ঢাকার আশুলিয়ায় একই পরিবারের ৩ জনকে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যাকাণ্ডের হোতা সাগর আলী ও তার স্ত্রী ইশিতা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান খান।
এর আগে, সোমবার (২ অক্টোবর) গাজীপুরের শফিপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান খান গণমাধ্যমকে জানান, গত শনিবার রাতে সাভারের আশুলিয়ায় ইউনিক ফকিরবাড়ির মেহেদী হাসানের বাড়ি থেকে একই পরিবারের মোক্তার হোসেন ও তার স্ত্রী শাহিদা বেগম এবং তাদের শিশু ছেলে মেহেদী হাসানের লাশ উদ্ধার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। নিহত স্বামী–স্ত্রী একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। ১২ বছর বয়সী ছেলে মেহেদী হাসান একটি স্কুলে পড়তো। দুদিন ধরে তাদের ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ওই বাড়ির অন্য ভাড়াটিয়ারা পুলিশে খবর দেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব–০৪ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুরের শফিপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের মূল হোতা মোঃ সাগর আলী (৩১) পিতাঃ মোবারক, তার অন্যতম সহযোগী (স্ত্রী) ঈশিতা বেগম (২৫) স্বামীঃ মোঃ সাগর আলী, দেওয়ানগঞ্জ, জামালপুরদের’কে গ্রেফতার করে র্যাব। উদ্ধার করা হয় হত্যাাকান্ডের সময় ভিকটিম মোক্তার হতে লুটকৃত আংটি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে গ্রেফতারকৃতরা এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা প্রথমে অর্থের লোভে ও পরবর্তীতে কাক্সিক্ষত অর্থ না পেয়ে ক্ষোভ থেকে উক্ত হত্যাকান্ডটি সংঘটিত করে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ গ্রেফতারকৃত সাগর সাভার বারইপাড়া এলাকার একটা চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় ভিকটিম মোক্তারকে পাশ্ববর্তী একটি কবিরাজি ও ভেষজ ঔষধের দোকানে তার শারীরিক সমস্যার বিষয়ে চিকিৎসা নিয়ে কথা বলতে দেখে। গ্রেফতারকৃত সাগর জানতে পারে ভিকটিম মোক্তার ঐ দোকানে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসা বাবদ ১৫–২০ হাজার টাকা খরচ করেও কোন ফলাফল পায়নি। গ্রেফতারকৃত সাগর কৌশলে ভিকটিম মোক্তারকে ডেকে নিয়ে আসে এবং ভিকটিমের সাথে কথাবার্তায় জানতে পারে যে, ভিকটিম মোক্তারের ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার প্রতি আগ্রহ ও আস্থা রয়েছে। ভিকটিম মোক্তার তার ও তার পরিবারের বেশ কিছু শারীরিক সমস্যার কথাও গ্রেফতারকৃত সাগরকে জানায়।
সাগর জানায়, তার স্ত্রী একজন ভালো কবিরাজ এবং সে তার সমস্যার সমাধান করে দিবে বলে মিথ্যা আশ্বাস প্রদান করে। কথাবার্তার এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত সাগর উক্ত চিকিৎসার জন্য ভিকটিম মোক্তারের সাথে ৯০০০০/- (নব্বই হাজার) টাকার চুক্তি করে। গ্রেফতারকৃত সাগর ও তার স্ত্রী ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ সকালে ঔষধসহ তার বাসায় গিয়ে চিকিৎসা করবে বলে জানায়। সাগরের সাথে যোগাযোগের জন্য ভিকটিম মোক্তার মোবাইল নাম্বার চাইলে গ্রেফতারকৃত সাগর তার আত্নীয়ের মোবাইল নাম্বার প্রদান করে। পরবর্তীতে সাগর বাসায় গিয়ে তার স্ত্রীকে উক্ত বিষয়ে জানায় এবং তার স্ত্রী নগদ বিপুল অংকের টাকার কথা শুনে রাজি হয়। তারা পরিকল্পনা করে ভুক্তভোগী মোক্তারের বাসায় গিয়ে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার কথা বলে তার পরিবারের সবাইকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে তাদের অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করবে। উক্ত পরিকল্পনা মোতাবেক গ্রেফতারকৃত সাগর গাজীপুরের মৌচাক এলাকার একটি ফার্মেসি থেকে ১ বক্স (৫০টি) ঘুমের ঔষধ ক্রয় করে।
পরবর্তীতে ভিকটিম মোক্তার, তার স্ত্রী ও তার ছেলে ঘুমের ঔষধের প্রভাবে ঘুমিয়ে পড়লে গ্রেফতারকৃত সাগর ও তার স্ত্রী মিলে প্রথমে মোক্তারের কক্ষে গিয়ে মোক্তারের হাত ও পা বাধে, মোক্তারের স্ত্রীর হাত–পা বাধে। তারা ভিকটিম মোক্তারের মানিব্যাগ, তার স্ত্রীর পার্স ও বাসার অন্যান্য স্থানে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রীর জন্য তল্লাশি করে মাত্র ৫০০০ টাকা পায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা বটি দিয়ে প্রথমে ভিকটিম মোক্তারের গলায় উপর্যপুরি কোপ দিয়ে হত্যা করে। পরবর্তীতে অন্য কক্ষে গিয়ে গ্রেফতারকৃতরা ভিকটিমের ছেলে ও স্ত্রীকে একই বটি দিয়ে পর্যায়ক্রমে কুপিয়ে হত্যা করে। তাদের সকলের মৃত্যু নিশ্চিত করে ভিকটিম মোক্তারের হাতে থাকা আংটিটি নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা উভয়ে ভিন্নপথে রিকশাযোগে গাজীপুরের মৌচাকে তার শ্বশুরবাড়ি (ভাড়া বাসায়) আসে এবং সেখানেই অবস্থান করতে থাকে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