শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪

রক্তের গ্রুপ: কে কাকে রক্ত দিতে পারবে?

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

নিরাপদ রক্তদানের জন্য দাতাগ্রহীতাসহ রক্তদানের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে যে বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়, তা হচ্ছে রক্তের শ্রেণীবিভাগ। রক্তের ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের মধ্যে রক্তের আদানপ্রদানের সামঞ্জস্যতার ওপর নির্ভর করে জরুরি চিকিৎসার অগ্রীম প্রস্তুতি। সঠিক সময়ে সঠিক রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে বেঁচে যেতে পারে একটি জীবন। আর এই মহৎ উদ্দেশ্যকে সাধুবাদ জানিয়েই প্রতিবছর ১৪ জুন পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। এই উপলক্ষটি নিরাপদ রক্তের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায় এবং উদ্বুদ্ধ করে এই মহান কাজে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে। চলুন, বিভিন্ন ধরনের রক্তের গ্রুপের বৈশিষ্ট্য এবং তাদের মধ্যকার সামঞ্জস্যতা সম্বন্ধে সম্যক ধারণা নেওয়া যাক।

বিভিন্ন ধরনের রক্তের গ্রুপ

রক্তের শ্রেণীবিন্যাসের নেপথ্যে রয়েছে রক্তে বিদ্যমান দুটি উপাদান।

. লোহিত রক্তকণিকার (আরবিসি) পৃষ্ঠে থাকা প্রোটিন অণু, যার নাম অ্যান্টিজেন। অ্যান্টিজেন মুলত ‘, ‘বি‘, এবং ‘রেসাস (আরএইচ) ডি’ – এই ৩ ধরনের হয়ে থাকে।

. প্লাজমাতে অবস্থিত বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন, যেগুলো অ্যান্টিবডি নামে পরিচিত। অ্যান্টিবডি ‘অ্যান্টিএ’ এবং ‘অ্যান্টিবি’ – এই ২ শ্রেণীর হয়ে থাকে।

এই উপাদানগুলো মাবাবার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সন্তানের দেহে আসে। রক্তের শ্রেণীবিন্যাসের মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত দুটি ব্যবস্থা হচ্ছে– ‘এবিও’ এবং ‘রেসাস (আরএইচ) ফ্যাক্টর’।

এবিও সিস্টেমে রক্তের ধরন ৪ প্রকার– ‘‘, ‘বি‘, ‘এবি‘, এবং । রক্তে অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডির উপস্থিতির উপর নির্ভর করে এগুলোর ভিন্নতা হয়।

আরএইচ সিস্টেমে রক্তে আরএইচডির উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে এবিওর প্রত্যেকটি গ্রুপ পজিটিভ বা নেগেটিভ হয়ে থাকে। এভাবে আরএইচ সিস্টেম অনুসারে গ্রুপ হয় মোট ৮টি। চলুন, এবার এই গ্রুপগুলোর বিস্তারিত জানা যাক।

+

লোহিত রক্তকণিকার পৃষ্ঠে অ্যান্টিজেন এবং আরএইচডি’র উপস্থিতির মাধ্যমে গ্রুপ +’ চিহ্নিত করা হয়। এই গ্রুপের রক্তের প্লাজমাতে অ্যান্টিবি অ্যান্টিবডি থাকে। এই অ্যান্টিবডিগুলো বিঅ্যান্টিজেনযুক্ত লোহিত রক্ত কোষকে আক্রমণ করে। আরএইচডির উপস্থিতির অর্থ হলো এই রক্ত -‘ রক্তের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থা এবং রক্তদানের সময় এই দুই মেরুর রক্ত শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।

এই গ্রুপেও লোহিত রক্তকণিকায় অ্যান্টিজেন উপস্থিত থাকে। তবে আরএইচডির অভাবে গ্রুপটি আরএইচডি-‘ হিসেবে প্রতীয়মান হয়। +’ রক্তের মতো -‘ রক্তের প্লাজমাতেও অ্যান্টিবি অ্যান্টিবডি থাকে। ফলে এটি বিগ্রুপের রক্তের বিরুদ্ধে নেতিবাচক অবস্থান নেয়। অন্যদিকে, ‘আরএইচডির অনুপস্থিতি গর্ভাবস্থায় আরএইচ অসামঞ্জস্যতার মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে একজন ‘আরএইচডি-’ মায়ের রক্ত একটি ‘আরএইচডি+’ ভ্রূণের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এতে করে নবজাতকের হেমোলাইটিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।

