শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪
শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪

ইউরোপের রাজত্ব পুনরুদ্ধার করল রিয়াল মাদ্রিদ

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

১৯৯২ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নামকরণের পর ৬ বার ফাইনালে উঠল রিয়াল মাদ্রিদ; জিতল ছয়বারই। এ যেন এলাম, দেখলাম আর জয় করলাম! ডর্টমুন্ডের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে ১৫তম বারের মতো ইউরোপসেরার মুকুট মাথায় পরল ‘চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাজা’ খ্যাত মাদ্রিদের দলটি।

শনিবার রাতে ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী উইম্বলি স্টেডিয়ামে জার্মান ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে ২০ গোলে হারিয়ে ইউরোপের রাজত্ব পুনর্দখল করেছে কার্লো আনচেলত্তির রিয়াল মাদ্রিদ।

মূলত প্রথমার্ধে তিনটি নিশ্চিত গোলের যে সুযোগগুলো নষ্ট করেছে ডর্টমুন্ড, তারই খেসারত দিতে হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে। ফলে এই হারে নিজেদের দোষারোপ করা ছাড়া উপায় নেই দলটির।

ফাইনাল ম্যাচ জিতে শিরোপা উঁচিয়ে ধরার জন্য যে চকিতে আসা দুয়েকটি সুযোগ নির্ভুলভাবে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হয়, জয় নিশ্চিত করতে হয়তা বোধহয় জানেই না জর্মানির এই ক্লাবটি। অন্তত ম্যাচটি সরাসরি দেখা যে কেউ এই মন্তব্যের সঙ্গে একমত হবেন।

আর ঠিক সেই কাজটিই ঠিকঠাক করে ট্রফিটি নিয়ে উল্লাসে মাতল রয়্যাল হোয়াইট জার্সিধারীরা।

মাচের প্রথমার্ধে একেবারেই ম্যাড়মেড়ে পারফর্ম করেন রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়রা। অলঅ্যাটাকে উঠতে গিয়ে বারবার রক্ষণ আলগা করে ফেলছিলেন লস ব্লাঙ্কোসদের ডিফেন্ডাররা। এরই মাঝে ম্যাচের ২১তম মিনিটে বড় সুযোগ পায় ডর্টমুন্ড। রিয়ালের হাই ডিফেন্স লাইন চিরে আসা লং পাসটি নিয়ে এগিয়ে গিয়ে কোর্তায়াকে ফাঁকা পেয়ে যান করিম আদেয়েমি। তবে ভুল (বাঁয়ে) দিকে বল নিয়ে ঘুরে গেলে ততক্ষণে তাকে ব্লক করে দেন দানি কার্ভাহালরা।

এর দুই মিনিট পর আবার বড় সুযোগ আসে ডর্টমুন্ডের সামনে। তবে ভাগ্যের জোরে গোল খাওয়া থেকে বেঁচে যায় রিয়াল। বক্সের মধ্যে পাস ধরে গোলরক্ষককে পরাস্ত করে ডান পাশের বারের দিকে বল ঠেলে দেন নিকোলাস ফুলক্রুগ। তবে বারে লেগে তা আর ভেতরে ঢোকেনি।

এরপর আদেয়েমির আরও একটি আক্রমণ ঠেকিয়ে দেন কোর্তোয়া। আর কোনো বড় ঘটনা ছাড়াই বিরতিতে যায় দুই দল।

প্রথমার্ধে ডর্টমুন্ড গোলরক্ষক গ্রেগর কোবেল একপ্রকার বেকারই ছিলেন। রিয়ালের পক্ষ থেকে আসা দুয়েকটি আক্রমণ ডর্টমুন্ডের ইয়েলো ওয়াল ভেদ করতে ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় কোর্তোয়াকে।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই স্বরূপে ফেলে রিয়াল। ৪৯তম মিনিটে বক্সের বেশ বাইরে ফ্রি কিক পায় মাদ্রিদের দলটি। ডান পায়ের বাঁকানো শটে কাছের পোস্টের একেবারে উপরের কোণা দিয়ে বলটি জালে ঢুকিয়েই দিচ্ছিলেন ক্রুস, তবে অসাধারণ দক্ষতায় তা বাইরে বের করে দেন কোবেল। এরপর কর্নার থেকে আরও একটি দুর্দান্ত হেডার যায় কোবেলের কাছে, সেটিও ঠেকিয়ে দেন তিনি।

পাঁচ মিনিটের রিয়াল ঝড় সামলে ফের গুছিয়ে খেলতে শুরু করে ডর্টমুন্ড। তবে ৫৭তম মিনিটে আবারও গোলের সুযোগ তৈরি করে রিয়াল। অবশ্য ডানপাশে খুব বেশি স্পেস না পাওয়া ও দুই ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে সঠিক শটটি নিতে ব্যর্থ হন কারভাহাল।

এরপর বেশ কিছুক্ষণের জন্য ঝিমিয়ে যায় রিয়ালের খেলা। সুযোগও তৈরি করে ডর্টমুন্ড। তবে গেম ডেভেলপমেন্টের অভাবে গোল পাচ্ছিল না তারা।

৬২ মিনিটে কোর্তোয়ার ভুল পাসে বক্সের মধ্যেই বল পেয়ে যায় ডর্টমুন্ড। তবে এবারও সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার আক্ষেপে পুড়তে হয় কালোহলুদ সমর্থকদের। এর পরের মিনিটে কাউন্টারে এসে আদেয়েমির ক্রসে ক্ষিপ্র গতির হেডার দেন রিয়ারসন, কোর্তোয়ার মুষ্টিতে তা প্রতিহত হয়।

