চলতি বছরের ১ আগস্ট পতনের ঠিক আগ মুহূর্তে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। তবে এর চার দিন পর ছাত্র–জনতার গণঅভুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান এবং আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। পরে ২৮ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর ওপর থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জামায়াত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থী দল হিসেবে পরিচিত; যদিও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সহযোগী হিসেবে কাজ করায় এক প্রকার কলঙ্কের ভার রয়েছে দলটির ওপর। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকালে দলটি বহুবার আক্রমণের শিকার হয়েছে; দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ফাঁসির দণ্ড পেয়েছেন বা কারারুদ্ধ হয়েছেন। দলটির হাজার হাজার কর্মীকে বছরের পর বছর ধরে গ্রেপ্তার করে রাখা হয়েছিল। তবুও দলটি শুধু যে টিকে আছে; তাই নয়, বরং ভবিষ্যতে বড় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অনলাইন সংবাদ ম্যাগাজিন দ্য ডিপ্লোম্যাটের দক্ষিণ এশিয়া সম্পাদক সুধা রামাচন্দ্রনের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে, বাংলাদেশের তরুণ স্কলার, ধর্মতত্ত্ববিদ এবং নিরাপত্তা অধ্যয়নের গবেষক ড. শাফী মো. মোস্তফা জামায়াতে ইসলামীর শক্তি এবং দুর্বলতা বিশ্লেষণ করেছেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেছেন, দলটি আদর্শগতভাবে দৃঢ় এবং এর কর্মীরা নিবেদিতপ্রাণ; তবে তাদের এই মাঠের শক্তি, ভোটের শক্তিতে পরিণত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের অবস্থান এখনো দলটির জন্য ‘কলঙ্কজনক‘ বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে; যা তাদের সুনাম এবং বাংলাদেশে তাদের অবস্থানকে প্রভাবিত করেছে। জামায়াতের সাফল্য নির্ভর করছে তারা কীভাবে অতীতকে মোকাবিলা করবে, তার ওপর; এটি কি ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে হবে? নাকি নাম পরিবর্তন করে দলটিকে পুনঃব্র্যান্ডিং করা হবে?
দ্য ডিপ্লোম্যাট: গত আগস্টে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভাগ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। এটি কি জনগণের সমর্থনের উত্থানকে নির্দেশ করে, নাকি অন্য কিছু?
শাফী মোস্তফা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রাচীনতম ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি। শক্তিশালী সামাজিক সেবা নেটওয়ার্ক এবং সুসংগঠিত কাঠামোর জন্য দলটি সুপরিচিত। গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার শাসনে দলটি অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। তাদের অনেক নেতাকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দেশের সব জেলা–উপজেলা, এমনকি বিভাগীয় পর্যায়ে তাদের অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হাসিনার পতনের ঠিক চার দিন আগে দলটিকে এবং এর ছাত্র সংগঠনকে (ছাত্রশিবির) নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতার দায়ে শেখ হাসিনা অনেক আগেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি, বরং তিনি জামায়াতের সঙ্গে কৌশলগত রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। দলটিকে ‘জীবিত‘ রেখে তিনি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সুবিধা অর্জন