাসির উদ্দিনের। কিছুদিন পরেই মৃত্যু হয় তাঁর। বাবা, মা, ভাই, বোন সব হারিয়ে একসময় শুরু হয় তোফাজ্জেলের ভবঘুরে জীবন তোফাজ্জলকে মাঝে মাঝে পাথরঘাটা দেখা গেলেও অধিকাংশ সময় তিনি থাকতেন লাপাত্তা। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তাকে দেখেছেন পাথরঘাটার অনেকে। কখনো উদোম শরীরে, আবার কখনো নোংরা পোশাকে তাকে দেখা যেত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও। পরিচিত কেউ তাকে দেখলে খাবার কিনে দিতেন। আবার কারো কারো কাছ থেকে হাত পেতেও টাকা নিতেন দুমুঠো খাবারের জন্য।

তোফাজ্জেলকে আটকে রেখে একটি মোবাইল নাম্বার থেকে ফোন করে তার ভাইযের বউয়ের কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছে।

ভাইয়ের বউ শরীফা আক্তার বলেন, তোফাজ্জেলকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছি, খাবার কিনে দিয়েছি, চিকিৎসারও উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে মানুষকে চাইলেইতো আর সুস্থ করে তোলা যায় না। আমরা তোফাজ্জলকে সুস্থ করে তুলতে পারিনি। তাই বলে তোফাজ্জেলকে যে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তা আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা তোফাজ্জলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলকে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করায় ক্ষুব্ধ পাথরঘাটার স্থানীয় বাসিন্দারা। আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় পাথরঘাটার কাঠালতলী গ্রামে জানাযা শেষে দাফন করা হবে তাকে। দাফন শেষে চরদুয়ানী বাজারে নির্মম এ হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে মানববন্ধনেরআয়োজন করেছে তোফাজ্জেলের বন্ধুস্বজন ও গ্রামবাসী।

শাহ্/ আল/ দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More