মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

চারদিকে অথৈই পানি, রান্নাঘরে মায়ের দাফন

দীপ্ত নিউজ ডেস্ক
4 minutes read

উঠান ও অন্যান্য ঘরে বন্যার পানি থাকায় রান্নাঘরেই মাকে দাফন করেছেন ফেনী সদর উপজেলার সুকুমার বর্মন।

ফেনী সদর উপজেলার সত্তরোর্ধ্ব প্রিয়বালা বর্মন আগে থেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। দারিদ্র্যের কারণে খুব যে বেশি চিকিৎসা করাতে পেরেছেন তা নয়। ২১ আগস্ট বিকেল থেকে যখন পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের ভগবানপুর গ্রামে পানি প্রবেশ করতে থাকে তখনি সবাই প্রমাদ গুনতে থাকেন। সন্ধ্যার পর থেকেই প্রিয়বালাদের উঠান ডুবিয়ে পানি ঘরে ঢুকে পড়ে।

রাত বাড়তে থাকলে ঘরে পানিও বাড়তে থাকে। ঘরে প্রিয়বালার ছেলে সুকুমার চন্দ্র বর্মন, তার স্ত্রী ও সন্তানরা আছেন। ঘরে কোমর সমান পানি দেখে প্রিয়বালা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। সুকুমার ও তার স্ত্রী ঘরের মধ্যে মাচা করে ভেজা কাপড়ে মাকে সেখানে বসিয়ে রাখেন।

বানের পানিতে এই অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে ছয় দিন থাকার পর প্রিয়বালা প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন। মায়ের শরীর খুব খারাপ অবস্থার দিকে গেলে মঙ্গলবার দুপুরে সুকুমার অনেক কষ্ট করে একটি নৌকা ভাড়া করেন। তিনি ও তার স্ত্রী মিলে প্রিয়বালাকে নিয়ে বের হন হাসপাতালের দিকে। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর পরই প্রিয়বালা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

মায়ের মরদেহ নিয়ে আবার ঘরে ফিরে আসেন সুকুমার। চারদিকে পানি; শ্মশানে দাহ করার মত অবস্থা নেই। এবার শুরু হয় প্রিয়বালাকে সমাধিস্থ করার নতুন যুদ্ধ। উঠানে, ঘরে পানি। কোথাও সমাধিস্থ করার কোনো উপায় নেই।

পেশায় দর্জি সুকুমার চন্দ্র বর্মন বলছিলেন, মাকে যখন রান্নাঘরের মেঝেতে দাফন করার জন্য মাটি খুঁড়ছিলেন তখন ওই কক্ষে পানি ছিল না। অন্য সব কক্ষে পায়ের পাতা অবধি পানি ছিল। একপর্যায়ে কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়তে থাকলে গর্তের মধ্যে পানি উঠা শুরু করে। একদিকে তিনি মাটি খুঁড়ছিলেন আরেকদিকে স্ত্রী পানি সেচে ফেলছিলেন।

মোটামুটি কিছুটা গর্ত করার পর প্রিয়বালাকে যখন শোয়ানো হচ্ছিল তখন সেখানে পানি ঢুকে যাচ্ছিল। তারপরও কোনোরকমে তাকে মাটিচাপা দেয়া হয়।

সুকুমার আক্ষেপ করে বলছিলেন, চারদিকে হানি, মা রে কই নিমু, কন্ডে দাহ করমু, কন্ডে কবর দিমু! একবার চিন্তা করচ্চি কলার ভেলায় ঘরের পাশের নদীতে ভাসায় দিমু, আবার চিন্তা কইচ্চা একমাত্র মা, কেন্নে ভাসামু নদীতে? হরে ঘরের ভিত্তে পাকের ঘরের মেঝের মাডি খুঁড়ি হানির ভিত্তে দাফন দিসি।”

শুক্রবার সুকুমার বলছিলেন, ঘরের পানি কমলেও উঠানে এখনো হাঁটু পানি। মায়ের এমন শেষ পরিণতি হবে তিনি কখনো স্বপ্নেও ভাবেননি।

আশ্রয়কেন্দ্রে মারা গেলেন বানভাসি

বন্যা শুরুর পর ২১ আগস্ট রাতে বাড়ি ছেড়ে দাগনভূঞার বিরলী বাজার আব্দুস সাত্তার মার্কেটের আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবার নিয়ে উঠেছিলেন অটোরিকশার চালক ষাটোর্ধ্ব আবুল কাশেম। পানিতে ডুবেছে ঘর, নষ্ট হয়েছে উপার্জনের একমাত্র অটোরিকশাটিও। এ নিয়ে তার দুশ্চিন্তার শেষ ছিলো না। এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। আবুল কাসেম দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর কাজী বাড়ির দেলুমিয়ার ছেলে।

স্থানীয় মো. শাহজালাল জানান, আবুল কাশেমের গ্রামের বাড়িঘর পানিতে ডুবে আছে। এ অবস্থায় পরিবারের সবার সিদ্ধান্তে রাতে সিন্দুরপুর বাজারের অলাতলী গ্রামের একটি উঁচু স্থানে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় আবুল কাশেমের দুই ছেলেসহ আশপাশের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More