করেন। জাতীয়ভাবে, জামায়াতকে বিএনপির সঙ্গে জড়িয়ে তিনি বিএনপির রাজনীতিকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি হিসেবে অকার্যকর করার চেষ্টা করেছেন। আন্তর্জাতিকভাবে, গ্লোবাল ওয়ার অন টেরর‘ ঘোষণার পর পশ্চিমা ইসলামোফোবিয়া দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করে জামায়াতকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে তুলে ধরে আন্তর্জাতিক বৈধতা প্রাপ্তির প্রচেষ্টা করেছেন। এই সমস্ত কঠিন বাধা সত্ত্বেও, জামায়াত গোপনে কাজ করে টিকে থাকতে পেরেছে, যা তার আইডিওলজিক্যাল ভিত্তির স্থিতিস্থাপকতা ও শক্তির প্রমাণ।
তবে, জামায়াতের টিকে থাকা মানে এটি ব্যাপক জনপ্রিয় সমর্থন লাভ করেছে তা নয়। যেসব জাতীয় নির্বাচনে দলটি অংশগ্রহণ করেছে সেগুলোতে জনপ্রিয় সমর্থন ১০ শতাংশের নিচে ছিল। এটি নির্দেশ করে যে, যদিও জামায়াত আদর্শিক ও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী, তবে জাতীয় নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব ফেলার জন্য তার গণভোটের সংখ্যা কম। তবে এটা ঠিক যে, জামায়াতের শক্তি তার সমর্থক গোষ্ঠীর গঠনেই নিহিত। এর অধিকাংশ সমর্থক কেবল প্যাসিভ ভোটার নয়, বরং সক্রিয় কর্মী এবং মাঠের আন্দোলনকারী। এ কারণে, দলের দৃশ্যমান উপস্থিতি তাদের সীমিত নির্বাচনী সমর্থনকে অতিক্রম করেতে পেরেছে। দলটির জনপ্রিয় সমর্থন ১০ শতাংশের কম হলেও, সমর্থকদের সক্রিয়তা বৃহত্তর সমর্থক গোষ্ঠীর অনুভূতি সৃষ্টি করে। সুতরাং, জামায়াত বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী সংগঠন হলেও, এর প্রভাব ভোটের চেয়ে রাস্তায় বেশি দেখা যায়, যা তাদের সক্রিয়তা ও ভোটের শক্তির মধ্যে পার্থক্য বোঝায়।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: বিভিন্ন রিপোর্টে বলা হচ্ছে, জামায়াতের কর্মীরা হাসিনাবিরোধী প্রতিবাদকারীদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ গঠন করেছে।
শাফী মোস্তফা: আমি আগেই বলেছি, জামায়াত সমর্থকরা উৎসাহী কর্মী, যারা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ছাত্র আন্দোলনের স্পষ্ট সমর্থন দিয়েছে। তারা জানে যে, সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলের জন্য শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন থেকে বেরিয়ে আসা খুবই কঠিন। তাই তারা এই আন্দোলনকে তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখেছে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, জামায়াতের মতো বিরোধীদলগুলো সক্রিয়ভাবে এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে এবং এর সফলতা অর্জনে সহায়তা করেছে।
জামায়াতের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন (হাসিনা পদত্যাগের মাত্র চার দিন আগে) দলটি নিষিদ্ধ হয়। তাদের রাজনৈতিক সুযোগ–সুবিধা কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এবং নেতৃত্ব চাপের মধ্যে থাকার কারণে, জামায়াতের সামনে ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। এটি কেবল টিকে থাকার কৌশল ছিল না, বরং সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার একটি মাধ্যমও ছিল, যা শেষ পর্যন্ত হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: জামায়াতের সহিংসতা, বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে মূর্তি ভাঙচুরের বিষয় নিয়ে কিছু বলবেন? জামায়াত কি এই হামলার সঙ্গে জড়িত?
