অধ্যাপক তানজীমের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক এক বিবৃতি দিয়েছে। রবিবার (১১ আগষ্ট) এ বিবৃতি প্রদান করেন তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, ‘আমরা বনাম তোমরা দ্বন্দ্বের যে ধারাবাহিক রাজনীতি, সেটির পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থী–জনতার বিজয়কে নস্যাৎ করার অপচেষ্টা চলছে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সনাতন, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও তাদের উপাসনালয়ে হামলা, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, ভাস্কর্য ভাংচুর, রাষ্ট্রীয় স্থাপনার নাম পরিবর্তন এবং বাংলাকে প্রতিস্থাপন করে আরবি হরফের চিত্র এঁকে নতুন বাংলাদেশকেও অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। এসবের সুযোগ নিয়ে বেশ কিছু ভারতীয় ‘গদি মিডিয়া‘সহ বিভিন্ন মহল বাংলাদেশকে একটি ‘ইসলামি জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করার জোর প্রচারণা চালাচ্ছে। আমরা মনে করি, এসব ঘটনা ঘটিয়ে গণঅভ্যুত্থানে পরাজিত শক্তি ও তার দেশি–বিদেশি দোসরদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের সুযোগ তৈরি করে দেয়া হচ্ছে।“
এই অপচেষ্টার অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সক্রিয় সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দীন খান সম্পর্কে একটি ঘটনার বরাত দিয়ে বিভ্রান্তিমূলক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মানহানিকর তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই অধ্যাপক তানজীম কোনো ধরনের বৈষম্যের পক্ষে নন। কাউকে কোনো তকমা বা আখ্যা দিয়ে তার নাগরিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে অধ্যাপক তানজীম বরাবরই সোচ্চার। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে জানা যায়, তিনি উপস্থিত হবার আগেই ক্যালিগ্রাফি শিল্পীরা অনভিপ্রেত এবং আগ্রাসী আচরণের শিকার হন। যা অনাকাঙিক্ষত এবং ন্যাক্কারজনক। অধ্যাপক তানজীম এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক ভয়–ভীতি দেখানো, সন্দেহের বশে অন্য নাগরিকের ফোনের তথ্য ঘেঁটে দেখা, আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার, জিম্মি করে রাখা কোনোভাবেই সর্মথন করেন না।
তিনি উত্তেজিত শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের ক্ষোভ প্রশমন করে শহীদ মিনারে আরবি ক্যালিগ্রাফি করতে আসা শিক্ষার্থীদের রক্ষার উদ্দেশ্যে সকলের সাথে কথা বলেছেন। ধর্মীয় বিভাজন উস্কে দিয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে তা কীভাবে কতিপয় ভারতীয় ‘গদি মিডিয়া‘ কর্তৃক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলমান প্রোপাগান্ডাকেই শক্তিশালী করবে সেটি ব্যাখ্যা করেছেন। পরস্পরের দেয়াল–লেখা মুছে ফেললে অসন্তোষ তৈরি হবে সেটাও জানিয়েছেন।
শিক্ষক হিসেবে বরাবরের মতোই আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষেই তিনি দাঁড়িয়েছেন। ফলস্বরূপ, উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি সামাল দিয়ে ক্যালিগ্রাফি করতে আসা শিক্ষার্থীদের রক্ষা করায় অধ্যাপক তানজীমকে তারা ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু অধ্যাপক তানজীম ন্যায়সংগত এবং বৈষম্যহীন অবস্থানে অনড় থাকার ফলে একটা পক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া তাঁদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভকে এখন ব্যবহার করতে চাইছে এবং গণঅভ্যুত্থানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের ভূমিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা করছে। আমরা এই ধরনের ঘৃণ্য উস্কানিমূলক রাজনীতি না করার আহ্বান জানাই।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক ফ্যাসিবাদ বিরোধী অকুতোভয় শক্তি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি ইসলামবিদ্বেষী, সংখ্যালঘুবিদ্বেষী, জাতিবাদী ও সাম্প্রদায়িক বিভেদ তৈরির রাজনীতিকেও বরাবরই প্রত্যাখ্যান করেছে। গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে সমুন্নত রাখতে এই মুহূর্তে যেকোনো প্রকার ধর্মীয়, জাতিবাদী অথবা রাজনৈতিক বিভেদ এবং বিদ্বেষমূলক প্রচারণাকে আমাদের রুখে দিতে হবে। যেসব পক্ষের মধ্যে আসলে বিরোধ নেই তাদেরকে বিরোধী আকারে জাহির করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সমাজের ভিন্ন মতাবলম্বীদের একে অপরের কাছাকাছি আসার, বোঝার এবং পথ চলার সুযোগ তৈরি করতে হবে। ভিন্ন মত, ভিন্ন চিন্তা, ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন সংস্কৃতি এবং ভিন্ন মূল্যবোধের সহাবস্থানের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই আমরা বিভাজনমূলক শক্তি ও রাজনীতিকে পুরোপুরি উৎখাত করতে পারব। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে আমরা অধ্যাপক তানজীমউদ্দীন খানের বিরুদ্ধে চলমান অপপ্রচারকে প্রতিহত করার এবং পরস্পরকে বোঝাবুঝির পথ সৃষ্টির জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানাই।
আল/ দীপ্ত সংবাদ