কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বেঁধে দেয়া মুরগি ও ডিমের দামকে অবাস্তব আখ্যা দিয়ে দ্রুত তা পুনর্নিধারণের দাবি জানিয়েছেন খামারিরা। বেঁধে দেয়া দামের সঙ্গে উৎপাদন খরচের বাস্তব সম্মত মিল না থাকায় বাজারে নির্ধারিত মূল্যে পণ্য মিলছে না বলে জানিয়েছেন তারা। এভাবে চলতে থাকলে ব্রয়লার মুরগির খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন উৎপাদনকারীরা।
মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, সবজির মতো ২৯টি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। ১৫ মার্চ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ করিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ব্রয়লার মুরগি কেজিতে উৎপাদন খরচ ১৪৫ টাকা ৭৯ পয়সা। আর উৎপাদনকারী ১৫১ টাকা ৮১ পয়সায় বিক্রি করতে পারবে। অর্থাৎ উৎপাদক পর্যায়ে লাভ মাত্র ৪ শতাংশ। যদিও বিদ্যমান কৃষি বিপণন আইনের বিধান অনুযায়ী একজন উৎপাদক ৩০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করতে পারবে। বিজ্ঞপ্তিতে নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ৪ শতাংশের বেশি লাভ করতে পারবে না উৎপাদনকারী। আর ডিম প্রতি উৎপাদন খরচ ৮ টাকা ৮১ পয়সা, উৎপাদনকারী বিক্রি করতে পারবে ৯ টাকা ৫ পয়সায়। সরকারের এমন অবাস্তব দাম নির্ধারণে একরকম হতবাক খামারি ও উৎপাদনকারীরা।
খামারিরা জানান, সোনালি মুরগি উৎপাদন করতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই মাস। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী উৎপাদন খরচ আসে ২৪১ টাকা ৬২ পয়সা। সেখানে সরকার উৎপাদক পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করেছে ২৪৪ টাকা ২৯ পয়সা। অর্থাৎ খামারি অথবা উৎপাদনকারী লাভ করতে পারবে মাত্র ১ শতাংশ। ব্রয়লার মুরগিতে ৪ শতাংশ আর ডিমে মাত্র ৩ শতাংশ। তিন মাস ধরে মুরগি পালনের পর মাত্র এক থেকে চার শতাংশ পর্যন্ত লাভ থাকবে খামারিদের। পশুপালন অধিদপ্তরের গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুযায়ী একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা পঞ্চাশ পয়সা। অর্থাৎ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ঘোষণা অনুযায়ী গেলো ছয় মাসে ডিম উৎপাদনের খরচ কমেছে এক টাকা ৬৯ পয়সা। যা অযৌক্তিক বলছেন খামারিরা।
সরকারের দাম নির্ধারণকে অবাস্তব আখ্যা দিয়ে খামারিরা জানান, বিক্রির সময় মুরগি অসুস্থ হয়ে যায়; তখন ওই ব্যাচ থেকে কাঙ্খিত মাংস না পাওয়ায় লাভ তো দূরের কথা, পুঁজিও হারিয়ে যায়। বর্তমানে শ্রমিকের দৈনিক দিন মজুরি শ্রম ৭০০–৮০০ টাকা হওয়ায় খামার করার চেয়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ করা লাভজনক। এভাবে চলতে থাকলে ব্রয়লার মুরগির খামারগুলি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে তারা।
পোল্ট্রি খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শুধু মূল্য নিয়ন্ত্রণ, উৎপাদকদের হয়রানি না করে, সরবরাহ বৃদ্ধি করলে পণ্যের দাম স্বাভাবিকভাবেই কমে আসবে। তাই দাম নির্ধারণের সঙ্গে সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নয়ন, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ এবং মানুষের আয় বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে সরকারের।
এজে/দীপ্ত সংবাদ