এর মধ্যে অবশ্য মাঝেমধ্যেই সুযোগ তৈরি করছিল রিয়ালের খেলোয়াড়রাও। তবে দলীয় পারফরম্যান্সের অভাবে ইয়েলো ওয়ালে সেগুলোর প্রত্যেকটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছিল।

৬৯তম মিনিটে গোল পেয়েই যাচ্ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। বাঁ দিকে থেকে বল নিয়ে উঠে এসে বক্সের বাইরে থেকে দূরের পোস্টে বাঁকানো ক্রস দেন রদ্রিগো, দৌড়ে গিয়ে বলে মাথা লাগাতে পারলেই গোল; তবে বেলিংহ্যামের নাগালের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায় বলটি।

আক্রমণে ধার না থাকলেও ম্যাচের ৭০ মিনিট পর্যন্ত খেলোয়াড় বদলির কথা ভাবেননি কার্লো আনচেলত্তি। তবে এ সময় আক্রমণভাগে আদেয়েমিকে উঠিয়ে মার্কো রয়েসকে নামান তেজরিক।

ম্যাচের ৭৩তম মিনিটে আসে রিয়ালের মাহেন্দ্রক্ষণ। কর্নার থেকে আসা ক্রস মুহূর্তে জালে জাড়িয়ে দলকে ১৫তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পথ দেখান দানিয়েল কারভাহাল। এর মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় গোলটি করেন তিনি। তাও আবার ফাইনালের ওপেনিং গোল।

ম্যাচের শেষ ১০ মিনিটে প্রবেশ করতেই মুহূর্মুহূ আক্রমণে ডর্টমুন্ডের রক্ষণ কাঁপিয়ে দেয় রিয়াল মাদ্রিদ। ৮০তম মিনিটে ক্রুসের আরও একটি অসাধারণ সেট পিস দারণ নৈপুণ্যে ঠেকিয়ে দেন কোবেল। এরপর কামাভিঙ্গার একটি শট পোস্টের উপর দিয়ে বের করে দিয়ে দলকে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখেন তিনি। কয়েক সেকেন্ড পর কর্নার থেকে আসা আরও একটি আক্রমণ কোবেলের গ্লাভসে বাধা পায়।

তবে ৮৩ মিনিটে জাল আর অক্ষত রাখতে পারেননি তিনি। প্রতিপক্ষের বক্সের সামনে ডর্টমুন্ড ডিফেন্ডার ইয়ান মাটসেনের ভুল পাস ধরে ফাঁকায় থাকা ভিনিকে ঠেলে দেন বেলিংহ্যাম, এমন উপহার পেয়ে একেবারেই ভুল করেননি ভিনিসিউস। চকিতে বলটি জালে জড়িয়ে দুই গোলে এগিয়ে গিয়ে শিরোপা জয় নিশ্চিত করে ফেলেন তিনি।

৮৭তম মিনিটে হঠাৎ এক গোল পরিশোধ করে দেন ফুলক্রুগ। তবে অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায় গোলটি। পরে ডর্টমুন্ডকে আর কোনো সুযোগই দেয়নি রিয়াল মাদ্রিদ। ফলে ১৫ বারের মতো ইউরোপ সেরার ট্রফিটি নিয়ে উল্লাসে মাতেন ক্রুসবেলিংহ্যামরা। আর ২০১২১৩ মৌসুমের পর ফাইনালে উঠে আরও একবার আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় ডর্টমুন্ডের।

এই জয়ে দারুণ সব কীর্তি গড়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ২০০৫০৬ মৌসুমে বার্সেলোনার পর প্রথম কোনো স্প্যানিশ দল হিসেবে টুর্নামেন্টে অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করল রিয়াল মাদ্রিদ। ইউরোপের ১১তম দল হিসেবে এই রেকর্ডের খাতায় নাম লেখালেন ডন কার্লোর শিষ্যরা।

এছাড়া ১৯৯২ সালে ‘চ্যাম্পিয়ন্স লিগ’ নামকরণের পর ছয়বার ফাইনালে উঠে একবারও না হারার রেকর্ডটি অব্যাহত রাখল রিয়াল।

এই জয়ে ইতোমধ্যে অবসরের ঘোষণা দেওয়া টনি ক্রুস পেলেন এক বিরল সম্মাননা। লা লিগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ের পর ব্যক্তিগত ষষ্ঠবারের মতো ইউরোপ সেরার ট্রফি জিতে ফুটবলকে বিদায় জানালেন তিনি।

এ মৌসুমের শুরুতে ডর্টমুন্ড ছেড়ে রিয়ালে এসে সাবেক ক্লাবকেই হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতলেন জুড বেলিংহ্যাম। এ জয়ে নিজ দেশের মাটিতে পরিবারস্বজনদের সামনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা উঁচিয়ে ধরার আনন্দে ভাসলেন তিনি।

এছাড়া, আসন্ন ব্যালন দ’র জয়ের দৌঁড়ে আরও একটু এগিয়ে গেলেন ভিনিসিউস জুনিয়র। টুর্নামেন্টে ৬ গোল করে সমন্বিতভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন তিনি। সর্বোচ্চ ৮ গোল করে চূড়ায় হ্যারি কেইন ও কিলিয়ান এমবাপ্পে। তবে ভিনির নামের পাশে রয়েছে ৫টি অ্যাসিস্টও, যা তাকে ব্যালন দ’র পাওয়ার প্রতিযোগিতায় এমবাপ্পের চেয়ে এগিয়ে রাখবে। এছাড়া শিরোপা নির্ধারণী ফাইনাল ম্যাচেও গোল পেয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতায় এখন ব্যালন দ’রের সবচেয়ে বড় দাবিদার ভিনিই।

আল/ দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More