রাজনীতির জালে বন্দি দেশের সাধারণ মানুষ যেন এক কঠিন সময় পার করছে। ক্ষমতা দখলের দ্বন্দ্বে প্রতিবার জাতীয় নির্বাচনের আগে তৈরি হয় এক অনিশ্চয়তার পরিবেশ। যা থেকে মুক্তি পেতে চান সাধারণ শ্রমজীবীরা। তাদের একটাই চাওয়া, হরতাল কিংবা অগ্নি সংযোগ নয়, জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে ভালোভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা।
বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির এই ঢাকায় যেমন বাস কোটি মানুষের। তেমনি জীবন যুদ্ধে রয়েছে নানা পেশার মানুষ। তেমনি একজন কুদ্দুস। চা বিক্রিই তার অন্যতম পেশা। তার মতে, যে সরকারই আসুক,আমরা সাধারণ মানুষ যেনো দুমড়ো খাবার খেতে পারি। হাতের নাগালে যেন জানিসপত্র থাকে।
রাজধানীর মতিঝিলের এজিবি কলোনী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চা বিক্রি করছেন তিনি। তার চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে অনেকেই আলাপের ঝড় তোলেন, বেশীরভাগ সময় যেখানে প্রসঙ্গ থাকে রাজনীতি। আরও স্পষ্ট করে বললে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি। কিন্তু এ নিয়ে কোন মাথাব্যাথা নেই কুদ্দুসের।
তিনি বলেন, যে সরকারই আসে আমরা কোনো উন্নতি পাচ্ছি না। গত ৬মাস ধরে কখনো মাংসই খেতেই পারিনি, ৮৫০ টাকা মাংস। আর এক কেজি আলু ৫০টাকা কিনে নিলে ২বেলা খেলেই শেষ হয়ে যায়। আমরা সবসময় এমন পরিস্থিতিতেই থাকতে হচ্ছে। আমরা ভালোভাবে বাঁচতে চাই। বাজার পরিস্থিতি ভালো হোক৷ চারটা ডালভাত যেন ভালোভাবে খেতে পারি।
এই চায়ের দোকানেই দেখা মিলল এই রিক্সাচালকের। ৩ সন্তান সহ পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন। কথা প্রসঙ্গে জানালেন, ৮ মাস আগে গরুর মাংস খেয়েছেন। অভাবের সংসারে সামনের মাস থেকে হয়ত সন্তানকেও আর স্কুলে পাঠানো হবে না। রাজনীতি নিয়ে ভাবার সময় কোথায়!
এবার একটু ঢু মারা যাক অন্দরমহলে। স্বামী ও ২ সন্তান নিয়ে এই গৃহিনীর বসবাস ইস্কাটন এলাকার দিলু রোডে। দ্রব্যমূল্যের কারণে চিড়েচ্যাপ্টা জীবনে তারও দুশ্চিন্তা আগামীর দিনগুলো নিয়ে। রাজনীতির ক্ষমতার দ্বন্দ্ব তার কাছেও উপেক্ষিত।
গৃহিনী প্রতিবেদককে জানান, সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার চাওয়া সরকার যেই আসুক আমরা চাই ভালোভাবে বাঁচতে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসুক, আমাদের নাগালের মধ্যে থাকুক, আর আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে থাকুক।
রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের মতে মানব প্রকৃতির মূলনীতিই হচ্ছে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা। এটা অস্বাভাবিক বিষয় নয়। আর মানুষ তখনই এ ধরণের হতাশার মধ্যে পড়ে যখন রাজনীতি তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন,যদি হরতাল অবরোধ হয় তখন মানুষের আয় রোজগারের ওপর সরাসরি এফেক্ট পড়ে। এমনিতে মূল্যস্ফীতির কারনে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। এর সাথে যদি আন্দোলন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয় তাহলে তাদের জীবন হুমকির মুখে পড়বে৷
এ বিশেষজ্ঞের মতে নির্বাচনকে ঘিরে দেশ যদি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে তখন মানুষের নাভিশ্বাস উঠবে। তাই সকল সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমেই হওয়া উচিৎ।
সানজিদা প্লাবনী/মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