জাদুঘর একটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক এবং এটা সভ্যতা, ইতিহাস বহন করে। বেইজিংয়ে রয়েছে নানা ধরনের জাদুঘর এবং প্রতিটি জাদুঘরের রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। এখানে রয়েছে চীনের বৃহত্তম ও সবচেয়ে সমৃদ্ধ বেশকয়েকটি জাদুঘর। তার মধ্যে অন্যতম ক্যাপিটাল মিউজিয়াম। বেইজিংয়ের ৫ লাখ বছরের মানব বসতির ইতিহাস, ৩ হাজার বছরের শহুরে ইতিহাস এবং ৮শ বছরের রাজধানী হিসাবে বেইজিংয়ের ইতিহাস সম্পর্কে জানার অন্যতম উৎস এই জাদুঘর।
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের ফু চিং মেন অ্যাভিনিউতে অবস্থিত এই ক্যাপিটাল মিউজিয়াম। শি চ্যাং আন চি এভিনিউর ধারাবাহিকতা হিসাবে পূর্ব-পশ্চিমে রয়েছে প্রধান রাস্তা, যা ফরবিডেন সিটি এবং থিয়েন আন মেন স্কোয়ার বরাবর চলে গেছে। এই জাদুঘরটি শহরের ফ্ল্যাগশিপ পাবলিক বিল্ডিংগুলির মধ্যে একটি।
৬০ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে এ জাদুঘর। এ জাদুঘরে রয়েছে এগারোটি মূল প্রদর্শনী কক্ষ, যা ১ মিলিয়নেরও বেশি বাস্তব এবং প্রামাণ্য নিদর্শন সমন্বিত সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষের সংগ্রহশালা হিসেবে খ্যাত। এ জাদুঘরে রয়েছে অসংখ্য চমৎকার শিল্পকর্ম এবং মূল্যবান ঐতিহাসিক বস্তু।
এছাড়া ক্যাপিটাল মিউজিয়ামে রয়েছে তিনটি অস্থায়ী প্রদর্শনী কক্ষ, যা প্রায়শই চীন এবং সারা বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর প্রদর্শনী রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। ১৯৮১ সালে প্রায় ৮৩ হাজার বস্তুর সংগ্রহ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ক্যাপিটাল মিউজিয়াম। দিন যত অতিবাহিত হয়েছে বেইজিংয়ের অন্যান্য প্রধান শিল্প জাদুঘর, যেমন ফরবিডেন সিটি জাদুঘর, চীনের জাতীয় জাদুঘর এবং চীনের জাতীয় শিল্প জাদুঘরগুলোর মতই নেতৃস্থানীয় সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে এই জাদুঘর।
ক্যাপিটাল মিউজিয়ামের রয়েছে বিশাল ছাদ এবং এর প্রবেশদ্বার স্কোয়ারের গ্রেডিয়েন্ট হল স্থপতি চিন-মেরি দুথিলিউল এবং কুই কাইয়ের কাজ। এটি তৈরি করা হয়েছে প্রাচীন চীনা স্থাপত্যশৈলীতে।
পাথরের তৈরি বাহ্যিক প্রাচীরটি প্রাচীন চীনের শহরের দেয়াল এবং টাওয়ারের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। জাদুঘরের উত্তর গেটের সামনে গেলে চোখে পড়বে মাটিতে ড্রাগন, ফিনিক্স এবং ইম্পেরিয়াল আর্টিফ্যাক্টের ছবি দিয়ে খোদাই করা একটি বিশাল পাথর।
মিউজিয়ামের ভিতরের প্রদর্শনী হলে গিয়ে বেইজিংয়ের ম্যাপ দেখে এক নজরে বেইজিং সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পাশাপাশি এখানে বিভিন্ন রাজবংশের সময়কার সম্রাটদের ছবি ও ব্যবহৃত নানা জিনিসও মুগ্ধ করে পর্যটকদের। এছাড়া রয়েছে প্রাচীন চীনামাটির বাসন, ব্রোঞ্জ, ক্যালিগ্রাফি, পেইন্টিং, ভাস্কর্য। পাশাপাশি অন্যান্য এশিয়ান সংস্কৃতির বৌদ্ধ মূর্তির বিশাল সংগ্রহও রয়েছে এখানে।
চীনের ইতিহাস ,ঐতিহ্য নিয়ে জানতে এই মিউজিয়াম দেখতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে ঘুরতে আসেন হাজারো পর্যটক। আর এসব পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ইতিহাস সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিতে এই মিউজিয়ামের দেখভালের দায়িত্বে শতাধিক কর্মচারী। আর ক্যাপিটাল মিউজিয়ামের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে হান চানমিং।
রাজধানী বেইজিংয়ের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংগ্রহ, সংযোজন, পুনরুদ্ধার, গবেষণা এবং সংরক্ষণের জন্য বিশ্বজুড়েই খ্যাত এই ক্যাপিটাল মিউজিয়াম। পাশাপাশি বিশ্বের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসাবে অবদান রাখছে এই জাদুঘর।
আফরিন মিম চীন ভ্রমণ পর্ব-২