সারা বিশ্বে সময়ের আগে জন্মানো শিশুর হার বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে একশো এর মধ্যে ১৬টি শিশুর জন্ম হচ্ছে মায়ের গর্ভে পূর্ণ ৩৭ সপ্তাহ থাকার আগেই।
২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তথ্য বিশ্লেষণ করে বলছে, বাংলাদেশে সময়ের আগে জন্মানো শিশুর হার কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো উন্নতি এখনো হয়নি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান বা প্রতিবেশী কোনো দেশে এই হারে অকালিক শিশু জন্ম নিচ্ছে না। এমনকি দরিদ্র দেশগুলোতে যেখানে স্বাস্থ্যসেবা দুর্বল, সেসব দেশেও অকালিক শিশু জন্মের হার বাংলাদেশের চেয়ে কম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান কার্যালয় থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বে ১০টির মধ্যে ১টি শিশু জন্ম নিচ্ছে সময়ের আগে। সময়ের আগে বা অকালিক অর্থ এসব শিশু মায়ের গর্ভে পূর্ণ ৩৭ সপ্তাহ থাকার আগেই জন্ম নিচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেট-এর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটেও এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
ল্যানসেট-এ উল্লেখ করা ২০১০ ও ২০২০ সালের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অকালিক শিশু জন্ম কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিস্থিতির বিশেষ কোনো অগ্রগতি হয়নি। ২০১০ সালে অকালিক শিশুর অনুমিত সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ২০ হাজার ২০০। এই সংখ্যা ছিল জন্ম নেওয়া মোট শিশুর ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
প্রবন্ধের শুরুতে বলা হয়েছে, নবজাতক মৃত্যুর প্রধান কারণ সময়ের আগে জন্মানো। সময়ের আগে জন্ম হলে দীর্ঘ মেয়াদে এর ক্ষতিকর প্রভাব বয়ে বেড়াতে হয়। এসব শিশুর বিকাশ কম হয়। এবং এর একটি বৈরী আর্থসামাজিক ফলাফলও আছে।
বাংলাদেশে এই ধরনের শিশু জন্মের হার বৈশ্বিক গড় হারের চেয়ে বেশি। বৈশ্বিক গড় হার ১০ শতাংশ। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ১৩ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ, নেপালে ১১ দশমিক ২ শতাংশ, মালদ্বীপে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ শিশু সময়ের আগে জন্মায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে সারা বিশ্বে ১ কোটি ৩৪ লাখ শিশুর জন্ম হয়েছিল সময়ের আগে। ২০১০ ও ২০২০ সালের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ সময়ে এই ধরনের শিশু জন্মের হার কমেছে বছরে দশমিক ১৪ শতাংশ হারে। কয়েকটি উচ্চ আয়ের দেশেও সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুর হার বেশ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ১০ শতাংশ।
পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাতৃ, নবজাতক, শিশু, কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্য ও প্রবীণ জনগোষ্ঠী বিভাগের পরিচালক অংশু ব্যানার্জী বলেছেন, এই সংখ্যাগুলো এটাই বলছে যে এই ধরনের শিশু ও তাদের পরিবারের জন্য সেবা নিশ্চিত করতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, প্রতিরোধের বিষয়ে জোর দিতে হবে এবং গর্ভধারণের আগে ও গর্ভধারণকালে মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করতে হবে।