বি+

বি অ্যান্টিজেন এবং আরএইচডিসমন্বিত লোহিত রক্তকণিকার পৃষ্ঠ রক্তকে বি+’ গ্রুপ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে। এই ধরনের রক্তের প্লাজমাতে থাকে অ্যান্টিএ অ্যান্টিবডি, যা অ্যান্টিজেন সমৃদ্ধ লোহিত রক্তকণিকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। বি+’ রক্তের আরএইচডি‘ ‘বি-‘ রক্তের তুলনায় ভিন্ন প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করতে পারে।

বি

এই গ্রুপটি রক্তের এমন ধরনকে প্রতিনিধিত্ব করে, যার লোহিত রক্ত কণিকায় অ্যান্টিজেন বিথাকে কিন্তু আরএইচডিথাকে না। এই রক্তের বৈশিষ্ট্য হচ্ছেএর প্লাজমায় অ্যান্টিএ অ্যান্টিবডি বিদ্যমান। আরএইচ ফ্যাক্টর না থাকার ফলে বি-‘ রক্তের অধিকারী ব্যক্তিরা রক্ত সঞ্চালন এবং গর্ভাবস্থায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। কেননা ‘আরএইচডি+’ ভ্রূণ বহনকারী একজন আরএইচডি-‘ মায়ের রক্ত আরএইচ ফ্যাক্টরের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে।

+

এই গ্রুপের রক্তে লোহিত রক্তকণিকার পৃষ্ঠে এবং বিকোনো অ্যান্টিজেনই থাকে না, কিন্তু আরএইচডিথাকে। +’ রক্তের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর প্লাজমায় অ্যান্টিএ এবং অ্যান্টিবি দুই অ্যান্টিবডিই থাকে। এতে করে এই রক্ত ‘এ’ এবং বিউভয় অ্যান্টিজেন থাকা লোহিত রক্তকণিকাকে আক্রমণ করে। এবং বিঅ্যান্টিজেনের অনুপস্থিতির কারণে অন্যান্য রক্তের সঙ্গে এর ব্যাপক সামঞ্জস্যতা রয়েছে।

এটি এমন একটি গ্রুপ যার রক্তের লোহিত রক্তকণিকায় অ্যান্টিজেনে ‘, ‘বি‘, এবং আরএইচডিকোনোটাই থাকে না। +’ এর মতো এই রক্তেও প্লাজমা অ্যান্টিএ এবং অ্যান্টিবি অ্যান্টিবডিতে সমৃদ্ধ। এই সমস্ত অ্যান্টিজেনের অনুপস্থিতির কারণে -‘ রক্ত সার্বজনীন দাতার গ্রুপ হিসেবে বিবেচিত। এটি অ্যান্টিজেন সংক্রান্ত কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি ছাড়াই যে কোনো রক্তের রোগীদের দেওয়া যেতে পারে।

এবি+

যে রক্তের লোহিত রক্তকণিকার পৃষ্ঠে অ্যান্টিজেন এবং বিএর পাশাপাশি আরএইচ ফ্যাক্টরও থাকে, সে রক্তের গ্রুপের নাম এবি+’। এ ধরনের রক্তের প্লাজমায় অ্যান্টিএ বা অ্যান্টিবি কোনো অ্যান্টিবডিই থাকে না। এই বৈশিষ্ট্যটি এবি+’ রক্তকে সার্বজনীন গ্রহীতা গ্রুপ হিসেবে প্রতীয়মান করেছে। এবং বিউভয় অ্যান্টিজেন এবং আরএইচ ফ্যাক্টরের উপস্থিতির কারণে রক্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এটি সর্বাঙ্গীনভাবে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ গ্রুপ।

