ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গত ১৫ জুলাই রাতে হঠাৎ করেই ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানটি আলোচনায় চলে আসে। এই স্লোগানটি নিয়ে নানা বিতর্ক ও আলোচনা সত্ত্বেও, এটি আন্দোলনের গতি ও শক্তি বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
আজ এই স্লোগানটির দুই মাস পূর্ণ হওয়ার পর, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এর পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘স্লোগাননামা‘ শিরোনামে একটি পোস্টে নাহিদ ইসলাম উল্লেখ করেন, “‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার’ ছিল জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সাহসী স্লোগান। আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে যে বিভাজনের রাজনীতি চলছিল, সেই রাতে এই স্লোগানের মাধ্যমে সেটি পুরোপুরি অকেজো হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের ন্যারেটিভ ভেঙে পড়েছিল এবং অস্ত্র ও বুলেটের মাধ্যমে কিছুদিন টিকে থাকার চেষ্টা করা হয়েছিল।”
নাহিদ ইসলাম আরও যোগ করেন, “ইতিহাস কোন একক বক্তব্যের উপর নির্ভর করে না। ‘তুই রাজাকার, তুই রাজাকার’; ‘আমি নই, তুমি নই; রাজাকার, রাজাকার’—এই স্লোগানগুলোও রাতে বহুবার উচ্চারিত হয়েছে। আন্দোলনে বিভিন্ন কণ্ঠস্বর ও বক্তব্য মিশে যায়। বাস্তবতা ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী বক্তব্য ও কর্মকৌশল পরিবর্তিত হয়।
‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ স্লোগানও ছিল, এবং স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষেও একসময় প্রশংসা করা হয়েছে। ২০১৮ সালে হাসিনা ও মুজিবের ছবি বুকে নিয়ে আন্দোলন হয়েছিল, পরে রাজাকার স্লোগান সামনে আসার মাধ্যমে আন্দোলন গতি পেয়েছে। একটি আন্দোলনে নানা দিক ও ঘটনার সমন্বয় থাকে। প্রকৃত ইতিহাস এই সামগ্রিকতাকেই ধারণ করে।”
তিনি আরও বলেন, “রাজাকার ইস্যুটিকে পরিকল্পিতভাবে প্রাসঙ্গিক করে তোলা হয়েছিল, এবং শিক্ষার্থীদের রাজাকার ট্যাগ দিয়ে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এর ফলস্বরূপ, পরদিন মিছিলে হামলা করা হয় এবং নারী শিক্ষার্থীদের উপর নির্মম আক্রমণ করা হয়। পরবর্তী ঘটনা সবার জানা—ফ্যাসিস্টদের পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে।”
১৫ তারিখ সকালে রাজাকার স্লোগানের ব্যাখ্যা দিতে নাহিদ ইসলাম বিভিন্ন মিডিয়ার মুখোমুখি হন।
তাঁর ব্যাখ্যা ছিল, “রাজাকার শব্দের এই আন্দোলনে কোনো প্রাসঙ্গিকতা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই রাজাকার ইস্যু উত্থাপন করেছেন এবং শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারদের রাজাকার আখ্যা দিয়ে অপমান করেছেন। শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে বিদ্রুপ করে নিজেদেরকে ‘রাজাকার’ হিসেবে পরিচয় দেয়। শিক্ষার্থীদের ট্যাগ দিয়ে আন্দোলন দমন করা যাবে না। মূলত আন্দোলনকে দমন করার জন্যই রাজাকার ইস্যুটি সামনে আনা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে অবশ্যই এই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে।”
এমবি/দীপ্ত সংবাদ