বাংলা মাসের নামগুলোর সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভূত এবং ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্রের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। প্রতিটি মাসের নাম সূর্যের অবস্থান ও সংশ্লিষ্ট নক্ষত্রের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়েছে। আসুন জেনে নেই কীভাবে এলো বাংলা ১২ মাসের নাম এবং এর পেছনের ব্যাখ্যা:
বৈশাখ– বৈশাখ বাংলা বছরের প্রথম মাস। এ মাসেই গ্রীষ্মকালের শুরু। মাসটির নামকরণ করা হয়েছে বিশাখা নক্ষত্রের নাম অনুসারে। বৈশাখ মাসে সূর্যের অবস্থান বিশাখা নক্ষত্রের কাছে থাকে।
জ্যৈষ্ঠ– বাংলা বছরের দ্বিতীয় মাস এবং বছরের সবচেয়ে গরম মাস জ্যৈষ্ঠ। জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নাম থেকে এসেছে জ্যৈষ্ঠ মাসের নাম। এই মাসে সূর্যের অবস্থান জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের কাছে থাকে।
আষাঢ়– আষাঢ় মাস হলো বাংলা বছরের তৃতীয় মাস। এই মাসে বর্ষাকালের শুরু হয় এবং প্রকৃতি নবজীবন লাভ করে। আষাঢ় নামটি এসেছে আষাঢ়া বা পূর্বষাঢ়া নক্ষত্রের নাম থেকে। আষাঢ় মাসে আষাঢ়া নক্ষত্রের আবির্ভাব ঘটে।
শ্রাবণ– বর্ষাকালের দ্বিতীয় মাস মাস হলো শ্রাবণ। এই মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং প্রকৃতি আরও সজীব ও সবুজ হয়ে ওঠে। শ্রবণা নক্ষত্রের নাম থেকে এসেছে এই মাসটির নাম। শ্রাবণ মাসে সূর্যের অবস্থান শ্রবণা নক্ষত্রের কাছে থাকে।
ভাদ্র– বর্ষাকালের শেষ এবং শরৎকালের প্রথম মাস হিসেবে ধরা হয় ভাদ্র মাসকে। এই সময়ে বৃষ্টিপাত ধীরে ধীরে কমে আসে এবং আবহাওয়া পরিবর্তন শুরু হয়। ভাদ্রপদ নক্ষত্রের নাম থেকেই ভাদ্র মাসের নামকরণ হয়েছে। ভাদ্র মাসে সূর্যের অবস্থান ভাদ্রপদ নক্ষত্রের কাছে থাকে।
আশ্বিন– আশ্বিন মাসে পরিপূর্ণতা নিয়ে আবির্ভাব ঘটে শরৎকালের। এই সময়ে আবহাওয়া স্বচ্ছ এবং মনোরম হয়ে ওঠে। আশ্বিনী নক্ষত্রের নাম থেকে আশ্বিন মাসের নামকরণ হয়েছে। আশ্বিন মাসে সূর্যের অবস্থান আশ্বিনী নক্ষত্রের কাছে থাকে।
কার্তিক– হেমন্তকালের প্রথম মাস হলো কার্তিক। এই সময়ে আবহাওয়া ধীরে ধীরে শীতল হতে শুরু করে। কার্তিক মাসে সূর্যের অবস্থান কার্তিকা নক্ষত্রের কাছে থাকে। কার্তিকা নক্ষত্রের নাম থেকে এই মাসের নামকরণ হয়েছে।
অগ্রহায়ণ– অগ্রহায়ণ হলো হেমন্তকালের দ্বিতীয় মাস। এ মাসে শীতল বাতাস বইতে শুরু করে এবং প্রকৃতি সজীব হয়ে ওঠে। অগ্রহায়ণ নক্ষত্রের নাম থেকে অগ্রহায়ণ মাসের নামকরণ হয়েছে। এই মাসে সূর্যের অবস্থান অগ্রহায়ণ নক্ষত্রের কাছে থাকে।
পৌষ– শীতকালের প্রথম মাস হলো পৌষ। এই সময়ে শীতের প্রকোপ শুরু হয় এবং তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। প্রকৃতি শীতল ও শুষ্ক হয়ে ওঠে। এই মাসের নামকরণ হয়েছে পুষ্যা নক্ষত্রের নাম অনুসারে। পৌষ মাসে সূর্যের অবস্থান পুষ্যা নক্ষত্রের কাছে থাকে।
মাঘ– মাঘ হলো শীতকালের দ্বিতীয় মাস। মাঘা নক্ষত্রের নাম থেকে এসেছ মাঘ মাসের নাম। এ মাসে সূর্যের অবস্থান মাঘা নক্ষত্রের কাছে থাকে। এই সময়ে প্রাকৃতি শীতল হয়ে ওঠে এবং ঠান্ডার তীব্রতা বেড়ে যায়।
ফাল্গুন– ফাল্গুন হলো বসন্তের প্রথম মাস। ফাল্গুনী নক্ষত্রের নাম থেকে ফাল্গুন মাসের নামকরণ হয়েছে। মাসে সূর্যের অবস্থান ফাল্গুনী নক্ষত্রের কাছে থাকে। এই সময়ে প্রকৃতি তার সম্পূর্ণ সৌন্দর্য নিয়ে আবির্ভূত হয়।
চৈত্র– বসন্তকালের শেষ মাস এবং বাংলা বছরের শেষ মাস হলো চৈত্র। চিত্রা নক্ষত্রের নাম থেকে এ মাসের নামকরণ হয়েছে। চৈত্র মাসে সূর্যের অবস্থান চিত্রা নক্ষত্রের কাছে থাকে। এই সময়ে তাপমাত্রা আরও বাড়তে থাকে।
বাংলা মাসের নামগুলো শুধু সময় গণনার জন্য নয়, বরং তারা বাংলা সংস্কৃতি, প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্র, এবং প্রকৃতির সাথে আমাদের গভীর সম্পর্ককে তুলে ধরে। আমাদের ভাষা এবং সংস্কৃতির সাথে এই মাসের নামগুলোর ইতিহাস ও সম্পর্ক জানলে, আমরা আমাদের ঐতিহ্য এবং পরিচয় সম্পর্কে আরও সচেতন হতে পারি।
এমবি/এসএ/দীপ্ত সংবাদ