এবি

লোহিত রক্ত কণিকায় আরএইচডিনেই অথচ এবং বিউভয় অ্যান্টিজেনই বিদ্যমান, এমন রক্তকে চিহ্নিত করা হয় এবি-‘ হিসেবে। এবি+’ এর মতো এই রক্তের প্লাজমাও অ্যান্টিএ বা অ্যান্টিবি অ্যান্টিবডিবিহীন। এবি-‘ রক্তের অধিকারীদের আরএইচ সংবেদনশীলতা রোধ করতে অবশ্যই আরএইচ পজিটিভ রক্ত গ্রহণ থেকে দূরে থাকতে হবে।

রক্তের গ্রুপগুলোর মধ্যে কে কাকে রক্ত দিতে পারবে

যে রক্তগুলো পারস্পরিক সহাবস্থানে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, অনাকাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে সেগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরী। চলুন, রক্তের বিভিন্ন গ্রুপগুলোর মধ্যকার রক্ত সঞ্চালনের সামঞ্জস্যতা এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।

+’ গ্রুপের ব্যক্তিরা আরএইচডিনির্বিশেষে বা গ্রুপ থেকে রক্ত গ্রহণ করতে পারবে, কিন্তু দিতে পারবে শুধুমাত্র +’ এবং এবি+’ গ্রুপের ব্যক্তিদের। -‘ গ্রুপ শুধু -‘ এবং -‘ গ্রুপ থেকে রক্ত নিতে পারবে, তবে দান করতে পারবে আরএইচডিনির্বিশেষে এবং এবিউভয় গ্রুপকে।

বি+’ এর দাতা হিসেবে করতে পারে বি+’, ‘বি-‘, ‘+’, এবং -‘ গ্রুপ। অন্যদিকে গ্রহীতা হিসেবে কাজ করতে পারবে শুধু বি+’ এবং এবি+’ গ্রুপ। বি-‘ গ্রুপ বি-‘ এবং -‘ গ্রুপের রক্ত নিতে পারবে, আর রক্ত দিতে পারবে বি+’, ‘বি-‘, ‘এবি+’, এবং এবি-‘ গ্রুপগুলোকে।

+’ রক্তের গ্রহীতারা হলো যেকোনো আরএইচ+ গ্রুপ, তবে দাতা গ্রুপ হলো শুধু +’ এবং -‘-‘ রক্ত গ্রহীতা হিসেবে শুধু -‘ রক্ত নিতে পারে, কিন্তু সার্বজনীন দাতা হিসেবে রক্ত দিতে পারে সমস্ত গ্রুপকে। অপরদিকে, সার্বজনীন গ্রহীতা হিসেবে এবি+’ গ্রুপ সব ধরনের রক্ত গ্রহণ করতে পারে, কিন্তু দাতা হিসেবে শুধু এবি+’ গ্রুপভুক্ত ব্যক্তিদেরকেই রক্ত দিতে পারে। এবি-‘ রক্তের দাতা গ্রুপ হলো এবি-‘, ‘-‘, ‘বি-‘, এবং -‘ এবং গ্রহীতা গ্রুপ এবি+’ এবং এবি-‘

শেষাংশ

সর্বপরি, লোহিত রক্তকণিকায় অ্যান্টিজেন এবং বিথাকা এবং না থাকার ভিত্তিতে রক্তের গ্রুপ যথাক্রমে এবং বিহিসেবে চিহ্নিত হয়। দুটো অ্যান্টিজেনই থাকলে এবিগ্রুপ এবং দুটোর কোনটিই না থাকলে নির্ধারিত হয় গ্রুপ হিসেবে।

পাশাপাশি আরএইচ ফ্যাক্টরের উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতি সংশ্লিষ্ট গ্রুপের সঙ্গে যথাক্রমে পজিটিভ এবং নেগেটিভি মার্ক যুক্ত করে। ৮টি গ্রুপের প্রত্যেকটি নিদেনপক্ষে নিজ গ্রুপের সঙ্গে রক্তের আদানপ্রদান করতে সক্ষম। তন্মধ্যে প্রতিটি ‘আরএইচ+’ গ্রুপকে রক্ত দিতে পারে বিধায় +’ রক্তের চাহিদা থাকে সর্বাধিকা। উপরন্তু, সর্বদাতা গ্রুপ হিসেবে পরিচিত -‘ এবং সর্বগ্রহীতা এবি+’

 

সুপ্তি/ দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More