আরজি কর মেডিকেল কলেজের ঘটনায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে উত্তাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জুনিয়র ডাক্তারদের বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে আন্দোলন শুরু হয়েছে। তারা দাবি তুলেছেন, মেডিকেল ব্যবস্থায় সংস্কার ও সুষ্ঠু চিকিৎসা ব্যবস্থার নিশ্চয়তার। ডাক্তারদের এ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার তাদের সাথে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেই আলোচনা সম্ভব হয়নি। এমনকি, বৃহস্পতিবার নবান্নের সভাঘরে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সরাসরি সম্প্রচার না হওয়ার কারণ দেখিয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা সেই আলোচনায় বসতে রাজি হননি।
এই জটিল পরিস্থিতিতে শনিবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং স্বাস্থ্য ভবনের সামনে গিয়ে আন্দোলনরত ডাক্তারদের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাদের দাবি শোনেন। রাজ্যের পরিস্থিতি শান্ত করার এই চেষ্টা সত্ত্বেও আন্দোলনের উত্তাপ কমছে না। ডাক্তারদের মতে, তাদের দাবিগুলো পুরণে সরকার আরও পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ অবস্থায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করে মুখ খুলেছেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। তার আসন্ন ছবি ‘টেক্কা‘-র প্রচারের এক ফাঁকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘এটা সত্যি যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্যার সমাধানে আন্তরিক। দেশের অনেক জায়গায় তো আলোচনার সুযোগই থাকে না, কিন্তু এখানে আলোচনার চেষ্টা হয়েছে। এটা অন্য জায়গায় দেখা যায় না।‘
সৃজিত আরও বলেন, ‘বিচারব্যবস্থার ওপর আমাদের আস্থা রাখতে হবে। যেখানে গাফিলতি হয়েছে, সেখানে দোষীদের দায় স্বীকার করতে হবে। তবে এটা বলা ভুল হবে যে কিছুই হচ্ছে না। মমতার প্রশাসন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।‘
গণমাধ্যমের ভূমিকার ওপর আলোকপাত করে সৃজিত বলেন, ‘মিডিয়ার এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাদের সঠিক প্রশ্ন করতে হবে এবং সমাজে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে। তবে ভুয়া খবর থেকে দূরে থাকতে হবে, যাতে বিতর্ক বা গুজব না ছড়ায়। আমরা এরই মধ্যে দেখেছি, বেশ কিছু ভুয়া সংবাদ ছড়িয়েছে—যেমন বলা হয়েছে, ১৫–১৬ জন এই ঘটনায় জড়িত, অথচ নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি। অনুমান করতে হবে, কিন্তু কোথায় থামতে হবে সেটাও জানতে হবে।‘
অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সৃজিত এই কথা বলেন, যিনি শুরু থেকেই ডাক্তারদের আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। স্বস্তিকা নিজেও মুখ্যমন্ত্রীর ‘উৎসবে ফিরুন‘ বক্তব্যের পাল্টা হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘উৎসবে ফিরছি না‘ বলে পোস্ট করেছেন।
পশ্চিমবঙ্গে স্বাস্থ্য খাতের এই সংকট রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একদিকে চেষ্টা করছেন শান্তি ফিরিয়ে আনার, অন্যদিকে আন্দোলনকারী ডাক্তাররা তাদের দাবির প্রতি অনড় অবস্থান বজায় রেখেছেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে সুষ্ঠু অবকাঠামো, নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ—এই দাবিগুলো সামনে এনে তারা আন্দোলন জোরদার করেছেন।
আলোচনার উদ্যোগের পরেও ডাক্তারদের পক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচার না হওয়ার কারণে আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানানোর ঘটনা রাজনৈতিক মহলেও চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে মমতার সরাসরি উপস্থিতি ও সমাধানের চেষ্টা এখন রাজনৈতিক মঞ্চের কেন্দ্রবিন্দুতে।
এমবি/দীপ্ত সংবাদ