ফেনীতে গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ শতাধিক হতাহত হয়েছে। আর আহত হয়ে অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এদের মধ্যে মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীর সংখ্যা বেশী।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ফেনী–সোনাগাজী সড়কে কলঘর নামক স্থানে শনিবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে দিকে সিএনজি অটোরিক্সায় দুর্ঘটনায় মতিগঞ্জ ইউনিয়নের দারোগার হাট আল জামেয়াতুদ দ্বীনিয়া মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাস্টার আবুল বাশার নিহত হন। ফেনী সদর ও দাগনভূঞায় মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে দুই শিশু। নিহতরা হলো উম্মে আয়মান বৈশাখী (১৩) ও মোসাম্মৎ নিহা (১২) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফেনী সদরের পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের এলাহিগঞ্জ বাজারে কাভার্ডভ্যানের চাপা উম্মে আয়মান বৈশাখী নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উম্মে আয়মান এলাহীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। একইদিন সকালের দিকে ফেনী–নোয়াখালী আঞ্চলিক সড়কের দাগনভূঞায় চৌমুহনী রোডের ইব্রাহীম ফিলিং স্টেশনের সামনে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মৃত্যুবরণ করে নিহা নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহা দাগনভূঞা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। ফেনী শহরে রামপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি। সৈয়দবাড়ির রাস্তার মাথায় কাভার্ডভ্যান চাপায় শরিফুল হাওলাদার (৪৫) নামে এক রিক্সা চালকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
গত সোমবার (১৬ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘাতক কাভার্ডভ্যানটি পুলিশ জব্দ করলেও চালক সাদ্দাম পালিয়ে যায়। নিহত শরিফুল হাওলাদার লক্ষ্মীপুর জেলা সদরের উত্তর চর রমণী গ্রামের সেরাজুল হাওলাদারের ছেলে। সে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ফেনী শহরে বসবাস করে আসছে। বর্তমানে ফেনী রামপুর শাহীন একাডেমি রোডের ইমরানের কলোনিতে বসবাস করে আসছে। সে তিন সন্তানের জনক।
১২ অক্টোবর লালপোলে সড়ক দুর্ঘটনায় সিএনজি চালক বাবুল নিহত হয়। ৭ অক্টোবর সোনাগাজীর ডাকবাংলায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সড়ক দুর্ঘটনায় আবদুল কাইয়ুম (২৭) নামে এক মাদরাসা শিক্ষক নিহত হয়েছেন। সে চরদরবেশ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরসাহাভিকারী গ্রামের হোসাইন আহমদের ছেলে। তিনি ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদের গেইটের সামনে নূরুল উলুম হাফেজিয়া মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আবদুল কাইয়ুম মোটরসাইকেল যোগে কর্মস্থল ছাগলনাইয়ায় যাচ্ছিলেন। ডাকবাংলা বাজারের দক্ষিণ পাশে পৌছলে ফেনী থেকে সোনাগাজীগামী একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে সে ঘটনাস্থলে মারা যান।
২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের ছাগলনাইয়ার নিজকুঞ্জরা এলাকায় সন্ধ্যা ৭টায় শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় সিএনজি অটোরিক্সা আরোহী সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন– উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের লাঙ্গলমোড়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের পুত্র সেনাবাহিনীর সাবেক সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার ও সেনা কল্যাণের চট্টগ্রাম শাখার কর্মকর্তা আবু তাহের (৫৯) ও তার স্ত্রী সালমা আক্তার (৪৮) এবং একই গ্রামের আবদুল কাদেরের পুত্র সিএনজি অটোরিক্সা চালক মনা মিয়া (৩০)।
সিএনজি অটোরিকশা দুর্ঘটনায় আহত মো. শাহজালাল জানান, ফেনীর বেশিরভাগ অটোরিকশা চালকেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, অদক্ষ এসব চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে।
কবি ও প্রাবন্ধিক জাহাঙ্গীর আলম জানান, দুর্ঘটনা কখনোই কাম্য নয়। এজন্য চালক, যাত্রী, পথচারী সবাইকে সচেতন হতে হবে। এতে সড়ক নিরাপদ হবে।
ফেনীর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আনোয়ারুল আজিম জানান, চালকেরা অনেক সময় গাড়ী না চালিয়ে হেলপারকে দেয়, এতে দুর্ঘটনা ঘটে। আবার চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ী চালানোর কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে।
ফেনী জজ কোর্টের পিপি হাফেজ আহাম্মদ জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় মামলার ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে সবাত্মক সহযোগিতা করা হয় এবং আসামীদের জামিনের বিরোধীতা করা হয়।
মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