বগুড়ার আদমদীঘিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুষ ছাড়া প্রকল্পের ফাইলে স্বাক্ষর না করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
ভূক্তভোগীদের অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রুমানা আফরোজ ও প্রকল্প ব্যস্তবায়ন কর্মকর্তা কাওছার আলীকে তাদের চাহিদা মতো ঘুষ না দিলে বাড়ে জটিলতা। দুই কর্মকর্তা যোগসাজশে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রাপ্য টাকা থেকে লাখে ১৮ শতাংশ টাকা দাবী করেন। এমন অভিযোগ তুলেছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। এতে করে ওই দুই কর্মকর্তা সকলের কাছে সমালোচনার মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন বলে মন্তব্য করছেন অনেকেই।
জানা যায়, উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রকল্প ও আর্থিক লেনদেনের কাজ হয়ে থাকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে। আর সরকারি নিয়মানুসারে যে কোনো প্রকল্পের সভাপতি হয়ে থাকেন ইউএনও। কাজেই তারা দু’জনে একটি প্রকল্পের কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। তাই তাদের যোগসাজশটাও একটু বেশি।
দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় গ্রামীণ পর্যায়ে জনসাধারণের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন সরকার। প্রতি অর্থ–বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) এবং কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) এই প্রকল্পের অধীনে উপজেলা পর্যায়ে লাখ লাখ টাকা ও খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব বরাদ্দ দিয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কার্যক্রম রাস্তা, ব্রীজ ও ড্রেন নির্মাণ করায় এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। পিআইসি’র মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সমন্বয়ে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়। যার তদারকি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। ফলে তাদের হাতে এসব বরাদ্দের সার্বিক ক্ষমতা থাকার কারনে একরকম জিম্মি করে রাখেন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইউপি চেয়ারম্যানরা জানান, বর্তমান ইউএনও উপজেলায় যোগদানের পর গত ৭মাস ধরে পরিষদের জন্য বরাদ্দ ওয়ান পারর্সেন্টেজ প্রকল্প খাত থেকে আমারা একটি টাকাও পাইনি। তার নিকট আবেদন করলে তিনি প্রাপ্য টাকার ৫০শতাংশ দিতে হবে বলে দাবী করেন। রাজি না হওয়ায় দিনের পর দিন এই খাত থেকে আমরা বঞ্চিত হয়ে আসছি। অথচ বিগত দিনে এমন ছিলো না। আমরা সময়মতো ওয়ান পার্সেন্টজ প্রকল্পের টাকা পেয়ে যেতাম এবং প্রাপ্ত সেই টাকা দিয়ে ছোট–বড় উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করতাম। এছাড়া টিআর–কাবিটা প্রকল্পের বিলের জন্য পিআইও’র অফিসে গেলে দুই অফিস বাবদ বিলের ১৮পার্সেন্টেজ টাকা দাবী করে।
এসবের দাবিকৃত পার্সেন্টেজ দিতে রাজি না হলে বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে বিল পাশে জটিলতা দেখানো হয়। কয়েকদিন আগে কয়েক লাখ টাকা বিলের বিষয় নিয়ে পিআইও অফিসের স্টাফদের সঙ্গে তর্কবিতর্কের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতি অবস্থারও সৃষ্টি হয়।
পার্সেন্টেজের জ্বালায় কাজ করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয় হাটবাজার রক্ষণাবেক্ষণের প্রকল্পের কাজের বিল তুলতে গেলেও ইউএনও রুমানা আফরোজ ১০পার্সেন্টেজ টাকা নেন। অন্যথায় বিল দিতে দেরি করে, সমস্যা দেখিয়ে জটিলতা বৃদ্ধি করান তিনি। যেন তাদের কাছে প্রকল্পের কাজের পার্সেন্টেজ বৈধ হয়ে গেছে, এটা তাদের অধিকার। এমন পরিস্থিতি ও বিড়ম্বনা থেকে সকলে পরিত্যাণ পেতে চান।
একইভাবে ওই দুই কর্মকর্তার পার্সেন্টেজের ফিরিস্তি তুলে ধরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইউপি সদস্য জানান, দুই মাসে আগে ইউএনও’র কাছে প্রায় ৭লাখ টাকার একটা প্রকল্পের বিলের জন্য গিয়েছিলাম। তিনি ওই সময় ৫পার্সেন্টেজ হিসাবে টাকা দাবী করে। প্রথমে তার কথা শুনে অবাক হই। কারণ এর আগে এভাবে কেউ চায়নি। যেহেতু তিনি এখন দায়িত্বে তাই বাধ্য হয়ে ৩০হাজার টাকা দিতে হয়।
এরপর পিআইও অফিসে গেলে তাদেরও ১২–১৩ পার্সেন্টেজে টাকা দিতে হয়। এছাড়াও কাজের সাইট পরিদর্শনে এসেও সামান্য ত্রুটি পেলে ২০–৩০ হাজার টাকা দাবী করে বসে পিআইও কাওছার আলী। ইউএনও ও পিআইও মিলে লাখে ১৮পার্সেন্টেজ টাকা নিলে কাজ করবো কিভাবে। যদি অন্যের পাওয়া প্রকল্পের কাজ কেউ কিনে নিয়ে করতে চাইলে তার মূলধনও দেখতে পাওয়া যাবে না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কাওছার আলী জানান, ১৮হোক কিংবা ৩৬ পার্সেন্টেজ, আগে তাদের কাজ সরজমিনে তদারকি করে আসেন তারা কি কাজ করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ এমন অভিযোগ বিষয়ে বলেন, আমার সঙ্গে প্রকল্পের কাজে কোন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সম্পৃক্তা নেয়। এ বিষয়ে পিআইও বলতে পারবে।
রিপন/ আল / দীপ্ত সংবাদ