মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পর অবশেষে দেশটির স্বাস্থ্য সেবা খাতকে ঢেলে সাজানোর গুরুদায়িত্ব পেয়েছেন রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র। জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশ রক্ষা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা কেনেডিকে মার্কিন স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগের (এইচএইচএস) মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত কেনেডি পরিবারের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বহনকারী এই নেতা ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। এই নির্বাচনে তিনি ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৭৯টি পপুলার ভোটও পেয়েছেন; যা মোট কাস্টিং ভেটের শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ (০.৫%)।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নিয়োগের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘সব আমেরিকানের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব। এইচএইচএস এই ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং কেনেডি এই কাজে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করবেন।‘
কেনেডি জনস্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশ নিয়ে বেশ কয়েকটি বিতর্কিত ও প্রভাবশালী মতামত দিয়েছেন, যা তাকে মার্কিন জনস্বাস্থ্য খাতে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি বহু বছর ধরে কর্পোরেট প্রভাবমুক্ত স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা পদ্ধতির স্বচ্ছতার পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন।
নিয়োগ গ্রহণের পর কেনেডি বলেন, ‘এই বিভাগকে আমি কর্পোরেট প্রভাবমুক্ত করতে চাই, যাতে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম জনগণের কল্যাণে আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।‘
নিয়োগ নিশ্চিত হলে কেনেডি অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট, মেডিকেয়ার এবং মেডিকেইড–এর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য কর্মসূচিগুলো পরিচালনা করবেন। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন পুরোপুরি ওবামাকেয়ার বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে, তবে এ বিষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি এখনও বিদ্যমান।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কেনেডি স্বাস্থ্য সচিব হিসেবে মূলত স্বাস্থ্য সেবার স্বচ্ছতা, ভ্যাকসিন নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা যাচাই, এবং স্বাস্থ্য খাত থেকে দুর্নীতি দূরীকরণে জোর দেবেন। তার এই ভূমিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কেনেডি তার প্রচারণার সময় আমেরিকার স্বাস্থ্য খাতে “পুরোনো রোগের মহামারি” দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। নির্বাচনের পরে তিনি স্বাস্থ্য খাতে কর্মীদের সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্য ও পরিবেশ সংক্রান্ত নীতিমালায় পরিবর্তন আনার কথা বলেন। তিনি বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের পরিবর্তন করার পরিকল্পনাও ব্যক্ত করেন, যা তার স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার প্রচেষ্টাকে গতিশীল করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই নিয়োগের খবর প্রকাশের পর, শীর্ষ ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম তাৎক্ষণিকভাবে কমে যায়, যা তার ভ্যাকসিন সম্পর্কিত পূর্বের বিতর্কিত মতামতের প্রতিফলন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে, তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি ভ্যাকসিন ব্যবহার বন্ধ করতে চান না; বরং তিনি এর কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণা করতে চান।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাতে কেনেডির এই নিয়োগ নতুন আশার আলো জ্বালাতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে, যারা দীর্ঘদিন ধরে কর্পোরেট প্রভাব থেকে মুক্ত একটি কার্যকর ও স্বচ্ছ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার প্রত্যাশা করছেন।
মৃন্ময় মাসুদ