শাফী মোস্তফা: বাংলাদেশ সম্প্রতি একটি ঐতিহাসিক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে, ছাত্র–জনতার প্রতিরোধের মুখে প্রধানমন্ত্রী যখন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তখন দেশজুড়ে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ কার্যত অকার্যকর হয়ে যায় এবং সেনাবাহিনী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে অস্বীকৃতি জানায়। জনগণের ক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনী কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেনি। জনগণ আওয়ামী লীগের অফিসে আগুন দেয় এবং শাসক দলের সম্পত্তি ধ্বংস করে। বিশেষ করে শেখ হাসিনা এবং তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তিগুলোর ওপর হামলা হয়। এসব হামলা সরকারের প্রতি জনগণের ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং আওয়ামী লীগের দ্বারা প্রচারিত ‘মূর্তি সংস্কৃতি‘র বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ। এসময় রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুভূতির মিশ্রণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। জামায়াতের অংশগ্রহণ থাকার কথা বলা হলেও এর মূর্তি ভাঙার জন্য তারা একমাত্র দায়ী নয়। প্রতিবাদটি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণে সংঘটিত হয়। মূর্তিতে হামলা রাজনৈতিক বিদ্রোহের পাশাপাশি ধর্মীয় অনুভূতিরও প্রকাশ ঘটিয়েছে, যা সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: জামায়াতের ফিরে আসা ও উত্থান নিয়ে সেক্যুলার বাংলাদেশি এবং ভারতীয়রা উদ্বিগ্ন। তাদের উদ্বেগের কারণ কী?
শাফী মোস্তফা: বাংলাদেশ কখনোই সঠিকভাবে সেক্যুলার রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠেনি। সেক্যুলারিজম উপরের দিক থেকে চাপানো হয়েছে, যা ইসলামি শক্তিকে আরও শক্তিশালী করেছে। সেক্যুলারিজমের পরিবর্তে, বাংলাদেশে বহুসংস্কৃতির ধারণা থাকা উচিত, যা সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করবে।
আপনি জানেন, জামায়াত সংখ্যালঘুদের বাড়ি এবং উপাসনালয় রক্ষা করছে। কিছু মানুষ এটিকে জামায়াতের সুযোগবাদী পদক্ষেপ মনে করতে পারেন, কিন্তু তারা এখনো গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে কাজ করছে। আর যতদিন তারা গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি সচেতন থাকবে, তাদের কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। এছাড়া, বাংলাদেশের উদার শক্তিগুলি যথেষ্ট শক্তিশালী, এবং যাতে কোনো একটি গোষ্ঠী রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আধিপত্য করতে না পারে –এ বিষয়ে তারা সজাগ।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: ২০২৪ সালের জামায়াত কি ১৯৭১ সালের জামায়াত থেকে আলাদা?
শাফী মোস্তফা: জামায়াতে ইসলামী একাধিক ঐতিহাসিক ভুল করেছে, যা দলটির ঐতিহ্যকে জটিল করেছে। একটি উল্লেখযোগ্য ভুল ছিল ১৯৪৭ সালে, যখন জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা মওদুদী প্রথমে পাকিস্তানের সৃষ্টি সমর্থন না করে ভারতে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও পরে তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে যান, তবে সেখানে তাকে ভালোভাবে গ্রহণ হয়নি।
দলটি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভুল করে ১৯৭১ সালে, পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানকে একত্রিত রাখার চেষ্টা করে। এই আনুগত্য ব্যাপক নিন্দার সৃষ্টি করে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ হয়।
তবে ২০২৪ সালে জামায়াত ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এবং এই অস্থিরতা থেকে উদ্ভূত নতুন বাংলাদেশের অংশ হয়ে ওঠে। এই অবস্থানের পরিবর্তন পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে একেবারেই আলাদা। জামায়াত ৫ আগস্টের পর ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে, যা এখন অনেকেই প্রশংসা করছেন। তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে ছিল আন্দোলনকারীদের সমর্থন করা, সমমনাদের সঙ্গে বৈঠক করা এবং সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এছাড়া, দলটি বর্তমানে সকল ধর্মের সহাবস্থান প্রচারের জন্য কাজ করছে, যা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক।
