কারো কাছে বিদ্রোহী, কারো কাছে ফুটবলের ঈশ্বর হিসেবে পরিচিত। তাকে যেভাবে ডাকা হোক না কেন, তিনি দিয়াগো ম্যারাডোনা।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) আর্জেন্টিনার এই কিংবদন্তি ফুটবলারের ৬৩তম জন্মদিন।
ফুটবলপ্রেমী ও আর্জেন্টিনা সমর্থক, কিন্তু ম্যারাডোনা তার নয়নের মণি নন। সেটা যেন হতেই পারে না। হাসি–আনন্দে ব্যস্ত থাকা এই কিংবদন্তি এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন তিন বছর হলো। ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস প্রদেশের লানুস শহরে জন্মগ্রহণ করেন আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর ডিয়েগো ম্যারাডোনা।
সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম তিনি। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী তারকা। অনেকের কাছে তিনি আবার ফুটবল ঈশ্বর, সেরাদের সেরা। যত নামেই ডাকা হোক না কেন, তিনি আর্জেন্টাইন ফুটবলার ম্যারাডোনা। বল পায়ে দক্ষ নিয়ন্ত্রণ, চিতার বেগে ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়াসহ আরো অনেক ঐতিহাসিক মুহূর্ত আর গোল, বিশ্বসেরা ফুটবলারের বিতর্কে তাকে রেখেছে বেশ উঁচু স্থানে।
কারো মতে, শ্রেষ্ঠত্বের চূড়ায় জ্বলজ্বলে তারাটি একমাত্র ম্যারাডোনাই। আবার কেউ কেউ পেলে, লিওনেল মেসি কিংবা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে সে জায়গার যোগ্য দাবিদার মনে করেন। তবে ভালোমন্দ যেভাবেই হোক, ফুটবল বিশ্বকে সবসময় বিমোহিত করেছেন একসময়ের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এই তারকা।
মাত্র দুই দশকের পেশাদার ক্যারিয়ারে ম্যারাডোনা খেলেছেন ছয়টি ক্লাবে। ষোল বছর বয়সে পা দেয়ার ঠিক দশদিন আগে নিজ শহরের ক্লাব আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের হয়ে অভিষেক ঘটে তার, বর্তমানে হোম গ্রাউন্ডের নামকরণ হয়েছে ম্যারাডোনারই নামে।
তরুণ বয়সের কারণে ১৯৭৮ বিশ্বকাপ খেলতে না পারলেও ১৯৮২ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে চাপান তিনি। ব্রাজিলের বিপক্ষে লাল কার্ড পেয়ে শেষ হয় তার আসর। পরের বিশ্বকাপে মেক্সিকোতে বিশ্বকে দেখান তার সামর্থ্য। তার নৈপুণ্য ও নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারের মতো আর্জেন্টিনা জিতে নেয় বিশ্বকাপ। তত দিনে বিশ্ব ফুটবলে সবার ওপরে একটিই নাম ডিয়েগো ম্যারাডোনা।
এরপর ১৯৯০ বিশ্বকাপেও দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। এই আসরে ডোপ টেস্টে পজিটিভ হন এই ফুটবল কিংবদন্তি। ফলে ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরলেও স্বাভাবিক ছন্দে দেখা যায়নি তাকে। ২০ বছরের আন্তর্জাতিক ও ক্লাব ক্যারিয়ারে আর্জেন্টাইন এই মহাতারকা গোল করেছেন ৩৪৬টি।
ক্যারিয়ারে কোচিংও করিয়েছেন। ২০০৮ সালে ছিলেন মেসিদের কোচ। সেবার নানা চড়াই–উতরাই পেরিয়ে আলবিসেলেস্তারা নিশ্চিত করে ২০১০ বিশ্বকাপের টিকিট। কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে চার গোল হজম করে বিদায় নেয়, সেবার বিদায় নেয় বিশ্বকাপ থেকে।
২০২০ সালে বুয়েনোস আইরেসের হাসপাতালের আইসোলেশনে থেকে ৬০তম জন্মদিন পালন করেন এল দিয়াগো। তবে কে জানতো, তার এক মাসের মধ্যেই না–ফেরার দেশে পাড়ি জমাবেন বিশ্বকাপজয়ী এ কিংবদন্তি।
হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে ৬০ বছর বয়সে, ফুটবল বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ এই কিংবদন্তির জীবন থামে ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর।
হাসিব/মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