জাতীয় সংগীত প্রতিটি দেশের জাতীয় পরিচয় ও ঐতিহ্যের প্রতীক। এটি সেই দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধকেও বিশ্বের সামনে তুলে ধরে।
তবে, বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশ তাদের জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন এনেছে। এমন পরিবর্তনগুলো সাধারণত জাতীয় উন্নতি, লিঙ্গ সমতা বা নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য করা হয়।
আসুন জেনে নেয়া যাক বিশ্বের কিছু দেশ সম্পর্কে, যারা বিভিন্ন কারণে তাদের জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন এনেছে। চলুন জেনে নেই তার পেছনের কারণগুলো সম্পর্কে।
রাশিয়া
২০০০ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভ্লাদিমির পুতিন দায়িত্ব নেয়ার পর ১৯৯০ সালের আগে ব্যবহৃত জাতীয় সংগীত ফিরিয়ে আনেন। তবে গানের কথায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। ১৯৯০ সালে যে জাতীয় সংগীত গ্রহণ করা হয়েছিল তাতে কোনো কথা না থাকায় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া অ্যাথলিটরা এর সমালোচনা করেছিলেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা
দেশটি ১৯৯৭ সালে আগের দুটি জাতীয় সংগীত থেকে কিছু অংশ নিয়ে নতুন একটি জাতীয় সংগীত তৈরি করে। আফ্রিকান ও ইংরেজি ভাষায় গানটি রচিত। তবে আফ্রিকান ভাষার অংশটি বর্ণবাদ আমলে ব্যবহৃত জাতীয় সংগীতের অংশ হওয়ায় এর সমালোচনা করেন অনেকে। নেলসন ম্যান্ডেলা সেটি রিকনসিলিয়েটরি ব্যবস্থা হিসেবে বর্ণবাদ–পরবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকার সংগীত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।
অস্ট্রেলিয়া
২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে অস্ট্রেলিয়ায় জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের ঘোষণার পর এই পরিবর্তন হয়। নতুন এ জাতীয় সংগীতে অস্ট্রেলিয়াকে আর ‘ইয়াং অ্যান্ড ফ্রি’ হিসেবে আর অভিহিত করার সুযোগ নেই। আদিবাসীদের সুদীর্ঘ ইতিহাস–ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটানোর অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
জার্মানি
জার্মানিতে লিঙ্গ সমতা নিয়ে আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে চলেছে, যার একটি প্রতিফলন দেখা যায় জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের প্রস্তাবে। জার্মানির সমতা বিষয়ক কমিশনার ক্রিস্টিন রোজে–ম্যোরিং প্রস্তাব করেন যে, ‘ফাটারল্যান্ড’ (পিতৃভূমি) শব্দটি পরিবর্তন করে ‘হাইমাট’ (জন্মভূমি) শব্দটি ব্যবহার করা হোক, যাতে জাতীয় সংগীতে লিঙ্গ সমতা প্রতিফলিত হয়। যদিও এই প্রস্তাবটি বিতর্কিত ছিল এবং চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলসহ অনেকে এর বিরোধিতা করেন, তবু এটি জার্মানির সামাজিক উন্নতির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ধরা যায়।
অস্ট্রিয়া
লিঙ্গ সমতা আনার জন্য অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংগীতে ‘ছেলেরা’–এর জায়গায় ‘মেয়েরা এবং ছেলেরা’ লেখা হয়েছে। এটি করা হয় ২০১২ সালে।
কানাডা
উত্তর আমেরিকার এই দেশটিও সম্প্রতি তাদের জাতীয় সংগীতকে আরও লিঙ্গ নিরপেক্ষ করেছে। সংগীতের দ্বিতীয় লাইনে ‘তোমার সব ছেলেরা’–এর জায়গায় লেখা হয়েছে ‘আমরা সবাই’।
নেপাল
২০০৮ সালে নেপালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়। তার আগের বছর নেপালে নতুন একটি গানকে জাতীয় সংগীতের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৬২ সালে গ্রহণ করা নেপালের আগের জাতীয় সংগীতে রাজতন্ত্রের প্রশংসা ছিল। তাই এতে পরিবর্তন আনা হয়।
আফগানিস্তান
দেশটিতে বেশ কয়েকবার জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনা হয়। তালেবান শাসনামলে আফগানিস্তানে কোনো জাতীয় সংগীতই ছিল না। পরে ২০০২ সালে পুরোনো জাতীয় সংগীতকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। পরে ২০০৬ সালে তৎকালীন কারজাই সরকার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে জাতীয় সংগীতও পরিবর্তন করে।
রুয়ান্ডা
আফ্রিকার এই দেশটিতে ১৯৯৪ সালে মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে ওই দেশে পাঁচ থেকে ১০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। গণহত্যা–পরবর্তী রুয়ান্ডার ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে দেশটি ২০০১ সালে একটি নতুন জাতীয় সংগীত চালু করা হয়।
সূত্র: ডয়চে ভেলে