রাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রচার ও সুরক্ষায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি) এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার কারণে মানবাধিকার কমিশন সে ভূমিকা পালন করতে পারেনি। মানবাধিকার কমিশন যে উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছে সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে মানবাধিকার কমিশন ব্যর্থ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘স্বাধীন ও নির্ভরযোগ্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশন: সংস্কার ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রারম্ভিক বক্তব্য উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, প্রাক্তন চেয়ারম্যান, এনএইচআরসি; ড. মালেকা বানু, বাংলাদেশ মাহিলা পরিষদ; শিরিন হক, প্রধান, উইমেন্স অ্যাফেয়ার্স কমিশন; সাবিনা ইয়াসমিন লুবনা, সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার, সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপারেশন (এসডিসি); আনোয়ারুল হক, সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি, ইউএনডিপি বাংলাদেশ এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ।
বক্তারা, একটি স্বাধীন ও জনমুখী মানবাধিকার কমিশনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
বক্তারা বলেন, বিগত বছরগুলোতে মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্খন সংগঠিত হলেও, এর জন্য দায়ী ব্যক্তি বা সংস্থাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার বাস্তবিক নজির নেই। মানবাধিকার রক্ষা মূলত রাষ্ট্রের আবশ্যিক দায়িত্ব, এজন্য নজরদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা অপরিহার্য।
স্টেইট ক্রাইম তথা রাষ্ট্রের প্রতিনিধি অপরাধ করলে কি করণীয় তা নির্ধারণ ও এর বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান আবশ্যক। মানবাধিকার লঙ্ঘলের সীমা শূণ্যতে নামিয়ে আনা একান্ত জরুরী। কেবল সংস্কার নীতিমালায় নয় বরং নীতিমালার কার্যকর বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক পটপরিবর্তনের ফলে জাতীয় অংশীজনদের একত্রিত হয়ে এনএইচআরসিকে শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও আলোচনার করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি জনগণের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রত্যাশাকে আমলে নিয়ে এনএইচআরসিকে সংস্কারের দাবিও জোরদার হচ্ছে। কাজেই, দেশে আইনের শাসন সমুন্নত রাখা, জনগণের অধিকার রক্ষা এবং জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন, নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অপরিহার্য।
ইউএনডিপি’র আয়োজনে সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো–অপারেশন (এসডিসি) এর সহায়তায়, ইউএনডিপি’র স্ট্রেংদেনিং ইনস্টিটিউশনস পলিসিজ অ্যান্ড সার্ভিসেস (এসআইপিএস) প্রকল্পের আওতায় এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সংলাপে আইন ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, মানবাধিকারকর্মী, নীতিনির্ধারক, সরকারি কর্মকর্তা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন এবং মানবাধিকার কমিশনের সংস্কারের জন্য সুপারিশ ও প্রস্তাবনা প্রদান করেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন ২০০৯, আইনি ও নীতিগত সংস্কার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগে আইনি সীমাবদ্ধতা দূর করা, কমিশনে নারী সদস্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানবাধিকার সুরক্ষায় টাস্কফোর্স গঠন, তদন্ত ক্ষমতা, প্রবাসী শ্রমিকদের মানবাধিকার সুরক্ষা, পরিচালনাগত চ্যালেঞ্জ, তহবিল স্বাধীনতা, সম্পদ বরাদ্দ, কমিশনের কার্যকারিতা ও স্বাধীনতা সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিরীক্ষা, জনসাধারণের কাছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভাবমূর্তি ও জবাবদিহিতা জোরদারে নাগরিক সমাজ সংস্থা এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রভৃতিসহ গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
বক্তারা, নাগরিক সংগঠনের সাথে সংযোগ, স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতা, নারী মানবাধিকার রক্ষা, উন্নয়নের জন্য যে বাস্তুচ্যুতি সমস্যা তৈরি হচ্ছে তা নিরসন, প্রান্তিক সম্প্রদায়কে যুক্তকরণ, কমিশনের বিকেন্দ্রীকরণ প্রভৃতি নিয়েও আলোচনা করেন। বিচার বহির্ভূত হত্যা বন্ধ, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে মানবাধিকার কমিশনে নিয়োগ প্রদানেও গুরুত্বারোপ করা হয়।
এছাড়া, এনএইচআরসি’র বিশ্বাসযোগ্যতা ও জনগণের কাছে প্রতিষ্ঠানটির আস্থা বৃদ্ধিতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ও প্রস্তাব প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।