এই কর্মকাণ্ডগুলোর মধ্য দিয়ে দেখা যাচ্ছে, জামায়াত একটি ভিন্ন সংগঠনে পরিণত হচ্ছে—যা গণতান্ত্রিক মূলনীতির সঙ্গে এবং বাংলাদেশের জনগণের বৃহত্তর আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে আরও সংগতিপূর্ণ।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন।
শাফী মোস্তফা: জামায়াতে ইসলামীর সাথে সরাসরি উগ্রপন্থার সম্পর্ক নির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হয়নি। তবে কিছু উদাহরণ আছে যেখানে জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত ব্যক্তিরা দলের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় হতাশ হয়ে পড়েছেন। আমার গবেষণায় দুইটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, এই ব্যক্তিরা পরবর্তীতে এমন উগ্রপন্থী সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়েছেন যারা সহিংস উপায়ে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিল। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং ফরাসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অলিভিয়ার রায়–এর পর্যবেক্ষণের সাথে মিলে যায়। রায় দেখিয়েছেন যে, যখন কোনো সংগঠন শান্তিপূর্ণ বা গণতান্ত্রিক উপায়ে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কার্যকর পরিকল্পনা দিতে ব্যর্থ হয়, তখন কিছু সদস্য সহিংস পদ্ধতির দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে।
এই পরিস্থিতি ইসলামী আন্দোলনের জটিলতাকে তুলে ধরে, যেখানে কৌশলগত মতভেদ থেকে উগ্রপন্থা ও সহিংসতা অবলম্বনের প্রবণতা তৈরি হতে পারে। এছাড়াও, এটি জামায়াতের মতো সংগঠনগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়—অর্থাৎ তাদের আদর্শগত লক্ষ্যগুলোর সাথে গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা। বিশেষ করে, যখন তাদের কিছু সমর্থক সহিংস পন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা দেখায়, তখন এই ভারসাম্য রক্ষা করা আরও কঠিন হয়ে যায়।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর বিকাশে চ্যালেঞ্জগুলো কী?
শাফী মোস্তফা: বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর (জেইআই) বিকাশের পথে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আধুনিক রাষ্ট্রগুলোর নীতি তিনটি প্রধান বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল: সংখ্যাগরিষ্ঠের মনোভাব, আধুনিক পশ্চিমা মূল্যবোধ, এবং বিরোধীদের ছোট করে দেখানোর আখ্যান। বাংলাদেশে এই বিষয়গুলো জামায়াতে ইসলামীর মতো ইসলামী দলের বৃদ্ধিতে বড় বাধা তৈরি করেছে। দেশের নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম এবং অভিজাত মহলে আধুনিক ও উদার মূল্যবোধ গভীরভাবে প্রোথিত, যা জামায়াতের আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে জামায়াতের গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়।
বাংলাদেশে ইসলামের প্রচলিত ধারা মূলত সুফিবাদ দ্বারা প্রভাবিত, যা আধ্যাত্মিকতার ওপর জোর দিয়ে রাজনৈতিক ইসলামকে কম গুরুত্ব দেয়। এই কারণে ধর্মীয়ভাবে উৎসাহী লোকদের মধ্যেও জামায়াতের প্রভাব সীমিত থাকে।
এছাড়া, বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতিতে বিভিন্ন দলের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে, যা প্রতিটি দলের শক্তি কমিয়ে দেয়। এর ফলে কোনো একটি দল, যেমন জামায়াত, সহজে প্রভাবশালী হয়ে উঠতে পারে না।
জামায়াতের আরেকটি বড় সমস্যা হলো ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে তাদের অবস্থান। এই ঐতিহাসিক ভুল এখনো তাদের পিছু ছাড়ে না, যা দলটির বর্তমান সুনাম এবং অবস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ভবিষ্যতে জামায়াতের সফলতা অনেকটাই নির্ভর করবে তারা এই অতীতের বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করে—ক্ষমা চাওয়া বা দলের নাম পরিবর্তন করে নতুনভাবে নিজেদের উপস্থাপনা করতে পারাই হতে পারে তাদের জন্য নতুন পথ।
ড. শাফী মো. মোস্তফা, সহযোগী অধ্যাপক, বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ভাষান্তর: মাসউদ বিন আব্দুর রাজ্জাক
আল/ দীপ্ত সংবাদ