জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি মো. আল–মামুন বলেছেন, স্বাধীনতার এতো বছর পরে এসে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত না।
বুধবার (১৭ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।
তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সারা দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা গত ৪ জুলাই থেকে আন্দোলন করছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথে শান্তিপূর্ণভাবে এবং কোন রকম সহিংসতা ছাড়াই তারা অবরোধ করছে। আমরা জাতীয় ছাত্র সমাজ সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন ও গণমানুষের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছি।
আন্দোলনের শুরুর দিকে ছাত্রলীগও কোটা সংস্কারের পক্ষে নমনীয় ছিল। পরে সরকারের বিভিন্ন মহলের বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে তাদের বক্তব্যও পাল্টাতে থাকে। কিন্তু গত দুদিন ১৫–১৬ জুলাই পরিস্থিতি খুব দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে।
তিনি আরও মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। শত শত শিক্ষার্থী আহত হয়ে সঙ্কটাপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ওপর কাপুরুষোচিত ও ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই। নিহতদের বিদেহী আত্মার শান্তি ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। একই সঙ্গে যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের দ্রুত খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করতে হবে।
আল মামুন বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ইতোমধ্যে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের বীর মুক্তিসেনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
আল–মামুন আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির সূর্য সন্তান। তারা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। কিন্তু বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা কোটার ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ– এই সংখ্যাটা অনেক বেশি। মুক্তিযোদ্ধারা অবশ্যই সুবিধা পাবেন, তাদের সন্তান কিংবা যারা তাদের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল তারা সুবিধা পাবেন। কিন্তু নাতি–নাতনি পর্যন্ত ৩০ শতাংশ সুবিধা পাবেন– এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করে শিক্ষার্থীরা।
মুক্তিযোদ্ধারা সরকারি চাকরিতে ঢোকার বয়সসীমা পেরিয়ে গেছেন, তাদের সন্তানেরাও চাকরির বয়স পেরিয়ে গেছেন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। স্বাধীনতার এতো বছর পরে এসে এই কোটা ৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত না। একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বিবেচনায় নিয়ে অপ্রয়োজনীয় কোটাসুবিধা বাতিল করে মেধাবিকাশের সুযোগ উন্মোচিত করে কোটাব্যবস্থার সংস্কার করা উচিত। শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সমতায় আনার জন্য বিশেষ বিবেচনা রাখতে হবে।
সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম খান বলেন, সবুজের বুকে লাল বৃত্ত খচিত এই মানচিত্র ছাত্র আন্দোলনের অর্জন। স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরবর্তীতে কোন ছাত্র আন্দোলন বিফলে যায়নি, ভবিষ্যতেও হয়তো যাবে না। ছাত্ররা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, ইতিহাস সৃষ্টি করবে। কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্রদের আন্দোলন পুরোপুরি যৌক্তিক। রাষ্ট্রের উচিত এই দাবি পর্যালোচনা করে কোটা প্রথা সীমিত করা। সাম্যতা বজায় রাখতে এটিকে বাস্তবায়ন জরুরি। জাতীয় ছাত্রসমাজ এই দাবিকে শতভাগ সমর্থন করে এবং শিক্ষার্থীদের সকল নায্য দাবির সঙ্গে ছাত্রসমাজ ছিলো, আছে এবং ভবিষ্যতে থাকবে।