সম্প্রতি ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসে দুই শিক্ষার্থীকে রাতভর আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় দোষী ছাত্রলীগ নেতাদের বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। নির্যাতিত দুজন শিক্ষার্থী সাংবাদিক এবং ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির সদস্য
২ অক্টোবর (সোমবার) সকালে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে এই কর্মসূচি পালন করে তারা।
এই কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় দোষিদের ছাত্রত্ব বাতিলসহ ৬ দফা দাবি আদায়ে ক্যাম্পাস প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টা সময়ও বেধে দিয়ে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবাদী এই অবস্থান কর্মসূচিতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আবু নাঈম নোমান নামের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের একজন শিক্ষার্থী। তিনি তিনি গণমাধ্যমকে জানান, দুই শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাদের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিলেও গত ৬ দিনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ক্যাম্পাস প্রশাসন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচী পালন করছে।
লিখিত বক্তব্যে নোমান বলেন, ঢাকা কলেজে সাংবাদিক শিক্ষার্থীকে গেস্টরুমে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়মিত র্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছে সাধারণ ছাত্ররা। বিশেষ করে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ায় বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। এই ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসে ওঠার সাহস করে না। যারা ওঠে তারাও নেতা নামীয় কিছু বড় ভাইয়ের দ্বারা দিনের পর দিন নির্যাতিত হয়ে আসছে। কিন্তু ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেনা। আজ ৬দিন পার হতে চলছে। কিন্তু এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ক্যাম্পাস প্রশাসন। আমাদের প্রশ্ন তাদের হাত পা কোথায় বাঁধা, তারা এখন পর্যন্ত কেন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি?
ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আবু নাঈম নোমান বলেন, যাদের দুজনকে নির্যাতন করা হয়েছে তারা দুজনই সাংবাদিক এবং ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির সদস্য। স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যায় যেই ক্যাম্পাসে সাংবাদিকরাই নিরাপদ নয়, যেখানে রাতভর একজন মানুষকে রুমে আটকে নির্যাতন করার পরও প্রশাসন জানে না, কোনো ব্যবস্থা নেয় না। সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কতটুকু নিরাপদে পড়ালেখা করতে পারে এবং কতটুকু নিরাপদে থাকে?
এ সময় তিনি বলেন, এই প্রতিবাদী কর্মসূচিতে অংশ নিতে বন্ধের দিনেও বহু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে এসেছে। কিন্তু সিনিয়র নেতারা শো–ডাউন করে হুমকি দিচ্ছে, তাই সবাই দাঁড়ানোর সাহস করেনি। তবে একজন হলেও আমি প্রতিবাদ চালিয়ে যাবো। আমাদের এই প্রতিবাদ কোনো দল বা নেতারা বিরুদ্ধে নয়। আমরা প্রতিবাদ করছি গুটি কয়েক সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে।
এ সময় তিনি ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করতে ৬ দফা দাবি তুলে ধরে বলেন, দাবি আদায় না হলে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে কলেজের শিক্ষার্থীরা লাগাতার আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে। তাদের দাবিগুলো হলো–
১। ক্যাম্পাসে সকল শিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
২। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফরহাদ ছাত্রাবাসে ২ শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় দোষীদের সবার ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে।
৩। ছাত্রদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ শহীদ ফরহাদ হলের হল সুপারকে প্রত্যাহার করতে হবে।
৪। মেধা ও প্রয়োজনীয়তার বিবেচনায় প্রথম বর্ষ থেকে ছাত্রাবাসে বৈধ সিট নিশ্চিত করা।
৫। গেস্টরুম বা গণরুম কালচার নিষিদ্ধ করতে হবে। এবং
৬। অছাত্রদের হল থেকে বের করে ছাত্রদের সুযোগ দিতে হবে।
উল্লেখ্য, ছাত্রলীগের কর্মী সমাবেশের প্রস্তুতি নিতে গত বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা কলেজের শহিদ মো. ফরহাদ ছাত্রাবাসে গেস্টরুম আহ্বান করে সেই হলের ছাত্রলীগ নেতারা। এ সময় সেখানে আসতে দেরি করায় ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও কলেজের ইংরেজি বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফয়সাল আহমেদকে মারধর করে ছাত্রলীগ নেতারা। নির্যাতনের শিকার ফয়সাল আহমেদ ডেইলি বাংলাদেশ পত্রিকার ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি ও ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির সদস্য।
ফয়সালকে মারধরের ঘটনায় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে সংবাদ প্রচার করায় একই ছাত্রবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক ও বাংলা ট্রিবিউনের কলেজ প্রতিনিধি ওবায়দুর সাঈদকে আটক করে বৃহস্পতিবার রাতভর নির্যাতন করা হয়। দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টা আটকে রাখার পর শুক্রবার দুপুরে ওবায়দুরকে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে হস্তান্তর করে ছাত্রলীগ নেতারা। পরে অধ্যক্ষ তার ভাইকে ডেকে ওবায়দুরকে নিয়ে যেতে বলেন। এ ঘটনায় গণমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার মুখে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী রাউফুর রহমান ওরফে সোহেল, এ বি এম আলামিন, সজিব আহসান, আবরার হোসাইন ওরফে সাগর, সৈয়দ আব্দুল্লাহ শুভ ও ফাহমিদ হাসান ওরফে পলাশকে সংগঠন থেকে বহিস্কারের করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